সৌদিয়া হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের একজন সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা
Published: 7th, March 2025 GMT
রাজধানীর শাহজাদপুরে গত সোমবার সৌদিয়া হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ সাগর (৩২)।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজয়নগর থানার ওসি মো. রওশন আলী।
আরো পড়ুন: রাজধানীতে আবাসিক হোটেলে অগ্নিকাণ্ড, ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার
আরো পড়ুন:
কিশোরগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধে মৃত্যু, আটক ৫
বরিশালে মৎস্য বিভাগের স্পিডবোটের সঙ্গে নৌকার সংঘর্ষ, জেলের মৃত্যু
মারা যাওয়া এমদাদ সাগর বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের মৃত জারু মিয়ার ছেলে। তিনি বিজয়নগর উপজেলার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
ওসি রওশন আলী জানান, গুলশান থানার পুলিশ কল দিয়ে পাসপোর্টের ছবি পাঠিয়েছে। পরে পাসপোর্টে দেওয়া ঠিকানায় পুলিশ পাঠিয়ে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা নেই বলেও জানান ওসি।
নিহতের মামাতো ভাই লিটন মুন্সি জানান, এক মাস আগে সাগর মালয়েশিয়ায় যান। সেখান থেকে শ্রীলংকায় গিয়ে গত ২ তারিখ দেশে এসে সৌদিয়া হোটেলে ওঠেন তিনি। হোটেলে আগুন লাগলে আহত অবস্থায় সাগরকে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাওয়া হয়। গুলশান থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার সাগরের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়।
তিনি আরো জানান, বাড়ির কেউ জানতো না সাগর হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশ জানানোর পর সবাই জানতে পেরেছেন মৃত্যুর বিষয়টি।
সোমবার (৩ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সৌদিয়া হোটেলে আগুনের সূত্রপাত হয়। হোটেল ভবনটি ছয় তলা। দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি দল হোটেলের ভেতরে চারজনের মরদেহ পায়। সবকটি মরদেহ পাওয়া যায় ষষ্ঠ তলায়।
ঢাকা/মাইনুদ্দীন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন ব জয়নগর
এছাড়াও পড়ুন:
নীরব ভালোবাসার আরেক নাম
প্রতিটি সকাল শুরু হয় এক পরিচিত কণ্ঠের ডাক কিংবা শাসনে– যিনি চুপচাপ দায়িত্বের পাহাড় বয়ে বেড়ান, রুক্ষ স্বরে আমাদের জাগিয়ে তোলেন, তাড়াহুড়ো করে স্কুলে পাঠান। আমরা তাঁকে বলি ‘বাবা’। তাঁর চোখে-মুখে থাকে গাম্ভীর্য; কণ্ঠে থাকে কর্তব্যবোধের দৃঢ়তা। অনেক সময় তাঁকে মনে হয় কঠিন, অপ্রকাশ্য, যেন এক জীবন্ত দেয়াল– যার ওপারে আমরা পৌঁছাতে পারি না। অথচ এ মানুষটিই আমাদের জীবনের প্রথম নিরাপত্তার বর্ম, যিনি দিনশেষে সবার অলক্ষ্যে নিঃশব্দ ভালোবাসা ছড়িয়ে যান।
ছোটবেলায় আবেগ মানেই ‘মা’। কাঁদলে যিনি বুকে টেনে নেন, আদর করেন, আবদার শুনে নরম হয়ে যান– তাঁকে ভালোবাসা বোঝাতে কোনো সংকোচ হয় না। কিন্তু বাবা? তাঁকে ভালোবাসা বলা যেন কোনো নিষিদ্ধ চিঠি লেখার মতো। কেন এমন হয়? কেন বাবার চোখে জল মানে দুর্বলতা? কেন তাঁর মুখে ‘আমি ভালোবাসি’ শুনতে পাওয়া প্রায় অসম্ভব?
