রাধিকা যাদব এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশীদের কটূক্তি সইতে না পেরে বাবা তাঁকে থামিয়ে দিলেন।

ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ভারতের রাজ্য পর্যায়ের এই ২৫ বছর বয়সী টেনিস খেলোয়াড় ডাবলসে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে উঠে আসছিলেন। একটি টেনিস একাডেমি পরিচালনা করতেন। সমাজের উচ্চপর্যায়ের অনেকে ব্যক্তিগতভাবে কোচিংও করাতেন। কিন্তু পুলিশ ও গুরগাঁওয়ের স্থানীয় অধিবাসীদের মতে, মেয়ের এমন এগিয়ে যাওয়ায় তাঁর বাবা ৫৪ বছর বয়সী দীপক যাদবকে সমাজের কটু কথা হজম করতে হচ্ছিল। মেয়ের আয়ের ওপর নির্ভরশীল তিনি, এমন সব কথা শুনতে হচ্ছিল দীপককে।

আরও পড়ুনঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালে সাবালেঙ্কা, শেষ চারে আলকারাজও০৮ জুলাই ২০২৫

হরিয়ানার গুরগাঁও জেলার সুশান্ত লোক-টু এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস দীপকের। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজের লাইসেন্স করা রিভলবার দিয়ে পাঁচটি গুলি করেন তিনি রাধিকাকে। তিনটি গুলিবিদ্ধ হয়ে রাধিকা মারা যান। জ্বরে ভোগা তাঁর মা এ সময় অন্য কক্ষে ছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বুলেট বিদ্ধ হয়ে এক তরুণীর মৃত্যুর খবর একটি বেসরকারি হাসপাতাল তাদের জানায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। পুলিশের একটি দল তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে গিয়ে নিহতের চাচা কুলদীপকে পায়। সেখানে নিহতের বাবা-মা ছিলেন না। এরপর পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে।

সূত্র মারফত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েটির বাবা দীপককে পেয়েছে। সংবাদমাধ্যমটিকে পুলিশ জানিয়েছে, দীপক তাদের বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যে টেনিস খেলোয়াড়কে গুলি করেছেন, সে তাঁর মেয়ে।’ পুলিশ এরপর তাঁর লাইসেন্স করা পয়েন্ট ৩২ বোরের রিভলবারটি জব্দ করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেয়েটির বাবাকেও আটক করে। পরে সেদিন সন্ধ্যায় তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গুরগাঁয়ে ৫৬ নম্বর সেক্টরের পুলিশ স্টেশনে হত্যার অভিযোগে একটি এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন১ নম্বর সাবালেঙ্কাকে বিদায় করে প্রথমবার ফাইনালে আনিসিমোভা১৩ ঘণ্টা আগে

পুলিশ স্টেশনের হাউস অফিসার ইন্সপেক্টর বিনোদ কুমার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘তিনি (দীপক) বেশ কিছুদিন ধরেই হতাশায় ভুগছিলেন; কারণ, মেয়ের আয়ের ওপর নির্ভর করে চলছেন, এলাকাবাসীর এমন কটূক্তি শুনতে হচ্ছিল। এসব নিয়ে তিনি খুব মানসিক যন্ত্রণায় ছিলেন—তাঁরা (এলাকাবাসী) বলতেন, মেয়ের আয়ে ঘরের সবকিছু চলছে এবং তিনি তার (রাধিকা) ওপর নির্ভরশীল। রাধিকাকে তিনি অনেকবার একাডেমিতে কাজ বন্ধ করতে বলেছেন, কিন্তু সে কথা শোনেনি। এরপর তিনি আর সহ্য করতে পারেননি।’ পুলিশ জানিয়েছে, দীপকের অল্প কিছু ভূসম্পত্তি আছে, যেখান থেকে তিনি ভাড়া পেতেন।

ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাধিকার রিল বানানো নিয়ে রাগান্বিত ছিলেন তাঁর বাবা দীপক। পরিবারের জন্য এটা লজ্জার বলে ভেবেছিলেন তিনি। পুলিশকে দীপক বলেছেন, যখনই গ্রামে যেতেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়ের উপস্থিতি নিয়ে কটূক্তি শুনতে হতো প্রতিবেশীদের। গত ১৫ দিন এসব নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভোগার পর এমন ভয়ংকর পদক্ষেপ নেন দীপক।

২০০০ সালের ২৩ মার্চ জন্ম নেওয়া রাধিকা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন টেনিস টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। অল ইন্ডিয়া টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (এআইটিএ) রেকর্ড অনুযায়ী, মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ে ক্যারিয়ার–সেরা ৭৫তম র‌্যাঙ্কিংয়ে উঠেছিলেন রাধিকা। ডাবলসে র‌্যাঙ্কিংয়ে ছিলেন ৫৩তম এবং সিঙ্গেলসে ৩৫তম। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন (আইটিএফ) অঙ্গনেও সক্রিয় ছিলেন রাধিকা, যেখানে তিনি র‌্যাঙ্কিংয়ে ১১৩তম। তবে ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, দুই বছর আগে পাওয়া চোটের কারণে প্রতিযোগিতামূলক টেনিস থেকে রাধিকা সরে দাঁড়ান। কয়েক মাস ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন রাধিকা। বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামে ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে প্রতিনিধি গিয়েছিলেন রাধিকাদের বাসায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রাধিকা যেসব মেয়েদের কোচিং করাতেন, তাদের মধ্যে অনেকে শোক ও সান্ত্বনা জানাতে এসেছেন। রাধিকার মা এবং চাচা কুলদীপ এ সময় বারান্দায় চেয়ারে চুপচাপ বসে ছিলেন। একজন বয়স্ক পুরুষ এ সময় বলেন, ‘এক দিন আগে বললেন যে আপনি আপনার মেয়েকে ভালোবাসেন এবং যত্ন নেন, কিন্তু তার পরদিনই এমন কিছু ঘটিয়ে ফেললেন!’

পুলিশ জানিয়েছে, রাধিকার বড় ভাই ধীরাজ জমি বেচাকেনার কাজে জড়িত এবং তিনি শহরের অন্য জায়গায় বসবাস করেন। সুশান্ত লোক অঞ্চলে বসবাসকারীদের ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পবন যাদব দাবি করেন, তিনি রাধিকাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠজন। পবনের ভাষায়, ‘স্থানীয় কিছু লোক ছোট মানসিকতার, তারা রাধিকার সাফল্য সহ্য করতে পারেনি.

..খেলা ও কোচিং নিয়ে বানানো তার রিল নিয়ে তারা কটূক্তি করেছে। বাবা নিষেধ করায় তাকে অ্যাকাউন্টটি মুছে ফেলতে হয়।’

সকালে রাধিকার কোচিংয়ে অংশ নেওয়া শহরের এক বাসিন্দা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘সে আমাদের বলেছিল তার বাবা-মা রক্ষণশীল মানসিকতার। মিষ্টি ও প্রাণবন্ত একটি মেয়ে ছিল, আর কী দারুণ খেলোয়াড়!’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ন পর য য়

এছাড়াও পড়ুন:

মাহাথিরের দীর্ঘ ও সফল জীবনের রহস্য

মানবজীবন দীর্ঘ হতেই পারে। কিন্তু সব দীর্ঘজীবনই মহিমান্বিত হয় না। দীর্ঘ সে জীবন যদি ত্যাগ স্বীকারের হয়, অপরের কল্যাণে হয়, তবে সে জীবন একই সঙ্গে হয় সফল।

দীর্ঘ ও সফল জীবনের এক উদাহরণ ড. মাহাথির মোহাম্মদ। তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি, যিনি প্রথম দফায় (১৯৮১-২০০৩) দীর্ঘ ২২ বছর সফলভাবে দেশটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। মালয়েশিয়াকে করেছেন একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র।

ড. মাহাথির চল্লিশের দশকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সিতি হাসমাহর। পরিচয় থেকে অন্তরঙ্গতা, এরপর বিয়ে। সিতি হাসমাহও ওই মেডিকেলেরই শিক্ষার্থী ছিলেন।

