ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল রোববার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে জড়ো হয়েছিলেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতারা। সম্মেলনটির আয়োজক ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

সম্মেলনে ঘণ্টা দুয়েকের আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার পদক্ষেপ নিতে ইউরোপের নেতারা একমত হয়েছেন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়েই এ কাজ করতে চান। আর এ লক্ষ্যে চার দফা পরিকল্পনা করা হয়েছে।

চার দফা পরিকল্পনায় আছে—

ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা চালু রাখা। রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানো অব্যাহত রাখা।

স্থায়ী শান্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যেকোনো শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে অবশ্যই রাখা।

শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ প্রতিরোধে কিয়েভের প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতা বাড়ানো।

শান্তি চুক্তি রক্ষাসহ পরবর্তী সময়ে শান্তির নিশ্চয়তা দিতে ইচ্ছুকদের নিয়ে জোট গঠন করা।

সম্মেলনে আলোচনার মাধ্যমে ইউরোপীয় নেতাদের নেওয়া সিদ্ধান্তকে আপাতত স্বস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকে নজিরবিহীন বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এরপর ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে গতকাল রোববার লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের সম্মেলন হলো।

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।

তবে লন্ডন সম্মেলন ঘিরে আগেই নানা প্রশ্ন, সংশয় তৈরি হয়। যেমন বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সম্মেলনের গুরুত্ব কতখানি? ইউরোপীয় শক্তির এ সম্মেলন কি কূটনৈতিক গতিপথ পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট, নাকি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে?

এসব প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ইউরোপের এখনো ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।

কিয়ার স্টারমার জানান, যুদ্ধ বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশ। এরপর তারা এ পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবে।

ইউক্রেনকে রক্ষা করতে, শান্তির নিশ্চয়তা দিতে আগ্রহীদের নিয়ে একটি জোট গঠন করা হবে বলে জানান কিয়ার স্টারমার। তবে এ প্রক্রিয়ায় কে বা কারা জড়িত হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

কিন্তু যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী শুধু বলেছেন, ইউরোপীয় ও অন্য অংশীদারদের সমন্বয়ে একটি বাহিনী থাকবে।

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইতিমধ্যে বলেছে, তারা রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের মাটিতে নিজেদের সেনা রাখতে আগ্রহী।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন বলেছেন, এর উদ্দেশ্য হলো, সম্ভাব্য আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাকে অত্যন্ত সুরক্ষিত করে তোলা।

ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায়। এই নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ব্যাপারে ট্রাম্পকে রাজি করানোর লক্ষ্যে ইউরোপীয় নেতারা নানা প্রস্তাব সামনে এনেছেন।
ট্রাম্পের অবস্থান হলো, কিয়েভের সঙ্গে ওয়াশিংটনের খনিজ চুক্তি হলে ইউক্রেনে মার্কিন খনি সংস্থাগুলোর উপস্থিতি থাকবে। ইউক্রেনে মার্কিন খনি সংস্থাগুলোর উপস্থিতিই দেশটিতে শান্তি বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ ট্রাম্প আনুষ্ঠানিক কোনো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে অনিচ্ছুক।

তবে ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত নন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ইউরোপে শান্তির জন্য এ প্রচেষ্টায় শক্তিশালী মার্কিন সমর্থন চান।

লন্ডন শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে ইউরোপীয় নেতারা বৈশ্বিক কূটনীতির ক্ষেত্রে কিছুটা নেতৃত্ব নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রকে নিয়েই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একমত ইউরোপ৭ ঘণ্টা আগে

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করার প্রচেষ্টায় এককভাবে ট্রাম্পকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন।

ইউরোপীয়রাও ট্রান্সআটলান্টিক জোট মেরামতের উপায় খুঁজছিল। তবে গত শুক্রবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প-জেলেনস্কির মধ্যকার বাগ্‌বিতণ্ডার পর এ জোটের অবস্থা বেশ ভঙ্গুর দেখাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপীয় মিত্রদের আক্রমণ করেছে। ইউরোপের গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জাতিসংঘে ইউরোপীয় মিত্রদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। এমনকি ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লন্ডন শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন।

কূটনীতিকেরা বলেছেন, ইউক্রেনকে সমর্থনের জন্য ইউরোপীয় নেতাদের স্পষ্ট সংকল্প সম্মেলনে দেখা গেছে।

তবে সম্মেলনে একই সঙ্গে ট্রাম্পের মন জোগানোর একটা চেষ্টাও ছিল। ফলে ইউরোপীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়েই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কাজ করতে একমত হয়েছেন।

আরও পড়ুনলন্ডন সম্মেলনে ইউক্রেনের পক্ষে চার বিষয়ে মতৈক্য১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনসবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, লন্ডন সম্মেলন শেষে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান১১ ঘণ্টা আগে

