পোস্ট-ট্রুথ দুনিয়া: কী দেখছেন আর কী বিশ্বাস করছেন?
Published: 1st, March 2025 GMT
সেদিন একজনের সঙ্গে আলাপ চলছিল। ধার্মিক মানুষ তিনি। ট্রাম্প প্রসঙ্গে এ–কথা সে–কথায় হঠাৎ বললেন, দেখেন, গাজায় ইউএসএআইডির মাধ্যমে ৫০ মিলিয়ন ডলারের কনডম পাঠানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য, মুসলমানদের জন্মনিয়ন্ত্রণ। তারা যাতে সংখ্যায় না বাড়ে, যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
তাঁর সঙ্গে আরও দু–একজন যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও তাল মেলালেন। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম, এটি ভুল পাঠ। তিনি প্রমাণ দেখালেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিত উন্মুক্ত ব্রিফিংয়ে বলেছেন ৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের কনডম পাঠানোর কথা।
বললাম, জানি, এবং নিজেও ব্রিফিং দেখেছি। ৫০ মিলিয়ন ডলার অঙ্কটিই মিথ্যা। তাঁরাও মিথ্যা বলেন। পেছনের উদ্দেশ্য পরে বলব, বুঝবেন। আমার হাতেও প্রমাণ আছে ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে এই খাতে এক ডলার দেওয়া হয়নি। ২০২৩ সালে মাত্র ৪৬ হাজার ডলার বরাদ্দ ছিল। তা–ও জর্ডান এবং পশ্চিম তীরের অগণিত অসংখ্য মানুষ, বিশেষত চালচুলোহীন শরণার্থীদের জন্য। সেগুলো কনডমও নয়, জন্মনিয়ন্ত্রণের ইনজেকশন এবং প্রোজেস্টিন-নির্ভর বড়ি। খুবই দরকারি ছিল মা ও শিশুর জীবন রক্ষার জন্য।
একদিকে অসুস্থ অপুষ্ট মায়েদের সন্তান ধারণে জীবনাশঙ্কা; অন্যদিকে আরও অপুষ্ট, অসুস্থ, বিকলাঙ্গ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা। ফলাফল, বিভীষিকাময় জীবন-যন্ত্রণা। সন্তানদের সুস্থ-সুন্দর, মানবিক ও স্বাভাবিক জীবন দিতে না পারা। আগে কনডম দেওয়া হতো এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়াসহ নানা রকম চর্ম ও যৌনব্যাধির মহামারি রোধ করার জন্য। এই সময়ে এসে এইডসবিরোধী জনসচেতনতা বেড়েছে। ওষুধ-চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে। ফলে মহামারির প্রকোপ কমেছে। তাই কনডম বিতরণের দরকারটিও কমেছে।
যাঁদের বুঝিয়ে বলছিলাম, তাঁরা বুঝতে চাইছেন মনে হলো না। উল্টো নমনীয় ভাষায় ইঙ্গিত করলেন আমি সম্ভবত এনজিওপন্থী বা ইউএসএআইডির সুবিধাভোগী বলে এসব কথাবার্তা বলছি। জানালাম শিক্ষকতার বাইরে আমি অন্য কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্টও নই, সত্য বলতে দ্বিধান্বিতও নই।
হঠাৎই মনে হলো ইউটিউবে কোনো একজন ইসলামি বক্তার ওয়াজেও এ ধরনের অদ্ভুত জনমিতি-জ্ঞানবহির্ভূত ধারণা প্রচার দেখেছিলাম। সেই সময়ও ভাবছিলাম, আমাদের হাতে হাতে মুঠোফোনে-ট্যাবে তথ্যের মহাসমুদ্রে আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি। কিন্তু তথ্যকে কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়, কজনই–বা জানি! আম-মার্কিনদের এক বড় অংশও জানে না। আলাপি ভদ্রলোকের আদলে তারাও বিশ্বাস করে, তৃতীয় বিশ্ব টিকেই আছে মার্কিন দান-খয়রাতের কারণে।
সত্য-উত্তর যুগ বা পোস্ট-ট্রুথ দুনিয়ার ছল বোঝা আসলেই দরকার। একটি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব সাংবাদিকদের মতো খোঁচাখুঁচিপ্রবণ মানুষদের সামনে বসিয়ে চোখে চোখ রেখে নির্দ্বিধায় মিথ্যা বলতে পারছেন কেন? কারণ, নির্জলা মিথ্যাকে বিশ্বাস করার মতো সহজ–সরল মানুষের সংখ্যা চিরকালই অগণিত। তাঁরা আগে যেমন ছিল, এখনো আছে। তারা বিশ্বাসও করবে, সম্মতিও উৎপাদন করবে এভাবে—না, না, আমাদের কষ্টের টাকায় ট্যাক্স দিই, সেই টাকা অন্য দেশে অকাজে খরচ করা যাবে না।
