চাঁপাইনবাবগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণে ইউপি চেয়ারম্যানসহ আহত ৬
Published: 28th, February 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণে বারঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হারুনর রশিদসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার বারঘরিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ছয়জনকে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আনোয়ার মাহমুদ বলেন, হারুনর রশিদের হাত ভেঙে গেছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে তাঁকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে। অন্য পাঁচজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আহত নাজমুল আলম নামের একজন দোকানদার বলেন, ‘আমার দোকানের সামনে একটি ও তার আগে বাজারে অন্যান্য স্থানে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে বাজার ছেড়ে পালিয়ে যায়।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সোয়া আটটার দিকে বারঘরিয়া বাজারের অমি টেলিকম ও নূর ক্লথ নামে দোকানের কাছে কয়েকজন এসে পাঁচ-সাতটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় স্থানীয় গণ অধিকার পরিষদের নেতা রাকিব জড়িত বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় লোকজন। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা রাকিবের বন্ধু হিসেবে পরিচিত আল আমিনের মহানন্দা নদীর তীরের রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালান।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আল আমিনের রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালানো লোকজন পুলিশ দেখে সরে যান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী কৃষিশ্রমিক
‘১৫-২০ বছর ধইরা (ধরে), ই-খলায় (ধান মাড়াই ও শুকানোর স্থান) কাজ করি আমরা। আমরারে ৫০০ টেকা (টাকা) রোজ দেইন (দেন), আর বেটাইনতে (পুরুষরা) পাইন ৭০০ থেকে ৮০০ টেকা, দুপুরে আমরারে চিড়া-গুড় দেওয়া অয় (হয়) হেরার (পুরুষদের) লাগি ভাতের ব্যবস্থা করা অয়।’
কথাগুলো বলছিলেন তাহিরপুরের শনির হাওরপারের কালীবাড়ির সামনে একটি খলায় ধান শুকানো, ঝাড়াই ও বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকা দুই নারীশ্রমিক গীতা বর্মণ ও লক্ষ্মী রানী বর্মণ।
কেবল তাহিরপুরের ধানের খলায় নয়। হাওর এলাকাজুড়েই ধানের খলায় কাজ করা নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মজুরিতে বৈষম্য রয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরের নতুনপাড়ার বারীক মিয়ার খলায় কাজ করছিলেন, পাশের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মধ্যবয়সী নারীশ্রমিক প্রেমলতা বিশ্বাস। কখন কাজে এসেছেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন, সকাল ৮টায়। কয়টায় ছাড়বেন কাজ, বললেন বিকাল ৫টায়। মজুরি কত জানতে চাইলে বললেন, দিনে ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিকরা কত পায় প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ৭০০ টাকা। আপনাকে কম দেওয়া হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রেমলতা বলেন, ‘ই-দেশও নিয়মওই এইটা, বেটাইনতে (পুরুষরা) বেশি পায়।’
মধ্যনগরের বংশিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা হাসিনা বেগম জানান, ধান মাড়াই, শুকানো ও গোলায় তোলার কাজ করেন তিনি। প্রতিদিনই সকালে আগে কাজে লাগেন এবং কাজ শেষে সবার পরে ফেরেন তিনি। কিন্তু মজুরি দেবার সময় তাঁকে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিককে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকাও দেওয়া হয়।
দিরাই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বড় গৃহস্থ সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছত্তার মিয়ার ভাষ্য, রাজাপুরে নারী কৃষিশ্রমিক কমে গেছে। পাশের ইসলামপুরে এখনও বেশির ভাগ কাজ করেন নারীরা। ওখানে নারী ও পুরুষ শ্রমিক অর্ধেক-অর্ধেক। এবার পুরুষ ও মহিলা শ্রমিককে কত টাকা চুক্তিতে গ্রামের বড় কৃষকরা কাজে লাগিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, পুরুষ ২০ দিনে ১৬ মণ ধান এবং নারী শ্রমিকদের ৮ মণে করানো হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কথাও তুলেছি, কিন্তু অন্যরা তাতে বিরক্ত হন, তারা বলেন, চেয়ারম্যান সাবে রেইট বাড়িয়ে সবাইকে বেকায়দায় ফেলতে চান।’
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরের ফসল উৎপাদনে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় কৃষি শ্রমিকের চাইতে এক সময় বেশি ছিল নারী শ্রমিক। মজুরি বৈষম্যের কারণে এদের অনেকে এলাকার কাজ ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরে চলে গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য বললেন, কৃষিতে মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে গ্রামীণ এলাকা ছেড়ে উপজেলা, জেলা ও রাজধানীর গার্মেন্টসমুখী হয়েছে হাজার হাজার নারীশ্রমিক। কৃষি ছাড়াও অন্যান্য পেশায়ও মজুরি বৈষম্য থাকায় নারীর উপস্থিতির সংখ্যা কমছে।
গৌরী ভট্টাচার্য্য আরও বলেন, এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়ে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত পুরুষদের পেশা কৃষক লিখলেও নারীর ক্ষেত্রে হয় না। নারীর প্রতি এমন বৈষম্য বন্ধ করতে হবে।