চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে নালায় পড়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের কোনো দায় খুঁজে পায়নি সিটি করপোরেশন। এ সংস্থার গঠিত তদন্ত কমিটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের উদাসীনতা ও মায়ের কর্মস্থলের অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।

এর আগে গত বুধবার বেলা তিনটার দিকে নগরের হালিশহরের আনন্দিপুর এলাকার একটি নালায় পড়ে নিখোঁজ হয় হুমায়রা (৩)। বিকেল পৌনে চারটার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এ ঘটনায় ওই দিনই সিটি করপোরেশন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে এক কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়।

হুমায়রা হালিশহরের বাসিন্দা আবদুর রহমান ও আসমা বেগম দম্পতির একমাত্র মেয়ে। তার বাবা আবদুর রহমান একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানিতে কাজ করেন। আর মা আসমা বেগম একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। হুমায়রা যে ভবনের সামনে খেলছিল, সেখানেই তার মায়ের কর্মস্থল।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমিটির প্রধান সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নালায় পড়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের উদাসীনতা বড় কারণ। প্রবল বৃষ্টির সময় ভবনের পাশের নালায় ছিল তীব্র স্রোত—এমন পরিস্থিতিতে মেয়ের প্রতি নজর রাখা উচিত ছিল মায়ের; কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি আরও বলেন, যে ভবনে শিশুর মা কাজ করেন, সেখানে কোনো নিরাপত্তারক্ষী নেই। ফটকও খোলা ছিল। কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) বলেন, ফটক সব সময় বন্ধ থাকে। ওই দিন ভুলবশত তা খোলা ছিল। এ কারণে শিশুটি ভবন থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আর আবাসিক এলাকায় কীভাবে পোশাক কারখানা খোলা হয়েছে, তার কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে।

নালা উন্মুক্ত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, নালাটি সিটি করপোরেশনের নয়, এটি ব্যক্তিগত নালা। যা পরে সিটি করপোরেশনের নালার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নালায় স্ল্যাব দেওয়া ছিল। আর নালাটির প্রশস্ততা মাত্র ১৫ ইঞ্চি। এত ছোট নালা সব সময় উন্মুক্ত থাকে। তাতে কোনো স্ল্যাব থাকে না।

নালায় পড়ে এমন মৃত্যুর ঘটনা এড়াতে সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটি সাতটি সুপারিশ করেছে। উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হচ্ছে—কর্মস্থলে কর্মীদের শিশুদের নিরাপত্তা ও নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা; ভবন নির্মাণে ইমারত বিধিমালা অনুসরণ করা এবং পানিনিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত নালা করা; ব্যক্তিমালিকানাধীন নালায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; আবাসিক এলাকায় কারখানা বা পোশাক কারখানা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনি বিধান নিশ্চিত করা।

নালায় পড়ে মৃত্যু চট্টগ্রাম নগরে এবারই প্রথম নয়, গত ছয় বছরে নগরে খাল ও নালায় পড়ে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে নগরের চাক্তাই খাল থেকে উদ্ধার করা হয় নিখোঁজ শিশু সেহরিশের নিথর দেহ। আগের দিন রাত আটটার দিকে কাপাসগোলার হিজড়া খালে তলিয়ে যায় সে। এসব মৃত্যুর ঘটনায় সিটি করপোরেশন কিংবা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কেউ কখনো দায় নেয়। পরস্পরের প্রতি দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যায় দুটি সংস্থা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ত য র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