নাহিদের পদত্যাগ, যা বললেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
Published: 25th, February 2025 GMT
নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক পদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন নাহিদ ইসলাম। এই ‘নতুন পথচলায়’ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন। তবে তিনি বলেছেন, নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করলেও অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ থাকবে না।
আজ মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে নাছির উদ্দীন এ কথা বলেন। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গতকাল সোমবার চীন সফরে গেছেন নাছির। সেখান থেকেই ফেসবুকে এ পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে পদত্যাগ করে নতুন দলের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। নতুন পথচলায় তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করি, তাঁর নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক দল গঠিত হবে, তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপসহীন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর অটল থাকবে। নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা যাতে ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক চেতনা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতা এবং গোপন তৎপরতার রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে।’
ফেসবুকে নাছির উদ্দীন লেখেন, ‘নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে পদত্যাগ করার পরেই দলের দায়িত্ব নেওয়ার ঘটনায় এটা সুস্পষ্ট যে দল গঠনের জন্য বিগত দিনগুলোতে যে প্রক্রিয়া চলেছে, নাহিদ ইসলাম সরকারে থেকেও সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দল গঠনপ্রক্রিয়ার কিছু না জেনেই হঠাৎ করে দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন, এমন যুক্তি অবিশ্বাস্য।’
নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করলেও অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ থাকবে না—দাবি করে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরও লেখেন, ‘আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম ডিফ্যাক্টো (কার্যত) নতুন দলের নেতা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তাঁরা নতুন দলের হয়েই করবেন। বাস্তবতা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। জনগণের চোখে ধুলা দেওয়া অসম্ভব। সরকারকে নিরপেক্ষ করতে হলে সব শিক্ষার্থী-প্রতিনিধিকে সরকার থেকে পদত্যাগ করতে হবে, সরকারের সঙ্গে বিশেষ সখ্য পরিহার করতে হবে।’
পদত্যাগ করলেন নাহিদ ইসলামনাহিদ ইসলাম যা লিখলেন তাঁর পদত্যাগপত্রেপরবর্তী তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে যাঁকে নিয়ে আলোচনা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ছ ত রদল র র জন ত ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২৩৮ বছরে কী পেল আর কী পেল না ময়মনসিংহ জেলা
‘হাওর জঙ্গল মইষের শিং—এই তিনে ময়মনসিং’ প্রবাদ-প্রবচনে এভাবেই পরিচয় করানো হতো ময়মনসিংহ জেলাকে। ১৭৮৭ সালের ১ মে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন এই জেলা ২৩৮ বছর পূর্ণ করল আজ বৃহস্পতিবার। দীর্ঘ আন্দোলন–সংগ্রামের পর ২০১৫ সালে চারটি জেলা নিয়ে বিভাগ এবং ২০১৮ সালে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি করপোরেশন পেয়েছে ময়মনসিংহ। তবে অপ্রাপ্তিও কম নয়।
ময়মনসিংহ জেলায় ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি করপোরেশন আছে। জেলাটি ১৩টি উপজেলা, ১৪টি থানা, ১০টি পৌরসভা, ১৪৭টি ইউনিয়ন, ২১০১টি মৌজা, ২৭০৯টি গ্রাম ও ১১টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৫৯ লাখ।
সরকারিভাবে ময়মনসিংহ জেলাকে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে ‘শিল্প-সংস্কৃতির’ নগরী হিসেবে। কিন্তু শিল্প-সংস্কৃতির এ শহরকে এখন আলাদাভাবে চেনার কোনো উপায় নেই। সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রগুলো দিন দিন সংকুচিত হয়েছে। সংস্কৃতিপল্লির দাবি উঠলেও সংস্কৃতির শহরে তা হয়নি। এ প্রসঙ্গে কবি ও নাট্যকার ফরিদ আহমদ দুলাল বলেন, ‘শিল্প-সংস্কৃতি’ নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় আর সংস্কৃতিচর্চার প্রয়োজন নেই বলেই হয়তো কোনো অগ্রগতি নেই।
ময়মনসিংহকে শিক্ষার শহর বলা হলেও আছে নানা সংকট। এখানে আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। জেলায় কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়নি। স্থানীয়রা ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আনন্দ মোহন কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
আনন্দ মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন বলেন, এখানে অনেক প্রতিষ্ঠান থাকলেও শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নেই, কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে। অনেক বিভাগীয় শহরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এখানে তা নেই। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন আছে।
