কক্সবাজারের টেকনাফে বন্ধুত্বের ফাঁদে পড়ে অপহৃত দুইজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় মুক্তিপণের টাকাসহ অপহরণ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হলিদাবাগ এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে মো. সবুজ মামুন (৩০) এবং তার ভাইয়ের ছেলে মেহেদী হাসান টিটু (৩০) টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আবদুল আমিনের সঙ্গে দুই বছর ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ছিলেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আমিনের আমন্ত্রণে মামুন ও টিটু টেকনাফে বেড়াতে আসেন। 

আবদুল আমিন পূর্বপরিকল্পিতভাবে দুই বন্ধুকে রোহিঙ্গা অপহরণ চক্রের হাতে তুলে দেন। এরপর তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে নির্যাতন করার ভিডিও পাঠিয়ে মামুনের স্ত্রীর কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হলেও তাদের মুক্তি মেলেনি।

আরো পড়ুন:

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝিকে কুপিয়ে হত্যা

গহীন পাহাড়ে অপহরণকারীদের আস্তানা, উদ্ধার ১১ নারী ও শিশু

তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় ২ মার্চ মামুনের বোন সুলতানা বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর পুলিশ তদন্ত শুরু করে। প্রযুক্তির সহায়তায় টেকনাফের একটি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে গত ২ মার্চ অপহৃত দুইজনকে উদ্ধার এবং অপহরণ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে খোরশেদ আলম (৩৫), হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মো.

ইউসুফ (৩০), মৌলভীবাজার এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. ফয়সাল (১৯)।

পুলিশের তথ্যমতে, টেকনাফ ও উখিয়ায় অপহরণের ঘটনা বাড়ছে। গত ১৪ মাসে টেকনাফ থেকে ২৪০ জন এবং উখিয়া থেকে ৮৭ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে টেকনাফের জাহাজপুরা এলাকায় ইজিবাইক চালক মোহাম্মদ ফারুক (১৬) অপহৃত হন। এখনো তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, টেকনাফ ও উখিয়ায় অপহরণ চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ ধ র অপহরণ এল ক র অপহ ত

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ

পরাজয়ের গ্লানি থেকে গর্বের গাঁথায় ফেরার গল্প যখন লেখা হয়, সেখানে একজন নায়ক থাকেন। এইবার সেই নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সিলেটের লজ্জাজনক হার ভুলিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াল মেঘ ফুঁড়ে রোদ ওঠার মতো। অলরাউন্ড মিরাজের ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়ানো আর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত জিম্বাবুয়ে। ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।

প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে কোনো সুযোগই দেয়নি বাংলাদেশ। তাইজুল ও নাঈম ইসলামের নির্ভুল বোলিংয়ে মাত্র ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। এরপর ব্যাট হাতে পাল্টা জবাব দেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সাদমান ইসলামের ধারাবাহিকতা আর মিরাজের সংগ্রামী সেঞ্চুরিতে দল পৌঁছে যায় ৪৪৪ রানে। নেয় ২১৭ রানের লিড।

সাদমান তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি, কিন্তু ম্যাচের মূল চিত্রনাট্য লিখলেন মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকে তিনি ছিলেন নির্ভার, নিবেদিত এবং নিখুঁত। ১৪৩ বলের ইনিংসে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো তার ১০৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস শুধু দলীয় সংগ্রহে রানের সংযোজন ছিল না, ছিল প্রতিরোধ আর প্রতিশোধের প্রতীক।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করে মুজারাবানির ইতিহাস

ইনিংস ব‌্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বদলা নিলো বাংলাদেশ

তাইজুলের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে গড়েন ৬৩ রানের জুটি। এরপর তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে নবম উইকেটে যোগ করেন আরও ৯৬ রান। তানজিম নিজেও খেলেন ৪১ রানের কার্যকর ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ যখন আউট হন, তখন স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ—৪৪৪।

প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামা জিম্বাবুয়ের মাসেকসা ১১৫ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে রেখেছিলেন আলোচনার খোরাক।

দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ইনিংস যেন শুরুই হলো পতনের ধ্বনি বাজিয়ে। মাত্র ৮ রানেই পড়ল ২ উইকেট। তাইজুল প্রথমে বোল্ড করলেন ব্রিয়ান বেনেটকে। এরপর এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললেন নিক ওয়েলচকে। স্কোর যখন ৬৯, তখন উইকেট ৫টি। এরপর নাম মাত্র প্রতিরোধ গড়ে বেন কুরান ও ক্রেইগ আরভিন। কুরান করেন সর্বোচ্চ ৪৬ রান, আরভিন ২৫। বাকিরা যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা সারলেন। ১১১ রানে অলআউট হয়ে লজ্জার হার বরণ করে নেয় জিম্বাবুয়ে।

মিরাজ বল হাতেও রচনা করলেন অনন্য মহাকাব্য। ২১ ওভারে ৮ মেডেনসহ মাত্র ৩২ রানে শিকার ৫ উইকেট। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৩তম পাঁচ উইকেট শিকার। তাকে দারুণ সহায়তা দেন তাইজুল, ৩টি উইকেট নেন ৪২ রানে। নাঈম ইসলামের ঝুলিতে যায় ১ উইকেট।

একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফাইফার, এমন কীর্তির সাক্ষী হওয়া সবসময় ঘটে না। মেহেদী হাসান মিরাজ সেই বিরল অর্জনের মালিক হয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, দুই টেস্টে মোট ১৫ উইকেট ও একটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে সিরিজ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই।

চট্টগ্রামে এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু সিরিজে সমতা ফেরায়নি, সিলেটের ক্ষতচিহ্নও কিছুটা মুছে দিয়েছে। মিরাজের ব্যাট-বলের বীরত্বে লেখা হলো এক প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য—যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেট আবারও প্রমাণ করেছে, তারা হার মানে না, হারিয়ে দিতে জানে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • আগারগাঁওয়ে সেনা অভিযানে অপহৃত ৪ কিশোর উদ্ধার
  • গাইবান্ধায় বাবা-মাকে মারধর করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ, অভিযুক্ত আটক
  • নওগাঁয় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন
  • অপহরণে বাঁধা দেওয়ায় যুবককে গুলি করে হত্যা, আটক ৩
  • মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী
  • অপহৃতকে ছেড়ে দিয়ে পালানোর সময় অস্ত্র ও গুলিসহ অপহরণকারী আটক
  • ছাড়া পেলেন অপহৃত কৃষক, এক অপহরণকারী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার