শত কোটি ভারতীয়ের পছন্দসই পণ্য কেনার অর্থের অভাব: প্রতিবেদন
Published: 26th, February 2025 GMT
১৪০ কোটি জনসংখ্যার ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের তকমা পেলেও তাদের প্রায় ১০০ কোটি মানুষেরই পছন্দসই পণ্য কেনা বা সেবা গ্রহণের মতো পর্যাপ্ত অর্থের অভাব রয়েছে, যা বৈশ্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
উদ্যোগ মূলধন নিয়ে কাজ করা ‘ব্লুম ভেঞ্চার’ ভারতে সমীক্ষার ভিত্তিতে ‘ইন্ডাস ভ্যালি অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০২৫’ নামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ২৩ ফেব্রুয়ারি। ২০১১ সালে মুম্বাইয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে।
বিবিসি লিখেছে, প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতের ভোক্তা শ্রেণির আকার কার্যকরভাবে বলতে গেলে স্টার্ট-আপ বা ব্যবসার মালিকদের জন্য মেক্সিকোর মতো অর্থাৎ মাত্র ১৩ থেকে ১৪ কোটি মানুষের বাজার। যেখানে ৩০ কোটি মানুষ ‘উদীয়মান’ বা ‘আকাঙ্ক্ষী’ ভোক্তা। তবে তারা ইচ্ছা অনুযায়ী খরচ করতে পারেন না; তারা কেবল তাদের মানি ব্যাগ থেকে টাকা বের করা শুরু করেছেন; তা ছাড়া ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম লেনদেন সহজ করায় তারা কিছু খরচে ঝুঁকেছেন।
ইন্ডাস ভ্যালি অ্যানুয়াল প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতে ভোক্তা শ্রেণি যতটা ‘গভীর হচ্ছে’ ততটা ‘প্রসারিত’ হচ্ছে না। এর অর্থ হলো ভারতের ধনী জনসংখ্যা সত্যিই সংখ্যায় বাড়ছে না; যদিও যারা ইতোমধ্যে ধনী, তারা আরো ধনী হচ্ছে।
এসব বিষয় ভারতের ভোক্তা বাজারকে একটি স্বতন্ত্র রূপ দিচ্ছে, বিশেষ করে ‘উচ্চস্তরের ভোক্তাদের জন্য পণ্য’ ধারণাকে ত্বরান্বিত করছে; যেখানে ব্র্যান্ডগুলো সর্বজনীন বাজারের বদলে ধনীদের জন্য ব্যয়বহুল, আরো উন্নত পণ্যের প্রবাহ দ্বিগুণ করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
ভারতে এই প্রবণতা স্পষ্ট বোঝা যায় সর্বাধুনিক সুবিধার প্রাসাদোপম বাড়ি ও প্রিমিয়াম কোয়ালিটির মোবাইল ফোন বিক্রির পরিসংখ্যান থেকে। এমন কী উচ্চমানের মধ্যে সর্বনিম্ন দরের পণ্য ও সেবা বিক্রির প্রতিযোগিতাতেও এই লড়াই দেখা যায়। সাশ্রয়ী মূল্যের মাঝারি মানের বাড়িগুলোর বাজার এখন এই খাতে ভারতের সামগ্রিক বাজারের মাত্র ১৮ শতাংশ, মাত্র পাঁচ বছর আগেও যা ছিল ৪০ শতাংশ।
ব্র্যান্ডেড পণ্যও ভারতের বাজারের একটি বড় অংশ দখল করছে। চলমান অর্থনৈতিক অভিজ্ঞতা বলছে, কোল্ডপ্লে এবং এড শিরানের মতো আন্তর্জাতিক শিল্পীদের কনসার্টের উচ্চমূল্যের টিকিটও মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে সেদেশে।
প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক সজিথ পাই বিবিসিকে বলেছেন, “যেসব কোম্পানি পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, তারা উন্নতি করেছে। যারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাজারের দিকে খুব বেশি মনোযোগী অথবা তাদের এমন একটি মিশ্র পণ্য রয়েছে, যা উচ্চস্তরের শেষ ধাপের জনগণের দিকে মনোযোগী নয়; তারা মার্কেট শেয়ার হারিয়েছে।”
প্রতিবেদনে উঠে আসা ফলাফলে দীর্ঘদিনের একটি দৃষ্টিভঙ্গি আরো শক্তিশালী হয়েছে যে, ভারতের কোভিড-১৯ মহামারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা ইংরেজি অক্ষর ‘কে’ আকৃতি ধারণ করেছে; যেখানে ধনী আরো ধনী হয়েছে এবং দরিদ্রদের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে।
বিবিসি লিখেছে, আসলে ভারতে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত প্রবণতা, যা মহামারির আগেই বোঝা গিয়েছিল। ভারত ক্রমেই অসম আয়ের দেশ হয়ে উঠছে। শীর্ষ ১০ শতাংশ ভারতীয়ের আয় এখন দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশের সমান; যা ১৯৯০ সালে ছিল ৩৪ শতাংশ। প্রান্তি জনগোষ্ঠীর আয় মোট জনসংখ্যার আয়ের ২২ দশমিক ২ থেকে নেমে ১৫ শতাংশে ঠেকেছে।
ভোক্তার ক্রম ক্ষমতার এই মন্দাভাব শুধু ক্রয়ক্ষমতা ধ্বংসেরই চিত্র নয়; আর্থিক সঞ্চয় এবং ক্রমবর্ধমান ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তার গভীরতাও বৃদ্ধি করেছে।
সজিথ পাই বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সহজে অনিরাপদ ঋণের ওপর কড়াকাড়ি আরোপ করেছে এবং কোভিড মহামারির পরে বাজারে অর্থের চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে। এ ধরনের ঋণ বা ধার বন্ধ করায় ভারতের উদীয়মান ও আকাঙ্ক্ষী ভোক্তারার ক্রম ক্ষমতা কমিয়েছে বা তাতে প্রভাব ফেলেছে।