আন্দোলনের ফসল হিসেবে বিভাগ ও সিটি করপোরেশন পেয়েছি। কিন্তু আমরা দেশের অন্য বিভাগের তুলনায় অগ্রসর হতে পারিনি, বিভিন্ন খাতে পিছিয়ে আছি।নূরুল আমিন কালাম, সাধারণ সম্পাদক, ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলননাগরিক সংগঠন ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলন বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের দাবির মধ্যে আছে এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দুই হাজার শয্যায় উন্নীত করা ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, আলাদা সদর হাসপাতাল স্থাপন, ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে ময়মনসিংহ থেকে দুই জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু, বিভাগীয় শহর হিসেবে ময়মনসিংহে একটি বিমানবন্দর স্থাপন, কৃষিপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, ব্রহ্মপুত্র নদে প্রাণ ফেরানো।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমিন কালাম বলেন, ‘২৩৮ বছরের পুরোনো এ জেলায় আমাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে বিভাগ ও সিটি করপোরেশন পেয়েছি। কিন্তু আমরা দেশের অন্য বিভাগের তুলনায় অগ্রসর হতে পারিনি, বিভিন্ন খাতে পিছিয়ে আছি। এর মূল কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করলেও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তাঁরা চিন্তা করেননি।’
বিভাগীয় শহর কত দূর২০১৫ সালে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে ময়মনসিংহকে দেশের অষ্টম বিভাগ ঘোষণা করা হয়। এরপর বিভাগীয় শহর স্থাপনের জন্য ময়মনসিংহ শহর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে ‘ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দপ্তর ও নতুন বিভাগীয় শহর প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের’ প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হয়। শুরুতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমিতে বিভাগীয় শহর স্থাপনের প্রস্তাব তৈরি হলেও স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে সেটি অনুমোদন হয়নি। পরে চরাঞ্চলের গোবিন্দপুর, চর ঈশ্বরদিয়া, পাড়ালক্ষ্মীর আলগী ও চর সেহরা মৌজায় ২০২২ সালে প্রায় ৯৪৫ একর জমিতে বিভাগীয় শহর স্থাপনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন শহরে বিভাগীয় প্রশাসনের অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তর, আবাসিক এলাকা, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, বাঁধ, জাদুঘর, নভোথিয়েটার, কৃত্রিম জলাশয়, আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও মানসম্মত হোটেল থাকবে। প্রকল্প অনুমোদনের পর জমি অধিগ্রহণ, উচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে।
বিভাগীয় শহর বাস্তবায়নে কত সময় লাগবে, তা বলা যাচ্ছে না। শুরুতে জটিলতা সৃষ্টি না হলেও এত দিন অনেক দূর এগিয়ে যেত বিভাগীয় শহর।তাহমিনা আক্তার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব), ময়মনসিংহবিভাগীয় শহর স্থাপন প্রকল্পের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ময়মনসিংহের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তার বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে হবে। এ কাজ শেষ হলে পরে অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প শুরু হবে। তবে বিভাগীয় শহর বাস্তবায়নে কত সময় লাগবে, তা বলা যাচ্ছে না। শুরুতে জটিলতা সৃষ্টি না হলেও এত দিন অনেক দূর এগিয়ে যেত বিভাগীয় শহর।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্বপ্ন শেষময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের চর রামমোহন মৌজায় প্রায় ২০০ একর জমিতে ২০১৮ সালে ২ নভেম্বর ময়মনসিংহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। তবে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুমোদন পাওয়া ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমও বাতিল করা হয়েছে।
ক্রীড়াঙ্গনে নতুন আশাপ্রাচীন এই জেলায় নেই মানসম্মত কোনো স্টেডিয়াম। দেশের ক্রীড়ার মান উন্নয়ন, উচ্চতর ও আধুনিক প্রশিক্ষণের জন্য ময়মনসিংহের ত্রিশালে একটি মাল্টিস্পোর্টস অলিম্পিক কমপ্লেক্স তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলার ত্রিশালে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭৩ একর জমিতে হবে এটি। এতে ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন ক্রীড়াবিদেরা। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ ফিরোজা খাতুন বলেন, এ জেলায় মানসম্মত স্টেডিয়াম না থাকায় এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ কম পাওয়ায় দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু এখন নতুন আশা দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়