১৭নং ওয়ার্ডের বেপারী গলিতে রমরমা মাদক ব্যবসা
Published: 3rd, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ শহরের ১৭ নং ওয়াডের পাইকপাড়া অবস্থিত বেপারীগলিতে মাদক ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে রক্ষকদের ম্যানেজ করে রমরমা মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে মাদক ব্যবসায়ীদের রমরমা ব্যবসা।
সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় মাদক ব্যবসা। আর গভীর রাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাদক সেবীরা ভিড় জমায় এই গলিতে। আর প্রকাশ্যে ঘুরে ঘুরে মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।
১৭নং ওয়ার্ডের এলাকাটি নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সন্নিকটে হলেও অদৃশ্য কারণে প্রশাসনের নজরের বাহিরে রয়েছে। এলাকাটিতে মাদক ব্যবসায়ীদের সয়লাব আর সেই সঙ্গে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই, রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা, প্রায় সময়েই চলে কিশোর গ্যাংয়ের দেশীয় অস্ত্রের মহড়া।
১৭নং ওয়ার্ডের বেপারীগলিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, মাদক ব্যবসায়ী ফিরোজ ও কালুর তত্ত্বাবধানে চলছে মাদকের রমরমা মাদক ব্যবসা। এই মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবীদের কারণে আমরা ভয়ে রাতে বের হতে পারিনা। রাতে আমাদের বাসা থেকে বের হওয়া যেন দিনে দিনে দুষ্কর হয়ে পড়ছে।
তারা এখন আবার নতুন করে মাদক ব্যবসাকে আরও গতিশীল করার জন্য এখন সরকারি রাস্থায় গেট লাগানোর পায়তারা করছে। আর এলাকার অনেকেরই সাথে কথা বলতে গেলে সবাই ভয়ে এড়িয়ে যায়।তাদের এড়িয়ে যাওয়াতে স্পষ্ট বুঝা যায় এই মাদক ব্যবসায়ীদে পিছনে অনেক বড় শক্তি কাজ করছে।
এদিকে এলাকাবাসী জানায়, মাদক ব্যবসা নির্বিঘ্নে করার জন্য সরকারী রাস্তায় গেট বসানোর পায়তারা করছে।গলির মানুষের নিরাপত্তার কথা সামনে এনে মাদক ব্যবসা নির্বিঘ্নে করার জন্যই সরকারী রাস্তায় গেট বসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ বিগত সময়গুলোতে এখানে কোন গেট ছিল না। তখন তো গলির মানুষের কথা চিন্তা করে নাই ।
হঠাৎ এতদিন পর কেন তারা গেট লাগাতে চাচ্ছে। যদি গেট লাগানো খুব বেশি প্রয়োজন মনে করে তাইলে সবাই সবার বাড়ির মধ্যে গেট লাগাতে পারত। কিন্তু জনগনের চলাচলের রাস্তায় গেট লাগিয়ে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলতে চাইতাসে কিছু মানুষ।
মুলত মাদকের জমজমাট ব্যবসা কোনপ্রকার ঝামেলা ছাড়া করার জন্যই এই গেট দেয়ার পায়তারা করসে একটি চক্র। এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী এলকাবাসী।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।