এর পেছনে আছে সমাজ ব্যবস্থা; যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ‘পুরুষ’ নামক পরিচয়টিকে এক কঠোর কাঠামোয় আটকে রেখেছে। ছোটবেলায় যে ছেলেটি মায়ের পাশে রান্নাঘরে দাঁড়াতে চেয়েছিল, তাঁকে বলা হয়, ‘তুই ছেলে, এগুলো তোর কাজ না।’ যে কিশোর ক্লাসে হেরে গিয়ে কাঁদতে চেয়েছিল, তাঁকে শিখিয়ে দেওয়া হয়– ‘ছেলে হয়ে কাঁদিস কেন?’ এভাবেই একেকটা কোমল হৃদয় পাথর হয়ে যায়, একেকটা প্রাণবন্ত মানুষ হয়ে ওঠে নিঃশব্দ এক ‘পুরুষ’, যিনি পরে হন একজন ‘বাবা’- শক্ত, সংবেদনশূন্য, দায়িত্ববদ্ধ।
এই মানুষটিই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারের জন্য লড়াই করেন। অফিসে মাথা নত করেন, রাস্তায় ঘাম ঝরান, দোকানে গিয়ে সন্তানের জন্য নতুন জামা কেনেন, অথচ নিজের পোশাকটা পুরোনো হয়েই পড়ে থাকে। তিনি হয়তো কখনও মুখ ফুটে বলেন না, ‘আমি ক্লান্ত’; কিন্তু তাঁর চোখের নিচের কালি, হাঁটার ধীরতা, নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাসগুলো বলে দেয় সবটুকু।
সমাজ তাঁকে শিখিয়েছে– ‘তুমি পুরুষ, তোমার ব্যথা নেই, তোমার দুঃখ নেই।’ অথচ তিনিও মানুষ। তাঁরও চোখে জল আসে, বুক চেপে ধরে কষ্ট জমে থাকে, গভীর রাতে সন্তানের পড়া দেখে চুপিচুপি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। সমাজ তাঁকে সেই স্বস্তির জায়গাটা দেয়নি, যেখানে তিনি নিঃসংকোচে বলতে পারেন, ‘আমিও কাঁদি’, ‘আমিও ভালোবাসি’।
আমরা বাবাকে ভয় করি, কারণ তাঁকে আবেগ প্রকাশ করতে দেখিনি। আমরা তাঁর কাছে আবদার করতে ভয় পাই, কারণ শিখে গেছি– ‘বাবা রেগে যাবেন।’ অথচ হয়তো তিনিই সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করেন সন্তানের একটি আদরের ছোঁয়ার জন্য। হয়তো তাঁর বুক ভরে যায় সন্তানের ছোট্ট একটি ‘ধন্যবাদ’ শোনে। এই মানুষটিই রাত জেগে সন্তানের জন্য ওষুধ আনেন, স্কুলে ভর্তি করাতে ভিড় ঠেলে লাইনে দাঁড়ান, বাইরে থেকে ফিরতে দেরি হলে মায়ের কাছে বারবার জানতে চান– ‘ও এসেছে?’
পিতৃতন্ত্র শুধু নারীর নয়, পুরুষেরও কারাগার। এই কাঠামো পুরুষকে আবেগহীন, কঠোর, একতরফা দায়িত্বপ্রবণ রোবটে পরিণত করে। তারা ভুলে যান– সন্তানের কাছে সবচেয়ে বড় উপহার হতে পারে কিছু প্রাণবন্ত সময়, কিছু গল্প, কিছু অনুভবের প্রকাশ।
আমরা যদি নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে পারি; যেখানে ছেলেরা কাঁদতে পারবে, বলতে পারবে ‘আমি ভালোবাসি’; বাবারা সন্তানের সঙ্গে খেলা করবে, রান্নাঘরে গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াবে– তবে হয়তো একদিন বাবাদের মুখেও ফুটে উঠবে সেই উষ্ণতা, যেটি এতদিন সমাজ ছেঁটে ফেলেছিল।
শিশুর জীবনে প্রথম নায়ক তাঁর বাবা। সেই নায়কের চরিত্র যেন শুধু কঠোরতা দিয়ে গড়া না হয়; বরং তাঁর মধ্যে থাকুক সহানুভূতি, অনুভূতি, গভীর ভালোবাসা প্রকাশের সাহস। বাবা যেন শুধু ছায়ার মতো না থাকেন, তিনি যেন হন আলো– যে আলো সাহস দেয়, ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয়।
এই বাবা দিবসে আসুন আমরা বাবাদের সেই জায়গাটা দিই– যেখানে তারা কাঁদতে পারেন, হাসতে পারেন, ভালোবাসতে পারেন। বাবা যেন একজন নিঃশব্দ সহযোদ্ধা না হয়ে হন একজন প্রকাশ্য ভালোবাসার মানুষ। আসুন, পিতৃতন্ত্রের তৈরি এই শৃঙ্খল ভেঙে বাবাদের ফিরিয়ে দিই তাদের মানবিকতা। ভালোবাসার ভাষায় উজ্জীবিত হোক বাবারা। v