কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের (সম্মান) ভর্তি ও সেমিস্টার ফি ৪০ শতাংশসহ অন্যান্য বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে স্বাক্ষরনামাসহ এ–সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি উপাচার্য বরাবর জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির থিয়েটার নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের সামনের সড়কে গণস্বাক্ষর নেওয়া হয়।

উপাচার্য বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমাদের জন্য অতিরিক্ত ফি বহন করা কষ্টসাধ্য। বার্ষিক আয় বাড়ানোর কথা বলে শিক্ষার্থীদের ওপর আর্থিক ধকল বাড়ানোর বিষয়টি অমানবিক। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আমরা তাগিদ জানাই। শিক্ষার্থীদের জীবন পরিচালনা সহজ করার জন্য সেমিস্টার ফি ৪০ শতাংশ কমানোর জোর দাবি জানাই। পাশাপাশি স্নাতকে ভর্তি ফি অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে, সেখান থেকেও ৪০ শতাংশ কমানোর দাবি জানাই। একই সঙ্গে বর্ধিত সব ফি কমানোর জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্নাতক প্রথম বর্ষে ফি বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বর্ষে ৫৫০ টাকা। স্নাতকোত্তরে (বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসায় ও আইন) অনুষদের ভর্তির ফি আগে ৭ হাজার ৮০০ টাকা ছিল, সেটি বাড়িয়ে ৮ হাজার ৯০০ টাকা করা হয়েছে। হল ফি ১০০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫০ টাকা। স্নাতকের নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রেও প্রায় দুই হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে।

থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক হান্নান রাহিম বলেন, ‘২০১৮ সালে থিয়েটারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্নাতকোত্তরে ভর্তি ফি কমানো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন খাতে ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে আজকে আমরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। বার্ষিক আয় বাড়ানোর নাম করে শিক্ষার্থীদের ওপর বিপুল অর্থের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ান, শিক্ষার্থীদের ওপর কোনোভাবে জুলুম করবেন না। দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবিগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো.

হায়দার আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপিটি রেজিস্ট্রার বরাবর হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম রকল প কম ন র র জন য বর বর

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