মিঠুন চক্রবর্তী কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সাময়িক স্বস্তি পেলেন
Published: 5th, March 2025 GMT
অভিনেতা, বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কলকাতায় দায়ের হওয়া মামলায় সাময়িক স্বস্তি পেলেন। গত বছরের ২৭ অক্টোবর কলকাতার সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র মিলনায়তনে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়, এমন কিছু উসকানিমূলক বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ।
ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মিঠুন চক্রবর্তী আমিত শাহর সামনেই ওই বক্তব্য পেশ করেন। সেই বক্তব্যকে সামনে এনে কলকাতার বউবাজার ও বিধাননগর দক্ষিণ থানায় দুটি পৃথক মামলা করেন দুই তৃণমূল সমর্থক।
বউবাজার থানার আবেদনকারীর নাম প্রকাশ্যে না এলেও বিধানগর থানার আবেদনকারীর নাম এসে যায়। আবেদনকারী সল্টলেকের সেক্টর-১–এর বাসিন্দা কৌশিক সাহা। তিনি অভিযোগ করেছেন, বলিউড তারকা ও ভারতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সর্বোচ্চ ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পদক পাওয়া অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী ২৭ অক্টোবর সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র মিলনায়তনে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে কিছু সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। আর সেই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দুটি পৃথক মামলা করেন দুই তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। তাঁরা এই বক্তব্য নিয়ে মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আবেদন জানান।
বিজেপি বলেছে, যদিও তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে তৃণমূল দল বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। অথচ মিঠুন চক্রবর্তীর বক্তব্যের পর তৃণমূলের দুই কর্মী-সমর্থক পৃথকভাবে দুটি মামলা করেছে দুটি থানায়, বউবাজার ও বিধাননগর দক্ষিণ থানায়।
এরপরেই মিঠুন চক্রবর্তী বিধাননগর থানায় দায়েরকৃত মামলা খারিজের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন। সেই মামলার শুনানি শেষে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ গতকাল এক নির্দেশে আগামী ২০ মে পর্যন্ত মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকে। ওই মামলার কলকাতা হাইকোর্ট তদন্ত স্থগিত করে দেন। এবং সব পক্ষের বক্তব্য হলফনামার মাধ্যমে পেশ করার নির্দেশ দেন। এবং আদালতে কাগজপত্র পেশের পর মে মাসে ওই মামলার শুনানি হবে বলে জানিয়ে দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।