সার্চ কমিটি গঠনের ছয় মাস পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু এই সময়ে কী সংস্কার হলো ক্রীড়াঙ্গনে?

দৃশ্যমান সংস্কার বলতে দুই ধাপে ১৬টি ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে সরকার, যা মোট ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনের এক-তৃতীয়াংশও নয়। তাহলে ৫২টি ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি ঘোষণায় কত দিন লাগবে বলা কঠিন। শুটিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ফেডারেশনে এখনো অ্যাডহক কমিটি না হওয়ায় খেলাটাই যেন হিমাগারে ঢুকে পড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় পর্যায়ে সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিশনগুলোর নির্দিষ্ট মেয়াদ ছিল। পরে বাড়ানোও হয়। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের সার্চ কমিটির কোনো মেয়াদ নেই। এ কারণে পুরো সংস্কারপ্রক্রিয়া গতি পাচ্ছে না মনে করেন অনেকে।

সেদিক থেকে আলাদা বলা যায় ১৬টি ফেডারেশনকে। ১৪ নভেম্বর প্রথম ধাপের ৯টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা হয়। এগুলো হলো—হকি, ব্রিজ, অ্যাথলেটিকস, স্কোয়াশ, টেনিস, কাবাডি, বিলিয়ার্ড ও স্নুকার, বাস্কেটবল ও দাবা ফেডারেশন। ২৮ জানুয়ারি আরও ৭টি—সাঁতার, টেবিল টেনিস, ভলিবল, কারাতে, ভারোত্তোলন, শরীরগঠন ও ফেন্সিং।

জানা গেছে, সার্চ কমিটি তৃতীয় ধাপে আরও আট-নয়টি ফেডারেশনের প্রস্তাবিত অ্যাডহক কমিটি জমা দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে। এগুলো মন্ত্রণালয় থেকে ‘পাস’ হয়ে আসবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে। কমিটি ঘোষণা নিয়ে এনএসসির সচিব মো.

আমিনুল ইসলাম বরাবরই বলেছেন, কমিটি আসা মাত্রই তিনি ঘোষণা করে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার্চ কমিটির এক সদস্য হতাশা নিয়ে বলছেন, ‘দেখুন, আমাদের কী করার আছে। আমরা কমিটি জমা দিয়ে রেখেছি। সেগুলো ঘোষণা না হলে কাজের গতি ধীর হয়ে যাবে স্বাভাবিক। অথচ এটা ছিল সর্বোচ্চ দুই–তিন মাসের কাজ। একটা বিষয়ের গতি থাকতে থাকতেই সেটা শেষ হওয়া উচিত।’

সার্চ কমিটি সূত্র বলছে, বেশির ভাগ ফেডারেশনের প্রস্তাবিত কমিটি তারা তৈরি করে রেখেছে। তৃতীয় ধাপের ফেডারেশনগুলোর কমিটি ঘোষণা হলে পরেরগুলো জমা দেওয়া হবে। কিন্তু কমিটি ঘোষণায় এত দেরি কেন? জানতে চাইলে সার্চ কমিটির প্রধান জোবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাদের (মন্ত্রণালয়) অনেক ব্যস্ততা আছে। তবে তাঁরাও চেষ্টা করছেন। তারপরও কেন জানি হচ্ছে না। কিন্তু এটা (কমিটি ঘোষণা) দ্রুত হওয়া উচিত।’

এখন পর্যন্ত ক্রীড়াঙ্গনে দৃশ্যমান সংস্কার বলতে কিছু মুখ বদল হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘বঞ্চিত’ অনেকে ফিরেছেন। তখনকার অনেকে এখনো অবশ্য আছেন। কিছু সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠককে সামনে আনা হয়েছে। নতুন এসেছেন অনেকে, বাদ পড়েছেন পুরোনো অনেক মুখ। ফেডারেশনগুলোর জন্য সভাপতি পেতে শুরুর দিকে একটু সমস্যা হলেও সেটা কেটেছে। তাহলে আর বাধা কোথায়? সার্চ কমিটি মনে করছে, সরকার দ্রুত কমিটিগুলো অনুমোদন করলে সংস্কার প্রস্তাবে সময় লাগবে না।

এখন পর্যন্ত সংস্কারের মোড়কে কোনো সুপারিশ বা প্রস্তাব জমা পড়েনি সরকারের কাছে। সার্চ কমিটির সূত্র বলছে, একটা গঠনতন্ত্র করার কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে তারা। কিন্তু সব জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কমিটি এখনো না হওয়ায় গঠনতন্ত্র প্রণয়ন চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।

কবে চূড়ান্ত হবে সব? প্রশ্ন সেটাই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স র চ কম ট র সরক র শনগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গুমের বিচারপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত চায় জাতিসংঘ, ঢাকায় তদন্ত কমিশনের সঙ্গে বৈঠক

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সের (ডব্লিউজিইআইডি) প্রতিনিধিদল গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেছে। সেখানে তাঁরা গুমের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

সোমবার রাজধানীর গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে ডব্লিউজিইআইডির ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোস্কা এবং সদস্য আনা লোরেনা ডেলগাদিয়ো পেরেজের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী তাঁদের স্বাগত জানান এবং কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, কমিশনে অদ্যাবধি গুমসংক্রান্ত ১ হাজার ৮৩০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিশন সব অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করছে।

কমিশনের সভাপতি বলেন, গুমের শিকার হয়ে ফেরত না আসা ১০০ অভিযোগ পুলিশের কাছে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে তিনটি কনসালটেন্সি (পরামর্শ) সভা করা হয়েছে। কমিশন ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দুটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে।

কমিশনের সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, লজিস্টিক, জনবলসংকট ও রাজনৈতিক নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও কমিশন দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে।

ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে কমিশনের আরও দুই সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী ও মো. নূর খান উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কমিশনের কাজের প্রশংসা করেন। তাঁরা গুমের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া গুম থেকে ফেরত না আসা ব্যক্তিদের সন্ধানে সার্চ কমিটি গঠনে করণীয় সম্পর্কে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করাসহ কমিশনের কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতাদানের আশা প্রকাশ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