গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে দুজন নিহত
Published: 4th, March 2025 GMT
ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ফিলিস্তিনের রাফা শহরে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। আর গাজার খান ইউনিসে আরও তিনজন আহত হয়েছেন। ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করার পর ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কা বেড়েছে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে গত জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় কার্যকর হয়। এর মেয়াদ সপ্তাহান্তে শেষ হলেও যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটা এখনো অনিশ্চিত।
হামাস বলেছে, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় এখনই কার্যকর করা উচিত। এর মধ্য দিয়েই গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের অবসান নিশ্চিত করা যাবে। অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি এপ্রিল পর্যন্ত সাময়িক বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধে জাতিসংঘ ও আরব দেশের নিন্দা০৩ মার্চ ২০২৫হামাসের কর্মকর্তা ওসামা হামদান গতকাল সোমবার বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ বাড়াতে ইসরায়েলের দাবি সামগ্রিক অগ্রগতিকে শূন্যের কোঠায় ঠেলে দিচ্ছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে ওসামা হামাদান বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে রুখতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে যেকোনো উদ্যোগ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে এবং চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সম্পূর্ণ দায়িত্ব এর মধ্যস্থতাকারী ও জামিনদারদের।
আরও পড়ুনরোজার মধ্যেই গাজায় সব ধরনের ত্রাণ ও পণ্যের প্রবেশ বন্ধ করে দিচ্ছে ইসরায়েল০২ মার্চ ২০২৫ইসরায়েলের দুজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, চুক্তির মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েলের কাছে অচলাবস্থা নিরসনের জন্য আরও কয়েক দিন সময় চেয়েছেন।
টানা ১৫ মাস ধরে চলা সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসবাসকারী ২৩ লাখ গাজাবাসীকে টিকিয়ে রাখার জন্য খাবার, জ্বালানিসহ সব পণ্যের সরবরাহের ওপর গত রোববার পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে ইসরায়েল।
ফলে মিসর সীমান্তে গাজায় প্রবেশের জন্য পণ্যবাহী শত শত লরি আটকে রয়েছে। এসব যানবাহনকে গাজায় ঢুকতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এ পরিস্থিতিতে গাজার বাসিন্দারা বলছেন, নতুন সরবরাহের প্রত্যাশায় সেখানকার দোকানগুলো খালি করে ফেলা হয়েছিল। এখন সরবরাহ আটকে দেওয়ায় রাতারাতি আটার বস্তার দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে।
আরও পড়ুনরমজানে গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবে রাজি ইসরায়েল০১ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর অনুমোদন ইসরায়েলের০২ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।