“স্বল্পসময়ের মধ্যে দুটি জিনিস ব্যয়ের সামর্থ বাড়াতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রেকর্ড ফসল উৎপাদনের সঙ্গে গ্রামীণ চাহিদা বাড়ানো এবং সম্প্রতি ঘোষিত নতুন বাজেটে ১২ বিলিয়ন কর রেয়াত দেওয়া। এর ফল ‘নাটকীয়’ না হলেও ভারতের জিডিপি বাড়াতে পারে, যা হবে মূলত খরচ করার মাধ্যমে; অন্তত অর্ধেক নাগরিকের ক্ষেত্রে তা অর্জন করা যেতে পারে।
নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান মার্সেলাস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার্স জানুয়ারি মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যাদের ভোক্তা চাহিদার প্রধান ইঞ্জিন বলা হয়, দীর্ঘদিন তাদের মজুরি প্রায় একই থেকে গেছে।
"ভারতের কর-প্রদানকারী জনসংখ্যার মধ্যে ৫০ শতাংশ মধ্যবিত্ত, আদতে যাদের আয় গত এক দশকে স্থবির হয়ে রয়েছে। থমকে থাকা এমন আয়কে প্রকৃত অর্থে অর্ধেক আয় বোঝায়। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করলে প্রকৃত আয় বাড়ে না।”
মার্সেলাস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, "আয় নিয়ে এমন নাজুক অবস্থা মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের ঘটি ধ্বংস করে ফেলেছে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক বারবার বলেছে যে, ভারতীয় পরিবারগুলোর নিরেট সঞ্চয় ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। এসব তথ্য-উপাত্ত থেকে বোঝা যায়, ভারতের মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত পণ্য ও সেবা সামনের বছরগুলোতে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে পারে।”
“মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের শহরের চাকরিতে আসা কঠিন হয়ে উঠছে। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন দাপ্তরিক, সাচিবিক ও অন্যান্য রুটিন কাজকর্ম স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্রুত করে ফেলতে সক্ষম,” বলা হয়েছে মার্সেলাসের প্রতিবেদনে।
"ভারতে উৎপাদন কারখানায় কাজ করা সুপারভাইজারের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।”
ভারত সরকারের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সমীক্ষাও এসব উদ্বেগকে চিহ্নিত করেছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে শ্রম বাস্তুচ্যুতি ভারতের মতো প্রধানত পরিষেবা-ভিত্তিক অর্থনীতির জন্য বিশেষ উদ্বেগের বিষয়, যেখানে আইটি কর্মীবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অপেক্ষাকৃত কম সেবা ও মূল্য উৎপাদনে যুক্ত। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ প্রবণতা।
সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, "ভারত একটি ভোগ-ভিত্তিক অর্থনীতির দেশ। এইভাবে তার কর্মশক্তির বিচ্যুতি ঘটলে তা ভোক্তার ক্রম-ক্ষমতার পতন ঘটাবে। ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে বাধ্য। যদি সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আবির্ভূত হয় এবং অনুমানগুলো বাস্তব হতে থাকে; তাহলে তাতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিপথ স্লথ করে দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
অন্যান্য ব্যবসায়ীসহ বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের ভারতে ব্যবসার পরিবেশ, চলতি ধরন ও প্রবণতা, ব্যবসার ভবিষ্যৎ গতিপথ সম্পর্কে গবেষণাবিভিত্তিক দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে ব্লুম ভেঞ্চার।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জনস খ য র প রবণত র জন য ক ষমত ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
তিন কারণে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, অক্টোবরের বৃষ্টিও ভোগাবে
‘রোগতাত্ত্বিক ত্রিভুজ’ বলে জনস্বাস্থ্যে একটি পরিভাষার ব্যবহার আছে। এই ত্রিভুজের তিন বাহুর একটি হলো জীবাণু (ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে মশা), একটি রোগী এবং তৃতীয়টি পরিবেশ। এই তিনটির একটিও যদি নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে রোগ বৃদ্ধির প্রবণতা কমানো যায়।
গতকাল শুক্রবার শেষ হলো অক্টোবর মাস। এ মাসে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে, এডিস মশার বিস্তার কমেনি এবং জীবাণু সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ যেমন বৃষ্টিও ছিল। পরিবেশের অন্য উপাদান যেমন শহরাঞ্চলে নোংরা ও আবর্জনা। এ ক্ষেত্রেও কোনো উন্নতি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু থেকে মুক্তির সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘অক্টোবরের শেষ সময়ে এসে এই বৃষ্টি আমাদের ভোগাবে। নভেম্বরে ডেঙ্গুর বিস্তার কমার সম্ভাবনা কম। রোগতাত্ত্বিক ত্রিভুজ বলতে যা বোঝায়, তাকে রুখে দেওয়ার কোনো তৎপরতা তো দেখছি না। গ্রামে-গঞ্জে এডিস ছড়িয়ে পড়েছে। তার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৃশ্যমান কাজ দেখা যাচ্ছে না। ভীতির কারণ এটাও।’