ইউরোপীয় নেতাদের এমন পরিকল্পনা সত্ত্বেও অনেক কিছু নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার ওপর। অর্থাৎ ইউরোপীয়দের ভাবনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত কি না, এ প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হতে চায় কি না।

কূটনীতিকেরা বলছেন, জেলেনস্কির সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে ইচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে মিশ্র বার্তা পাওয়া গেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা-কাজে সম্পৃক্ত হতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত।

অন্যদিকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেকোনো যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে জেলেনস্কিকে পদত্যাগ করতে হতে পারে।
তাই লন্ডন সম্মেলনের ফলাফল আপাতদৃষ্টিতে জেলেনস্কির সমর্থনে ইউরোপের একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ। ইউক্রেনের জন্য আরও ইউরোপীয় সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, সেটি এখনো অস্পষ্ট। কারণ, ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা জেলেনস্কির প্রতি তাঁদের বিদ্বেষ প্রকাশ করে আসছেন। আর পুতিনের প্রতি তাঁদের আস্থা স্পষ্টতই প্রকাশ পাচ্ছে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি সইয়ে প্রস্তুত ইউক্রেন: জেলেনস্কি৬ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইউক্রেন নিয়ে লন্ডন সম্মেলনের ওপর নজর রাখছে মস্কো১২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউর প য় ন ত দ র ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন র প র য দ ধ বন ধ ন শ চয়ত ইউর প র বল ছ ন র জন য ক জ কর ক টন ত

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোটের রায়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় জামায়াত 

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন,“কমিশনের সুপারিশের আলোকে অবিলম্বে একটা আদেশ জারি চাই। আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট চাই। গণভোটের রায়ের ভিত্তিতে আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই। আমাদের বক্তব্য ও বার্তা স্পষ্ট ও পরিষ্কার।”

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনের চতুর্থ তলায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

বিএনপির জুলাই সনদে ‘না’ বলার সুযোগ নেই: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

৫ দাবিতে ৮ দলের নতুন কর্মসূচি, বৃহস্পতিবার স্মারকলিপি 

কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও আদেশ জারি, গণভোট ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এ সময় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, ড. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আজাদ ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনেকগুলো সেটেল ইস্যু নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানাভাবে ফেসবুকে আংশিক বক্তব্য তুলে ধরে, নিজেদের মনগড়া বক্তব্য রেখে জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় কি না-এমন সংশয় তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই আইনগত ভিত্তির মাধ্যমে। কমিশনের সুপারিশের আলোকে অবিলম্বে একটা আদেশ জারি চাই। আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট চাই। গণভোটের রায়ের ভিত্তিতে আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই। আমাদের বক্তব্য ও বার্তা স্পষ্ট ও পরিষ্কার।”

“আজকের ভেতরেই আদেশ জারি হলে খুবই উত্তম। রাত ১২টা, ১টার মধ্যেও আদেশ জারির নজির আছে। যদি কোনো কারণে আজকে না হয় তাহলে অবশ্যই আগামীকাল আদেশ জারি করতে হবে। আর দেরি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি দেরি হয় তাহলে জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। এজন্য সরকার ও যারা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন তারা অবশ্যই জাতির কাছে দায়ী থাকবেন,” বলেন তিনি। 

এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সুস্পষ্ট তিনটি অঙ্গীকার ছিল উল্লেখ করে আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “একটি হচ্ছে- সংস্কার করা হবে। এটা ছিল এই অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র অর্জন। বাকিগুলো তো অন্যান্য স্বাভাবিক সরকারের মতোই করছে। এটাকেই যদি প্রতিষ্ঠিত ও বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে এটা খুব কার্যকর হবে, যা পুরো জাতির প্রত্যাশিত। এটি সম্ভব হলে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তে পদার্পণ করবে। এই সংস্কারের প্রস্তাবনায় যেগুলো আছে, তার মাধ্যমে এদেশে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবর্তন সাধিত হবে, যাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলছি।”

তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের অনেকগুলো প্রস্তাবনার ওপর আলোচনা শেষের সামারাইজ শেষে সক্রিয় ৩১টি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। কোনো কোনো দলের নেতারা বলছেন, একটি দলের এজেন্ডা নাকি বাস্তবায়ন করছে ঐকমত্য কমিশন। এটার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, কমিশনের এজেন্ডায় যা ছিল, তাই নিয়েই শুধু আলোচনা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা নিয়ে আলাদা করে আলোচনা কমিশন করেনি।”

“আমরাও অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু ঐকমত্য কমিশন রাখেনি, অনেকগুলো পয়েন্টে আমাদের দ্বিমত ছিল, পরে আলোচনা সাপেক্ষে একমত হয়েছি। চিন্তায় অনেকের পরিবর্তন এসেছে। অফিসিয়ালি ও আনঅফিশিয়ালি অনেক বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে।”

