দেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনে একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হন। গত বছর  ৪৯ শতাংশ নারীর ওপর এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের তুলনায় স্বামীর মাধ্যমে বেশি নির্যাতনের শিকার হন নারীরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) যৌথভাবে এ জরিপ করে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জরিপের প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব আলেয়া আক্তার। এ ছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনএফপিএর ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পবকে। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপের মূল ফলাফল উপস্থাপন করেন বিবিএসের প্রকল্প পরিচালক ইফতেখাইরুল করিম। এই খানাভিত্তিক জরিপে শহর, গ্রাম, দুর্যোগপ্রবণ, বস্তি এলাকাসহ ২৭ হাজার ৪৭৬ নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীর জীবদ্দশায় স্বামী বা জীবনসঙ্গীর মাধ্যমে সহিংসতার বিস্তৃতি এখনও ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ এটি উচ্চমাত্রায় রয়েছে। তবে বিগত ১২ মাসে এই হার ৪১ শতাংশ। এই হার ২০১৫ সালে জীবদ্দশায় ছিল ৭৩ শতাংশ। নন-পার্টনার সহিংসতার চেয়ে জীবনসঙ্গী বা স্বামীর মাধ্যমে সহিংসতা (আইপিভি) বিস্তারের মাত্রা বেশি। জরিপটিতে, ‘জীবনসঙ্গী’ বলতে বর্তমান বা সাবেক স্বামী এবং ‘নন-পার্টনার’ বলতে বর্তমান বা সাবেক স্বামী ব্যতীত উত্তরদাতার ১৫ বছর বয়সের পর হতে জীবনের যেকোনো সময়ে সংস্পর্শে আসা যেকোনো ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।

জরিপে চার ধরনের সহিংসতার তথ্য তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে শারীরিক সহিংসতা, যৌন, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সহিংসতা। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী তাদের জীবনসঙ্গী বা স্বামীর সহিংসতার শিকার। প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭.

৪ শতাংশ আইনের আশ্রয় নেন। বাকি ৯৩.৬ শতাংশ নারী এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন না। এ ছাড়া সহিংসতার শিকার ৬৪ শতাংশ নারী তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা কারও সঙ্গে শেয়ার করেন না।

জরিপে দেখা যায়, নারীদের অন্য কারও তুলনায় স্বামীদের কাছ থেকে শারীরিক সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা তিনগুণ বেশি এবং যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ১৪ গুণ বেশি। এতে প্রতীয়মান যে বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন সহিংসতার ঝুঁকি অত্যধিক বেশি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীরা তাদের জীবদ্দশায় এবং বিগত ১২ মাসে, অদুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীদের তুলনায় জীবনসঙ্গী বা স্বামীর মাধ্যমে বেশি মাত্রায় সহিংসতার সম্মুখীন হন।

জীবনসঙ্গী বা স্বামীর মাধ্যমে সহিংসতার মাত্রা বেশি হলেও সহিংসতার শিকার নারীদের প্রায় ৬৪ শতাংশ তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা কাউকে কখনো বলেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবারের সুনাম রক্ষা করার আকাঙ্ক্ষা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ এবং এ ধরনের সহিংসতাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে করার প্রবণতাসহ বিভিন্ন কারণ থেকে মূলত এই নীরবতা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ বনসঙ গ

এছাড়াও পড়ুন:

৮০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হবে, যদি আপনি এই ৮ কাজ করেন

১. সঠিক মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিন। আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি ও আপনার জীবনসঙ্গী যেন আপনাদের সন্তানের জীবনে আদর্শ মানুষ হয়ে ওঠেন। ভুল মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করা জীবনের সব সমস্যার মধ্যে অন্যতম। কেবল এই একটি ভুল থেকেই ছোট-বড় অসংখ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। ফাস্ট ফুড, চিনি, কার্বনেটেড ড্রিংক যত কম খাবেন, ততই ভালো। পর্যাপ্ত পানি খান। ৭–৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম ঘুমান।

৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট বা আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করা জরুরি। প্রতিদিন ২৫–৩০ মিনিট দ্রুতগতিতে হাঁটলেও পাবেন অভাবনীয় উপকার।

আরও পড়ুনটক্সিক সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসা কঠিন কেন?২১ নভেম্বর ২০২৪

৪. আপনার যা সামর্থ্য, তারচেয়ে কম মানের জীবনযাপন করুন। এর মানে হলো, কর্মজীবনের শুরু থেকেই একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক সঞ্চয় গড়ে তোলা। আয়ের অন্তত এক–তৃতীয়াংশ জমানো ও পরবর্তী সময়ে জমানো অর্থ বিনিয়োগ করুন। দ্বিতীয় একটা উপার্জনের উৎস রাখুন। জমানো অর্থ দিয়ে এমন সম্পদ কিনুন, যা থেকে অর্থ আসে।

৫. অন্তত ২–৩ জন বিশ্বস্ত, ভালো বন্ধু তৈরি করুন। কঠিন সময় সহজে কাটিয়ে উঠতে, ভালো স্মৃতি তৈরি করতে ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বন্ধুর বিকল্প নেই।

আরও পড়ুনএই কারণে যে সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, আপনি হয়তো কখনো ভাবেনইনি২৩ জানুয়ারি ২০২৫

৬. পেশাজীবনে এমন কাজ করুন, যেটি আপনার এমনিতেই ভালো লাগে। কথায় বলে, আপনি যখন শখটাকে পেশা বানিয়ে নেন, তখন আপনার অর্থ উপার্জনের জন্য আলাদা করে কাজ করার প্রয়োজন নেই।

৭. ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষা করুন। নীরবে এগিয়ে যান। মনে রাখবেন, যে যেটা জানে না, সে সেটার ক্ষতিও করতে পারবে না।

৮. তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। ১ মিনিট সময় নিন। ১ মিনিট পর ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে দেখা যাবে, আপনি নিজেকে সামলে নিয়েছেন। ‘হিট অব দ্য মোমেন্ট’ বা রাগের মাথায় কিছুই বলবেন না। মনে রাখবেন, বোবার শত্রু নেই।

সূত্র: লিংকডইন

আরও পড়ুনচারটি প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে ধরে নেবেন আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্ক মজবুত১২ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৮০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হবে, যদি আপনি এই ৮ কাজ করেন