ট্রাম্পের ঘোষণায় বিদেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সাহায্য–সহযোগিতা বন্ধ হয়ে গেছে। ইউএসএআইডিতে আতঙ্ক আর আতঙ্ক। ট্রাম্পের অন্যতম অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারক ইলন মাস্ক বলেই বসেছেন, সংস্থাটি অপরাধী সংগঠন। যুক্তরাষ্ট্রের সময় হয়েছে এটি বন্ধ করে দেওয়ার।
আসলে খলের ছলের অভাব হয় না। ঈশপের গল্পের নেকড়ের ছুঁতো খোঁজার মতো একটি বড়সড় ছুঁতো দরকার ছিল। আগে ইউএসএআইডি যেভাবে ও যত রকম উপায়ে মার্কিন স্বার্থ রক্ষার কাজে লাগত, এখন সেসব উপায়ের সব বিকল্প মিলে গেছে। ফলে সংস্থাটি না থাকলেও কিছু মার্কিন স্বার্থের কিছু যাবে আসবে না।
ইউএসএআইডির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতাই ছিল তৃতীয় বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় উন্নয়ন-সহায়তার মাধ্যম। কেন যুক্তরাষ্ট্র বিলিয়ন ডলার খরচ করত অন্যের দেশের উন্নয়নে? একেবারেই নিঃস্বার্থভাবে দান-দক্ষিণার মাধ্যমে সওয়াব কামানোর জন্য? উত্তর ‘না’। তৃতীয় বিশ্বে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানোর জন্য? উত্তর, মোটেই না। আসলে এটা ছিল একধরনের ‘উইন-উইন’ বন্দোবস্ত। দুই পক্ষেরই যাতে লাভ হয়, সে রকম ব্যবস্থা। ব্যয় বরাদ্দের বড় অংশই আবার স্বদেশে ফেরত যেত মার্কিন কর্মকর্তা-কর্মচারী-পরামর্শকদের বেতন–ভাতা আকারে। মার্কিন নাগরিকদের কর্মসংস্থান হতো।
ইউএসএআইডির কার্যক্রমের কারণে সহায়তা পাওয়া দেশগুলোর সরকার, রাজনীতি, অর্থনীতি, মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, পররাষ্ট্রনীতি—এককথায় সবকিছুই যুক্তরাষ্ট্রবান্ধব ও মুখাপেক্ষী হয়ে উঠত। গরিব দেশগুলোও সমানভাবে লাভবান হতো। দূরদূরান্তরে আর্থসামাজিক উন্নয়নের সক্ষমতার অভাবটুকু ঘুচে যেতে মার্কিন উন্নয়ন-সহযোগিতার মাধ্যমে।
আসলে যুক্তরাষ্ট্রের মূল লাভ কী ছিল? লাভ অসংখ্য। এই স্বল্প পরিসরে শুধু মুখ্য এক-দুটি বিষয় আলাপ সম্ভব। প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ষাটের দশক থেকে শুরু করে নব্বই পর্যন্ত বিশ্বময় রাজনৈতিক স্নায়ুযুদ্ধে মোকাবিলা। পঞ্চাশের দশক থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ে ঢুকে পড়ছিল নানা দেশ। দেশগুলো যাতে সমাজতান্ত্রিক বলয়ে ঢুকে পড়তে না পারে, সে জন্য সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়া ছিল প্রথম উদ্দেশ্য। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহায়তাই ছিল সেরা মারণাস্ত্র।
নব্বইয়ে সমাজতন্ত্রের পতনের পর দরকারটি মিইয়ে গেল। কিন্তু হুট করেই সাহায্য–সহযোগিতা প্রত্যাহার করে নেওয়া যাচ্ছিল না অনেক কারণে। বাজারে নব্য-উদার তত্ত্ব ছাড়া হলো ‘উন্মুক্ত বাজার’ অর্থনীতির। ‘প্রতিযোগিতায় আসো, নিজের পায়ে দাঁড়াও, নিজ সক্ষমতা বাড়াও, বাজার খুলে দাও’ তত্ত্ব। এদিকে আরও কয়েক বছর বা দশক অপেক্ষা করে দেখা দরকার ছিল সমাজতন্ত্রী ভাবধারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে কি না। আস্তে আস্তে নিশ্চিত হওয়া গেল সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ফিরে আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। চীনও নামেই সমাজতন্ত্রী, আদতে বাজার-অর্থনীতিমুখো।
