যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এজেন্সিগুলোতে সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া হাজারো কর্মচারীকে গণবরখাস্ত করার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনা সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল বিচারক।

এ-সংক্রান্ত বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট জজ উইলিয়াম আলসুপ শুনানিকালে বলেন, কোনো কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করতে ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্টের (ওপিএম) নেই।

এমনকি প্রবেশনারি কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করতেও ওপিএম নির্দেশ দিতে পারে না বলে বলে মত দিয়েছেন বিচারক। প্রবেশনারি কর্মচারীদের চাকরির বয়স সাধারণত এক বছরের কম হয়ে থাকে।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টা ধনকুবের ইলন মাস্ক কর্মচারী ছাঁটাইসহ ফেডারেল আমলাতন্ত্রকে সংকুচিত করতে একটি অভূতপূর্ব প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ কাজের জন্য ট্রাম্প গঠন করেছেন সরকারি দক্ষতা বিভাগ। এই বিভাগের প্রধান মাস্ক।

ফেডারেল এজেন্সিগুলোর জন্য মানবসম্পদ বিভাগ হিসেবে কাজ করে ওপিএম। বিচারক আলসুপ ওপিএমকে ২০ জানুয়ারির একটি স্মারক এবং ১৪ ফেব্রুয়ারির একটি ই-মেইল প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এই স্মারক ও ই-মেইলে ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে সংস্থার কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়—এমন প্রবেশনারি কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাঁদের বরখাস্ত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিচারক আলসুপ বলেছেন, তিনি সরাসরি প্রতিরক্ষা দপ্তরসহ অন্য ফেডারেল সংস্থাগুলোকে কর্মচারীদের বরখাস্ত না করার বিষয়ে আদেশ দিতে পারছেন না। কারণ, বেশ কয়েকটি ইউনিয়নসহ অলাভজনক গোষ্ঠীর করা মামলার বিবাদী তারা নয়।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনায় প্রতিরক্ষা দপ্তর আজ শুক্রবার ৫ হাজার ৪০০ প্রবেশনারি কর্মচারীকে বরখাস্ত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিচারক আলসুপ বলেছেন, দুই সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া ফেডারেল কর্মচারীদের গণবরখাস্তের বিষয়টি বিভিন্ন পরিষেবায় ব্যাপক ক্ষতির কারণ হবে।

ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময় নিয়োগ পেয়েছিলেন বিচারক আলসুপ। তিনি বলেছেন, প্রবেশনারি কর্মচারীরা মার্কিন সরকারের প্রাণশক্তি। তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর শুরুর দিকের স্তরে কাজে যুক্ত হন। তাঁরা কাজের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে কাঠামোর ওপরের স্তরে ওঠেন। এভাবেই মার্কিন সরকারের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে হোয়াইট হাউস ও যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

বিচারক আলসুপের রুলিংয়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ ফেডারেল কর্মচারী ইউনিয়ন এএফজিইর প্রেসিডেন্ট এভারেট কেলি। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিচারকের এই রুলিং ফেডারেল কর্মচারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক বিজয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ন র জন য ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

আয় বেড়েছে ৩৫২ কোটি টাকা, তবু মুনাফা কমল ৯০ কোটি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ কোম্পানি রেনাটার মুনাফা কমে গেছে। কোম্পানিটি চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) মুনাফা করেছে ১৬৮ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের চেয়ে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৯০ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেনাটা ২৫৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল।

গতকাল বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। সেই প্রতিবেদন থেকে কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার এ তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও এই সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রেনাটা গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছররের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয় করেছে। এই আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫২ কোটি টাকা বা প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে কোম্পানিটির তাদের ব্যবসা থেকে আয় করেছিল ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। আয় যতটা বেড়েছে তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। রেনাটার চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটির উৎপাদন খরচ ছিল ১ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৩১৪ টাকা বা ২১ শতাংশ।

এ ছাড়া কোম্পানির পণ্য বিক্রি, উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ এবং ব্যাংকঋণের সুদ বাদ খরচও আগের বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেনাটার পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩৪ কোটি টাকায়। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এই খাতে কোম্পানিটির খরচ বেড়েছে ১২৫ কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেনাটার সুদ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণের সুদ বাবদ কোম্পানিটির খরচ বেড়েছে ৪৫ কোটি টাকা বা ৫৬ শতাংশের বেশি।

কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পণ্য বিক্রি, সরবরাহ ও ঋণের সুদ বাবদ খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ জন্য মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে।

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসের পাশাপাশি চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের আয়–ব্যয়ের হিসাবও আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে রেনাটা। তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটি ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকার ব্যবসা করে মুনাফা করেছে ৫৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ৯২১ কোটি টাকার ব্যবসা করে ৭২ কোটি টাকার মুনাফা করেছিল।

রেনাটা লিমিটেড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পুরোনো কোম্পানিগুলোর একটি। এটি ১৯৭৯ সালে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত হয়। সেই হিসাবে এটি শেয়ারবাজারে ৪৬ বছরের পুরোনো একটি কোম্পানি। ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে এটি শেয়ারবাজারে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত। সর্বশেষ গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছর শেষে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ৯২ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ৯ টাকা ২০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে। ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৪৯১ টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি যে মুনাফা করেছে তাতে বাজারে এটির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ২৫–এ। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ারবাজারে যে কোম্পানির পিই রেশিও যত কম সেই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ তত বেশি লাভজনক বা কম ঝুঁকিপূর্ণ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