অক্টোবরের শেষে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছিল। আর গত বুধবার দেখা যায়, এক মাসে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৫২০ জন। এ মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৮০। সংক্রমণ ও মৃত্যু—দুই দিক থেকেই ডেঙ্গুর আক্রমণে অক্টোবর ছিল বছরের শীর্ষে।
বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫০৩ জন। এ সময় কারও মৃত্যু হয়নি। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৭৮ জন। আর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৯ হাজার ৮৮৬। গত বছর এ সময় রোগীর সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৮১৭ আর মৃত্যু হয়েছিল ২৯৭ জনের।
দুই মাস ধরে বাড়ছে রোগ ও মৃত্যু
চলতি বছরের জুন থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। এ সময় অনেক বিশেষজ্ঞই বলেছিলেন, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বড় আকারের হতে পারে। সরকার তাতে তেমন গা করেনি। গত জুলাই মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা জুনের দ্বিগুণ হয়ে যায়। আগস্টে মৃত্যু ও সংক্রমণ সামান্য কমে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তা আবার বেড়ে যায়। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৫ হাজার ৮৬৬ জন। অক্টোবরে প্রায় ৭ হাজার রোগী বেড়েছে।
ঢাকা ও আশপাশে রোগী বাড়ছে
চলতি বছরের ডেঙ্গুর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এবার ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এবার মোট আক্রান্তের ২৮ শতাংশ ঢাকার। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ঢাকার বাইরে রোগী বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল। কিন্তু অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই ঢাকায় রোগী বাড়তে শুরু করে। শুধু ঢাকা নয়, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের মতো পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোয় রোগী ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অক্টোবরে ঢাকায় অন্তত ১৫ শতাংশ রোগী বেড়েছে সেপ্টেম্বরের চেয়ে। তবে ঢাকায় ভর্তি রোগীদের অন্তত ৫০ শতাংশ ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
নারায়ণগঞ্জে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৩০। অক্টোবরের শেষে এসে রোগীর সংখ্যা হয়েছে ১ হাজার ৩১০ জন। অর্থাৎ শুধু অক্টোবরে আগের নয় মাসের তুলনায় রোগী দ্বিগুণ হয়েছে। গাজীপুরে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত রোগী ছিলেন ১ হাজার ৬৬১ জন। আর অক্টোবরের শেষ দিন পর্যন্ত রোগী হয়েছেন ২ হাজার ৯৯৩ জন।
তিন কারণে ডেঙ্গুর বড় বিস্তার
চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবীরুল বাশার। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই বর্ষা দেরিতে আসছে। এবারও অক্টোবরজুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ডেঙ্গুর বিস্তারে দ্বিতীয় কারণ। পৌরসভার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রতিনিধিশূন্য করা ঠিক হয়নি। ঢাকার বাইরে এবার ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তারে এসব ভঙ্গুর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বড় কারণ। কবীরুল বাশার মনে করেন, ঢাকার বাইরে যেহেতু চিকিৎসা অবকাঠামো দুর্বল, তাই সেসব এলাকায় রোগ বেড়েছে।
অধ্যাপক কবীরুল বাশার বলেছিলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে শীতের ভূমিকা আসলে কম। কারণ, এখানে জানুয়ারি মাসে দিনের তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। রাতে হয়তো তা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে চলে আসে। কিন্তু এখানে এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি।
অক্টোবরের শেষে যে বৃষ্টি হয়েছে, আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, অন্তত ৩টি বিভাগে পরের ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।এরই মধ্যে বৃষ্টির আরেক খবর আছে। ৬ থেকে ৭ নভেম্বর সাগরে লঘুচাপের ফলে আবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
এভাবে বৃষ্টি হলে পাঁচ থেকে সাত দিন লার্ভা থেকে বাচ্চা মশা হয়। সেটি প্রাপ্তবয়স্ক হতে আরও ১১ দিনের মতো সময় লাগে। সব মিলিয়ে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন এডিসের বংশবিস্তার ঘটতে থাকবে। ফলে নভেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে না। এর রেশ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারে।