‘রাজাকারের ছেলে’ বলায় ঢাবিতে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের ছবিতে আগুন
Published: 5th, March 2025 GMT
অনলাইনভিত্তিক একটি নিউজপোর্টালের টকশোতে এক ছাত্র প্রতিনিধিকে ‘রাজাকারের ছেলে’ ‘আলবদরের ছেলে’ বলার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের ছবিতে অগ্নিসংযোগ করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। বুধবার বিকেলে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে ফজলুর রহমানের ছবিতে আগুন দেন তারা। বিএনপি থেকে তাঁকে বহিষ্কারের পাশাপাশি গ্রেপ্তারেরও দাবি জানানো হয়।
এর আগে অনলাইন টকশো ‘ফেস দ্য পিপল’ এ ছাত্র প্রতিনিধি মিনহাজ উদ্দিনকে বিএনপি নেতা ফজুলর রহমান ‘রাজাকারের ছেলে’ ‘আলবদরের ছেলে’ বলে সম্বোধন করেন। মঙ্গলবার রাতে এই টকশোর ক্লিপস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও তাঁর ছবিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, শেখ হাসিনা ছাত্রদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যা দিয়ে জুলাই গণহত্যা ঘটিয়েছেন, ফজলুর রহমানও তারই পুনরাবৃত্তি করেছেন। জুলাই গণহত্যার শহীদদের দাগ না মুছতেই ফের ‘রাজাকারের ছেলে’ সম্বোধন ছাত্রদের নতুন করে আতঙ্কিত করছে।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ অবিলম্বে ফজুলর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, একজন ছাত্রকে ‘রাজাকারের ছেলে’ বলায় ফজুলর রহমানকে সমগ্র ছাত্রসমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা ফজলুর রহমানের ঘাড়ে চেপেছে। তা না হলে ৫ আগস্টের পর তাঁর দুঃসাহস হতো না আমাদের ছাত্র ভাইকে রাজাকারের ছেলে সম্বোধন করার।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান বলেন, ‘আজকে আমরা ফজলুর রহমানের ছবিতে আগুন জ্বালাচ্ছি। এর কারণ হলো ৫ আগস্টের পরে আমরা যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি তিনি (ফজলুর রহমান) তা মানতে পারেননি। তিনি যেখানে সেখানে বিপ্লবীদেরকে যা মন চায় তা বলে কটাক্ষ করছেন। তিনি ফ্যাসিবাদের সুরে কথা বলছেন। সর্বশেষ একটি টকশোতে একজন ছাত্র প্রতিনিধিকে তিনি রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন। শেখ হাসিনা এই রাজাকারের বাচ্চা বলে জুলাই গণহত্যা ঘটিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।’
কর্মসূচিতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার ও আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় সদস্য তামিম আনোয়ার, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়ামিন সরকার, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব ইসতিয়াক আহমদ ইফাত, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান ও বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আহবায়ক মো: আরিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।
শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।