জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে গত বুধবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আরও ২২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গত রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে রাজধানীতে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে ১ হাজার ২১ জন গ্রেপ্তার হলো। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ সারা দেশে আরও ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত গত ২০ দিনে মোট ১১ হাজার ৯২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ পুলিশ সদর দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

সাঁড়াশি অভিযান সম্পর্কে ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানের অংশ হিসেবে ডিএমপির ৫০টি থানা ৬৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করছে। পাশাপাশি ৫৫০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করেছে।

ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ডাকাত সন্দেহে ১৫ জন, ছিনতাইকারী সন্দেহে ২৪ জন, চাঁদাবাজ সন্দেহে ৫ জন, চোর সন্দেহে ১২ জন, মাদক কারবারি সন্দেহে ২৭ জন ও পরোয়ানাভুক্ত ৩০ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত ছয়টি চাকু, দুটি সুইচ গিয়ার, একটি দা, একটি চাপাতি, দুটি কুড়াল, তিনটি পাইপ, একটি মাইক্রোবাস, চারটি মুঠোফোন ও ৬২ হাজার ২৯০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়া উদ্ধার করা মাদকের মধ্যে রয়েছে ৩৭ কেজি ৬৪৫ গ্রাম গাঁজা, ২৩৮ পিস ইয়াবা ও ২০ গ্রাম হেরোইন। সর্বশেষ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ৪৯টি মামলা করা হয়েছে।

জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির টহল দলের পাশাপাশি মহানগরীর বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ স্থানে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) ১৪টি, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) ১২টি এবং ডিএমপির সঙ্গে র‍্যাবের ১০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া ডিএমপির সঙ্গে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন ২০টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করেছে।

ডেভিল হান্ট

পুলিশ সদর দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বিকেল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় অপারেশন ডেভিল হান্টে সারা দেশে ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে দুটি টিপ ছুরি, একটি লোহার রড, একটি দেশীয় বন্দুক, দুটি ছুরি, চারটি চাকু ও একটি গুলি। একই সময়ে ডেভিল হান্টের বাইরে সারা দেশে বিভিন্ন মামলায় ৭৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হন ১৫-১৬ শিক্ষার্থী। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে এক সভায় অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা ওই রাতে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ডাকাতির খবর পেয়ে তা প্রতিহত করতে গিয়েছিলেন। তখন তাঁদের ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় আহত একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

আরও পড়ুনসাঁড়াশি অভিযানে ঢাকায় ২৪৮ জন আর ডেভিল হান্টে ৬৩৯ জন গ্রেপ্তার২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ড এমপ র স

এছাড়াও পড়ুন:

‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।” 

উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।” 

তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।” 

তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।” 

উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”

পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।” 

তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। 

রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • ডিবির অভিযানে আ.লীগের সাবেক এমপিসহ গ্রেপ্তার ৭
  • পুলিশ সপ্তাহ শুরু মঙ্গলবার, নির্বাচনী নির্দেশনা পাবে আইনশৃঙ্খলা ব
  • সাবেক আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবার বাড়ল