শেখ পরিবারের নাম আরও ২৯ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাদ
Published: 3rd, March 2025 GMT
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা আরও ২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারির প্রজ্ঞাপনে ২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল।
রোববারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা, ২০২৩ অনুযায়ী ২৯টি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হলো। বিদ্যালয়গুলো হলো—বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদারগঞ্জ, জামালপুরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে লালডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদারগঞ্জ, জামালপুর, বেতাগা বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদারগঞ্জ, জামালপুর পরিবর্তন করে বেতাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদারগঞ্জ, জামালপুর, মুজিবনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুজিবনগর, মেহেরপুরের পরিবর্তিত নাম ভবেরপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুজিবনগর, মেহেরপুর, চর কচ্ছপিয়া শেখ রাসেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলার পরিবর্তিত নাম দ্বীপাঞ্চল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলা, আলহাজ্ব নুরুন্নবী চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলার পরিবর্তিত নাম মধ্য রায়রাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলা, ফারজানা চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলার পরিবর্তিত নাম দক্ষিণ সাতানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলা, ফারজানা চৌধুরী রতনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলার পরিবর্তিত নাম রমাগঞ্জ কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলা, পূর্ব ফুলবাগিচা ফারজানা চৌধুরী (রত্না) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলার পরিবর্তিত নাম পূর্ব ফুলবাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলা, ফজিলাতুননেছা সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, তজুমদ্দিন, ভোলার পরিবর্তিত নাম তজুমদ্দিন আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তজুমদ্দিন, ভোলা, গোলকপুর ফজলুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তজুমদ্দিন, ভোলার পরিবর্তিত নাম গোলকপুর হাটখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তজুমদ্দিন, ভোলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, আছে দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা৮ ঘণ্টা আগেবঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেটের পরিবর্তিত নাম গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট, শালকোনা হাসিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহের পরিবর্তিত নাম মধ্য শালকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ, মাসকান্দা শেখ রাসেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারাকান্দা, ময়মনসিংহের পরিবর্তিত নাম পশ্চিম মাসকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারাকান্দা, ময়মনসিংহ, উত্তর লালখান বাজার শেখ রাসেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডবলমুরিং, চট্টগ্রামের পরিবর্তিত নাম উত্তর লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডবলমুরিং, চট্টগ্রাম, বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চান্দগাঁও, চট্টগ্রামের পরিবর্তিত নাম বাকলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম, চান্দি বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিবর্তিত নাম চান্দি উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দীর্ঘভূমি বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লার পরিবর্তিত নাম দীর্ঘভূমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা, ১৬২ নম্বর বঙ্গবন্ধু মাহপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জের পরিবর্তিত নাম শাপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ, ১৭৯ নম্বর শেখ ফজলুল হক মনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ সদর, গোপালগঞ্জের পরিবর্তিত নাম ঝিনুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ সদর, গোপালগঞ্জ, ২১৪ নম্বর বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ সদর, গোপালগঞ্জের পরিবর্তিত নাম শিউলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ সদর, গোপালগঞ্জ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন২৭ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শেখ পরিবারের নাম বাদ৮ ঘণ্টা আগে৭০ নম্বর বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জের পরিবর্তিত নাম বকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ৪৯ নম্বর গিমাডাঙ্গা মধ্যপাড়া শেখ ফজিলাতুননেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জের পরিবর্তিত নাম কদম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ৫৯ নম্বর শেখ কামাল স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জের পরিবর্তিত নাম গোলাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ৪৩ নম্বর কুশলী শেখ মোশাররফ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জের পরিবর্তিত নাম শিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ৪৮ নম্বর কাজীপাড়া সরদারপাড়া এস এম মুসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জের পরিবর্তিত নাম বেলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ৬৬ নম্বর খান সাহেব শেখ মোশাররফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জের পরিবর্তিত নাম টগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ১৯৬ নম্বর শেখ রাসেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জের পরিবর্তিত নাম দোয়েল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, সিরাজগঞ্জের পরিবর্তিত নাম যমুনা সেতু পশ্চিম পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, সিরাজগঞ্জ এবং দক্ষিণ দেশীবাই বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জলঢাকা, নীলফামারীর পরিবর্তিত নাম দক্ষিণ দেশীবাই স্বপ্নের সিঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জলঢাকা, নীলফামারী করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুনআজ থেকে ৪০ দিনের ছুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে০২ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনশেখ পরিবারের নাম ১১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাদ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনশেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত১৬ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ খ পর ব র র ন ম শ খ র স ল সরক র গ প লগঞ জ সদর ব র হ মণব ড় য় ম দ রগঞ জ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে
জিল হোসেনের ৭২ বছরের জীবনের ৪৭ বছরই কেটেছে আইনি লড়াইয়ে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা পাসের সনদ পেতে, এরপর ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাঁর এই দীর্ঘ লড়াই। লড়াই এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যেই মারা গেছেন জিল হোসেন।
জিল হোসেনের মৃত্যুর পর তিন বছর ধরে লড়াইটা করে যাচ্ছেন স্ত্রী ও তাঁর সন্তানেরা। কিন্তু পরিবারটির বিচারের অপেক্ষা শেষ হয়নি।
পরিবার ও মামলার নথিতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, জিল হোসেনের জন্ম ১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি। ১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষে তিনি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের (কৃষি) পরীক্ষার্থী ছিলেন। এই পরীক্ষা হয় ১৯৭৩ সালে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ফলাফলে তাঁকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে। ফলাফল পুনর্বিবেচনা চেয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আবেদন করেন জিল হোসেন। কিন্তু সেই আবেদনে কাজ হয়নি।
১৯৭৫ সালে জিল হোসেন আবার পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এসবের প্রতিকার চেয়ে ১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহের প্রথম মুনসেফ আদালতে তিনি মামলা করেন। মামলায় তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর প্রাপ্ত নম্বরের (১৯৭৩ সালে দেওয়া পরীক্ষায়) সঙ্গে ভগ্নাংশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নম্বরের সঙ্গে ভগ্নাংশ যোগ না করে তাঁকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে।
সেই আইনি লড়াইয়ের শুরু। নিম্ন আদালত পেরিয়ে বছরের পর বছর উচ্চ আদালতেও ছুটেছেন তিনি। সিরাজগঞ্জ সদরের চিলগাছা গ্রামে পরিবার নিয়ে থাকতেন জিল হোসেন। ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। সংসারে স্ত্রী এবং চার ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। আইনি লড়াই নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান জিল হোসেন। এর পর থেকে মামলায় পক্ষ হয়ে তাঁর স্ত্রীসহ উত্তরাধিকারীরা লড়াই করে যাচ্ছেন।
বাবা উচ্চ আদালতের রায় দেখে যেতে পারেননি। বাবা নেই, বুকে চাপা কষ্ট হয়। বাবার কাছে শুনেছি, মামলা চালাতে গিয়ে জমিসহ অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বাবার জীবন ধ্বংস হয়েছে, আমাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।নূর হোসেন, বাদী জিল হোসেনের ছোট ছেলেজিল হোসেনের ছোট সন্তান নূর হোসেন গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা উচ্চ আদালতের রায় দেখে যেতে পারেননি। বাবা নেই, বুকে চাপা কষ্ট হয়। বাবার কাছে শুনেছি, মামলা চালাতে গিয়ে জমিসহ অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বাবার জীবন ধ্বংস হয়েছে, আমাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুনশিক্ষাসনদ নিয়ে ৪৮ বছরের আইনি লড়াই: ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রায় বাস্তবায়নে বাধা নেই০৮ অক্টোবর ২০২৩নূর হোসেন আরও বলেন, ‘মা এবং ভাইবোনেরা এখন মামলা চালাচ্ছি। মায়ের বয়স ৬৯ বছর। তিনিও নানা রোগে ভুগছেন। তিনিও চূড়ান্ত রায় দেখে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভ টু আপিল এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে। বাবা মারা যাওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো অনুশোচনা নেই, এটা কষ্টের।’
আইনি লড়াই
জিল হোসেন যখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (কৃষি) দ্বিতীয় পর্বের চতুর্থ বর্ষের পুরোনো পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত পরীক্ষার্থী ছিলেন, তখন তাঁর বয়স ২৩ বছর। ময়মনসিংহের মুনসেফ আদালতে করা মামলায় জয়ী হন তিনি। আদালত ১৯৭৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ভগ্নাংশ নম্বর যোগ না করে তাঁকে অকৃতকার্য করাকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।
তবে জিল হোসেনের লড়াই তখনো বাকি। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জজ আদালতে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ৩১ জানুয়ারি এই আদালতের দেওয়া রায়েও জিল হোসেনের বহিষ্কারাদেশ বেআইনি ঘোষণা করা হয়।
একই বছর হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্ট ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য প্রথম মুনসেফ আদালতে পাঠান। এরপর ১৯৭৮ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রথম মুনসেফ আদালত ভগ্নাংশ নম্বর যোগ করে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুনসেবাদাতা বা গ্রহীতাদের সন্তুষ্টির মূল্যায়ন হয়নি২৮ এপ্রিল ২০২২এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার জেলা জজ আদালতে আপিল করে, যা নামঞ্জুর হয়। পরে হাইকোর্টে আপিল করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর ওপর ১৯৮৩ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় দেওয়া হয়। এ রায়ে বিচারিক আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
অতঃপর সনদ, ক্ষতিপূরণ মামলা
পরিবার ও মামলাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাইকোর্টের রায়ের পর ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিল হোসেনের একটি আবেদন গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তাঁকে পাস নম্বর দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর নম্বরপত্রের সনদ দেওয়া হয়। তখন জিল হোসেনের বয়স ৪৭ বছর। তখন তাঁর সরকারি চাকরির বয়সসীমা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
লিভ টু আপিল বিচারাধীন উল্লেখ করে একের পর এক সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টর স্থগিতাদেশ না থাকায় মামলা চলতে আইনগত বাধা নেই। অথচ মামলাটি চলছে না, যা জিল হোসেনের পরিবারের জন্য ভোগান্তির।চঞ্চল কুমার বিশ্বাস, বাদীপক্ষের আইনজীবীএরপর ২০০০ সালের ১৮ অক্টোবর ক্ষতিপূরণ দাবি করে অধস্তন আদালতে মামলা করেন জিল হোসেন। মামলায় অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের রায় ১৪ বছর ৯ মাস পরে কার্যকর করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কাজে তাঁর জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে সরকারি চাকরির সম্ভাবনাও।
ক্ষতিপূরণের এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৬ আগস্ট রায় দেন ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ কোটি টাকা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৪ বছর পর নিষ্পত্তি
বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৪ জুন হাইকোর্ট শর্ত সাপেক্ষে ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ স্থগিত করেন। শর্ত হিসেবে ২ কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ২৫ লাখ টাকা ৩ মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয়। এতে ব্যর্থ হলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে বলেও ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবী জানান, জিল হোসেন মারা যাওয়ার পর আপিল শুনানির জন্য উঠলে ১৩ বছর আগে হাইকোর্ট ২ কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা সামনে আসে। এ অবস্থায় হাইকোর্ট আপিলকারী পক্ষকে ২৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে আসতে বলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে ৪ নভেম্বর ওই অর্থ জমা দেয়।
বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন থাকলে নিম্ন আদালতে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তও আছে। আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নিয়োগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবীবিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা আপিল খারিজ করে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় সংশোধন সাপেক্ষে বহাল রাখেন হাইকোর্ট। রায়ের দিন থেকে ওই অর্থের বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে তারা (জিল হোসেনের পরিবার) লভ্যাংশ পাবেন বলেও জানানো হয়। অবশ্য এর আগে শর্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জমা করা ২৫ লাখ টাকা ওই অর্থ থেকে বাদ যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভ টু আপিল
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে লিভ টু আপিল করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনটি ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে সেদিন তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন। লিভ টু আপিল ক্রম অনুসারে শুনানি হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় লিভ টু আপিলটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের গত ৩১ আগস্টের কার্যতালিকায় ৫০৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
জিল হোসেনের পরিবারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি পরিচালনার জন্য ২০২৩ সালের ৯ মার্চ আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস নিয়োগ পান। তাঁকে নিয়োগ দেয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। চঞ্চল কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ন আদালতে অর্থ আদায়ে জারি মামলার (২০০৯ সালে করা) কার্যক্রম অগ্রসরের জন্য বাদীর উত্তারাধিকারীকারেরা আবেদন করেন।
আরও পড়ুনসনদ ও ক্ষতিপূরণের জন্য ৪৭ বছরের আইনি লড়াই ১৭ ডিসেম্বর ২০২২চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, লিভ টু আপিল বিচারাধীন উল্লেখ করে একের পর এক সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ না থাকায় মামলা চলতে আইনগত বাধা নেই। অথচ মামলাটি চলছে না, যা জিল হোসেনের পরিবারের জন্য ভোগান্তির।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নিয়োগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন থাকলে নিম্ন আদালতে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তও আছে। আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।’
আরও পড়ুন৩৩ বছর কেটে গেছে, কাজল কথা রেখেছেন০৫ আগস্ট ২০২৫