দ্বিতীয় দফায় (২০১৮-২০২০) রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসেন ৯৪ বছর বয়সে। তাঁর কর্মস্পৃহা, উদ্যম রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। এখন ১০০ বছর বয়সেও প্রায় সুস্থ জীবন যাপন করছেন মাহাথির।

২০২৩ সালে ঢাকার বাংলা একাডেমির সবুজ চত্বরে হয়ে যাওয়া লিট ফেস্টে একটি সেশনে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন মাহাথিরকন্যা মেরিনা মাহাথির। তিনি একজন সুপরিচিত মানবাধিকারকর্মী ও লেখক। মাহাথিরকে নিয়ে তাঁর লেখা বই ‘দ্য অ্যাপল অ্যান্ড দ্য ট্রি’ নিয়েই মূলত আলোচনা হচ্ছিল। সেখানে মানবাধিকারসহ অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ছোট্ট করে উঠে এল মাহাথিরের দীর্ঘ জীবনের প্রসঙ্গও।

সেই জায়গা থেকেই এ লেখার অনুপ্রেরণা। আসলেই তো! মাহাথিরের দীর্ঘ ও সফল জীবনের প্রকৃত রহস্যটা কী?

মাহাথিরের রাজনৈতিক জীবন, বিরোধী মত দমন, মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে তাঁর সীমিত অঙ্গীকার—এসব নিয়ে কম আলোচনা, তর্কবিতর্ক হয়নি। এখনো হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁর জীবনবোধ, একনিষ্ঠতা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাও আলোচনায় এসেছে।

কিন্তু যে মানুষ শত বছর বয়সেও কর্মক্ষম থাকেন, সেই মানুষটি ভিন্ন।

মাহাথিরের জীবনের পাণ্ডুলিপি

মাহাথিরের জীবনের পাণ্ডুলিপিতে চোখ বুলিয়ে আসা যাক। জন্ম মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যের প্রধান শহর আলোর সেতারে। তাঁর দাদা ভারতের কেরালা থেকে সেখানে অভিবাসী হন। বিয়ে করেন এক মালয় নারীকে।

ছোটবেলা থেকেই তুখোড় মেধাবী ছিলেন মাহাথির। বাবা মোহাম্মদ ইস্কান্দার, যিনি ছিলেন একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রধান শিক্ষক, শৈশবেই ছেলের মধ্যে শৃঙ্খলা ও একাগ্রতার বীজ বপন করে দিয়েছিলেন। পড়াশোনা করতে গিয়ে তাই খেলাধুলায় মনোযোগ দিতে পারেননি মাহাথির।

ড. মাহাথির চল্লিশের দশকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সিতি হাসমাহর। পরিচয় থেকে অন্তরঙ্গতা, এরপর বিয়ে। সিতি হাসমাহও ওই মেডিকেলেরই শিক্ষার্থী ছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে মেডিকেল কলেজ বন্ধ থাকে। এ সময় মাহাথির কফি, চকলেট বিক্রি করে কিছু উপার্জন করেন।

১০০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কেক কাটছেন মাহাথির মোহাম্মদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রুটের সেঞ্চুরি, বুমরাহর ফাইফারের পর ভারতের লড়াই
  • যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে ১ হাজার ৩০০-এর বেশি কর্মী ছাঁটাই
  • ২৪ ঘণ্টা পরই মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখলেন সাকিব
  • সাগরিকার হ্যাটট্রিকে প্রথম ম্যাচেই ৯ গোলের জয়
  • সাফ অনূর্ধ্ব–২০: প্রথমার্ধেই তিন গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ
  • লর্ডসে ব্যতিক্রমী ধৈর্য, রুটের ৯৯ রানে ভর করে লড়াইয়ে ইংল্যান্ড
  • জোহর বাহরুতে কলস‍্যুলেট জেনারেল স্থাপন হবে: তৌহিদ হোসেন
  • মননে প্রজ্ঞায় সৃজনে
  • মাহাথিরের দীর্ঘ ও সফল জীবনের রহস্য