তবু ইতিমধ্যে অসংখ্য দেশের সঙ্গে কয়েক দশকের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ও উন্নয়ন-সহযোগিতার সম্পর্ক ডালপালা শিকড় ছড়িয়ে এতটাই শক্তপোক্ত হয়েছে যে চাইলেই হুট করে পিঠ দেখিয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। হুটহাট উন্নয়ন-সহায়তা তুলে নিলে অবন্ধুসুলভ, অকূটনৈতিক এবং অভব্য অশোভন আচরণের মতোও দেখাত। তা ছাড়া অর্থনীতিতে চমক জাগানো দৌড়ে ছুটে চলছিল জাপান ও চীন। তারা নতুন ধরনের উন্নয়ন-সহযোগিতা দিতে উদার হাতে এগিয়ে আসছিল। কয়েক দশক পর এখন যেহেতু নিশ্চিত হওয়াই গেছে সমাজতন্ত্রও আর হুমকি নয়, চীন-জাপানের উন্নয়ন-সহযোগিতাও সমস্যা নয়, উন্নয়ন-সহায়তা বন্ধ করাই যেতে পারে।
আসলে তার চেয়েও বড় একটি উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের তথ্যভান্ডারের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র’ ধরনের অবস্থান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। প্রয়োজন ছিল সারা বিশ্বের গ্রামগঞ্জের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, শক্তি ও সামর্থ্যের ধরন, দুর্বলতা ও পশ্চাৎপদতার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণী তথ্য জেনে ও সংরক্ষণ করে নিজেদের সমৃদ্ধ রাখা। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকালে এবং আগে-পরে নানা রকম গবেষণা, প্রশিক্ষণ, নিয়মিত মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণযজ্ঞ চলত। প্রতিবেদন হতো। প্রতিবেদনগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের আনাচ-কানাচ বিষয়ক তথ্যের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য দিত।
তথ্য যার, ক্ষমতাও তার। মার্কিন পররাষ্ট্রবিষয়ক সিদ্ধান্ত ও নীতি নির্ধারণেও কাজে লাগত প্রতিবেদনগুলো। তাই উন্নয়ন সহায়তার নামে সশরীর জ্ঞানার্জনের পদ্ধতিটি সেকেলে ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। জিপিএস, স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট, এআই ইত্যাদি প্রযুক্তির ওপর একচ্ছত্র আধিপত্যে বলীয়ান মার্কিন প্রশাসনের জন্য তথ্য পেতে এখন কি-বোর্ডের কয়েকটি খোঁচাই যথেষ্ট। সরাসরি লোকবল অর্থবল বিনিয়োগই বরং অপচয়।
আমার সঙ্গে বাহাসে নামা দুজন যেমন এই সুগভীর প্রেক্ষাপটটি বুঝতে চাননি, আম-মার্কিনরাও তেমনি বুঝতে চায় না। সত্য-উত্তরকালের ভয়াবহ বিপদটি এখানেই। তথ্যসমুদ্রে ছুড়ে দিয়ে যে কাউকেই দিকহারা করে দেওয়া যায়। এভাবেই মার্কিনদের বড় অংশকেও সহজেই বিশ্বাস করানো গেছে এত দিন উন্নয়নশীল দুনিয়া টিকে ছিলে তাদের করের টাকায়।
হেলাল মহিউদ্দীন অধ্যাপক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র ব শ ব স কর র জন য ন র জন ধরন র দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি
স্তন ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে আমরা বুঝি ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় এমন কারণগুলো। এগুলো দুইভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো জেনেটিক কারণ, যেমন ‘বিআরসিএ১’ ও ‘বিআরসিএ২’ জিনে মিউটেশন থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আরেকটি হলো, নন-জেনেটিক কারণ। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি।
‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাহিদ হোসেন। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন। ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এসকেএফ অনকোলজি।
এবারের আলোচনায় মেডিকেল অনকোলজি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও ইমিউন থেরাপিসহ স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পর্বটি গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