শেষ পর্যন্ত এনসিপি ছাড়া সব দল সনদে স্বাক্ষর করেছে জানিয়ে তাহের বলেন, “কমিশন তো চেষ্টা করেছে শতভাগ একমত করার জন্য। ৬০/৬৫টি সংস্কার প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি। আবার কিছুতে শতভাগ হয়নি, তবে ৯০, ৮০ শতাংশ একমত ছিল। যেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা ৭৫ শতাংশের নিচে না। সুতরাং এখন যে দলটি বিরোধিতা করছে, তাদের দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াও তো একই। কারণ, মেজরিটি যে দিকে যাবে, সেদিকেই তো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। সারা দুনিয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া তো একই-মেজরিটির মতই ঐকমত্য।”

তাহের প্রশ্ন রাখেন, “তিন-চতুর্থাংশ মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সেখানে কোনো কোনো দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। এর মানে কী? একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, কিন্তু আমি একমত নই। হাইকোর্টের রায়ে কিন্তু এমন হয়-তিনজন বিচারপতির মধ্যে দুজন রায়ে একমত হলেও একজন ভিন্নমত দিতে পারেন। তাতে করে রায় তো ভিন্ন হয় না। যেমন, আমাদের রেজিস্ট্রেশন ছিল না-হাইকোর্টের এমন রায়েই। এটা খুব সাধারণ বিষয়। এরপরও একটা দল বলছে, তাদের নোট অব ডিসেন্ট নাকি গণভোটে পাঠাতে হবে। এটা করতে গেলে তো প্রতিদিন একটা করে গণভোট করতে হবে। কারণ, সব দলেরই তো পয়েন্টে পয়েন্টে মতভেদ ছিল। সুতরাং প্রতিদিন গণভোট সম্ভব না। এসব বলা হচ্ছে কঠিন বক্তব্যের আড়ালে ধোঁয়াশা তৈরি করা, জনগণকে আসল কথা বুঝতে না দেওয়া।”

“একটা দল বলছে, এটা নাকি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। সব দলের ঐক্যের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দিয়েছিল, তা জনগণের প্রত্যাশা ও চিন্তার প্রতিফলন। এর বিপরীতটাই হচ্ছে জনগণের চিন্তার সঙ্গে ভিন্নতা,” যোগ করেন তিনি।

তাহের বলেন, “আমরা জামায়াতে ইসলামী সবসময় চেষ্টা করি ও সাবধান থাকি যাতে কঠিন বাক্যবাণে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি না ঘটে, রাজনীতিতে অসুন্দর, অসহিষ্ণু, অগ্রহণযোগ্য পরিবেশ যাতে তৈরি না হয়। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং দরকার, সেটা ক্ষুণ্ণ করা যাবে না।”

গণভোট প্রসঙ্গে তাহের বলেন, “গণভোট হচ্ছে যে সংস্কারে চার্টার তৈরি হয়েছে সেটার ওপর। আর জাতীয় নির্বাচন ভিন্ন সাবজেক্ট। জাতীয় নির্বাচনের কাজ হলো জনপ্রতিনিধি ঠিক করা, রাষ্ট্র গঠন করা, সরকার গঠন করা। গণভোট হচ্ছে রিফর্মকে বৈধতা দেওয়া। এরকম দুটো বিষয়কে একসাথে করে জগাখিচুড়ি করার তো কোনো মানে হয় না। এতে করে আগামী নির্বাচনের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে একেবারে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করতে চাই- কোনো ভেজাল মিশ্রিত করতে চাই না বা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করতে চাই না। আমরা সে ধরনের পরিবেশ চাই।”

তাহের বলেন, “সামনে আমরা ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন চাচ্ছি সকলে মিলে। তাহলে সামনে দুটি নির্বাচন-একটা জাতীয় নির্বাচন, আরেকটা গণভোট। প্রত্যেকটা দিনই এখন গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ‘এটা মানি, এটা মানি না’। এর মধ্যে সরকার কিভাবে থমকে আছে, কেন যে চুপ হয়ে আছে আমরা জানি না। সময়ক্ষেপণ তো হচ্ছে। এভাবে চলতে চলতে চালাকি করে এমন এক জায়গায় গেলে তখন বলবেন, ‘আর তো সময়ই নেই’। তাহলে এটাও তো এক ধরনের প্রতারণা, সুকৌশলে একটি সমস্যা তৈরি করার ষড়যন্ত্র বা অপকৌশল হিসেবে এটা বিবেচিত হবে।”

আগামী নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে-এমন কোনো ইস্যু সামনে এনে সময়ক্ষেপণ করে স্বল্প সময়ের ভেতরে রাজনৈতিক অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তাপ এবং সংশয়, আস্থাহীনতার পরিবেশ যাতে তৈরি না হয়, সেই চেষ্টা করার অনুরোধ জানান তিনি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
  • যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান: তুরস্ক
  • গণভোটের রায়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় জামায়াত