ড্রেসিংরুমে কি আলাপ চলছিল তা জানা মুশকিল। তবে টিভির পর্দায় নাজমুল হোসেন শান্তর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখে অন্তত আঁচ করা যাচ্ছিল, আনন্দেই আছেন তিনি। অবশ্য তার মুখে হাসি ফোটার জন্য কারণ লাগে কিনা সেটা বিরাট প্রশ্নের। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের করুণ দশার সময়ও ড্রেসিংরুমে সহকারী কোচ সালাউদ্দিনের পাশে বসে হেসে মেতে থাকতে দেখা গেছে তাকে। তাতে সমস্যা নেই। বরং কঠিন পরিস্থিতিও যে তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে না এটা ভালো দিক।
তবে রাওয়ালপিণ্ডিতে আজকের পরিস্থিতিটা দুশ্চিন্তার ছিল না। আন্দন্দেরই। কেননা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারতে যে হয়নি! হ্যাঁ জয় পেতেও পারত বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ জিততেই পারবে, এমন বাজি ধরার লোক খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। কেননা প্রথম দুই ম্যাচে পারফরম্যান্সের যে বেহাল দশা তাতে শেষ ম্যাচে লড়াইটা ছিল কেবল টিকে থাকার। সেই লড়াইয়ে মাঠে নামতে না পারাও স্বস্তির।
পাকিস্তানের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে বাংলাদেশ। বেরসিক বৃষ্টির বাগড়ায় দুই দল মাঠেই যে নামতে পারেনি। পাকিস্তানের জন্যও তা-ই। দুই দলেরই পয়েন্ট সমান সমান। তবে রান রেটে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে তিনে অবস্থান নাজমুল হোসেন শান্ত অ্যান্ড কোংদের। এক পয়েন্ট পাওয়ায় স্বস্তি থাকলেও লম্বা সময় পর আইসিসি ইভেন্ট থেকে শূন্য হাতে ফিরছে বাংলাদেশ।
আরো পড়ুন:
‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যে যাচ্ছি’
চারে এসে সফল শান্ত-হৃদয়
২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে নিয়মিত আইসিসি ইভেন্টে জয় পেয়ে আসছিল। ১৩ বছর পর আইসিসি ইভেন্টে কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। মাঝে নয়টি ইভেন্ট খেলেছে টাইগাররা। যেখানে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আছে তিনটি। একটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সবকটি ইভেন্টেই বাংলাদেশের একটি হলেও জয় ছিল। এবার ভারত ও নিউ জিল্যান্ডের কাছে বাজেভাবে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি।
২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ সুপার এইটে উঠলেও পরের রাউন্ডে কোনো জয় পায়নি। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একই পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি। প্রথম রাউন্ড কোনোমতে পার করলেও সুপার এইটে কোনো জয় নেই। সেবারই বেঙ্গালুরুতে মাত্র ১ রানে ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। মাঝে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলেছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। সেবার ইংল্যান্ডকে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ পায়। ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ৮ ম্যাচে ৩টিতে জয় পায়। হেরে যায় ৫ ম্যাচে।
২০২১ এবং ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ২টির বেশি জয় পায়নি। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ সবচেয়ে বাজে সময় কাটায়। ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে মাত্র ২ জয় পায়। সবশেষ ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৭ শ্যাচে ৩ জয়। সেবারই প্রথম সুপার এইটের ম্যাচে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ব্যর্থতা নিশ্চিতভাবেই সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেল। দুয়েকটি ভালো মুহুর্ত বাদে দুবাই ও পাকিস্তান সফরে বলার মতো কিছুই নেই বাংলাদেশের।
ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জয় প য় প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।
তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।
ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।
প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।
তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।
এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।
তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।
চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।
এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।
এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।
অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।