ক্যানসার কীভাবে হয়স্তন ক্যানসার এবং এটি হওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান উপস্থাপক। উত্তরে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, আসলে যেকোনো ক্যানসারই হলো শরীরের কোনো সেল বা কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যদি সেই কোষের গ্রোথ অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়, সেটাই ক্যানসার। আর স্তন ক্যানসারও একইভাবে ঘটে—যখন ব্রেস্টের সেলগুলোর আনকন্ট্রোলড গ্রোথ হয়।
স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কাদেরডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত দুই ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসার বেশি দেখা যায়—ডাক্টাল কারসিনোমা, যা দুধ বহনকারী ডাক্টে ক্যানসার হলে। অন্যটি লোবুলার কারসিনোমা, যা ব্রেস্টের দুধ উৎপাদনকারী গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হলে।
নন–মডিফায়েবল কারণগুলো সম্পর্কে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘এগুলো হলো, মেয়েদের অল্প বয়সে অর্থাৎ ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৫৫ বছরের পরে মেনোপজ হওয়া, পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকা। আর মডিফায়েবল কারণগুলো হলো স্থূলতা বা মোটা হওয়া, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৩০ বছর পর সন্তান নেওয়া বা সন্তান না নেওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া। এগুলো এড়িয়ে চললে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।’
প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা–ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয়।
সচেতনতা জরুরিনন-মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে জিনগত ফ্যাক্টর কীভাবে ভূমিকা রাখে? সে ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং কখন থেকে শুরু করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, স্ক্রিনিং আসলে করা হয় স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য, যাদের এখনো ক্যানসার হয়নি—যেন প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা যায়। স্ক্রিনিংয়ের কিছু ধাপ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন, এটি মাসিক শেষ হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পর প্রতি মাসে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিত। তিন আঙুলের সাহায্যে ব্রেস্ট ও বগল ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত কোনো গোটা বা স্রাব আছে কি না। আরেকটি হলো, স্ক্রিনিং মেমোগ্রাম। তিনি বলেন, মেমোগ্রাম ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর করা উচিত। যদি কারও পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, যেমন মা বা বোনের ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার ছিল—তাহলে স্ক্রিনিং আরও আগে থেকে শুরু করা উচিত। আর হাই–রিস্ক গ্রুপের জন্য ‘এমআরআই’ করা যেতে পারে। এই স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াগুলো ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, রোগনির্ণয়, ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা-সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. নাহিদ হোসেন