ইফতার উৎসবে রাবি শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
Published: 9th, March 2025 GMT
পবিত্র রমজানের স্নিগ্ধতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) যেন এক অন্য ভুবনে পরিণত হয়েছে। শহীদ মিনার থেকে জুবেরি মাঠসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণায় বিরাজ করছে ইফতারের এক উৎসবমুখর পরিবেশ। শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে ইফতারে মিলিত হচ্ছেন, যা ক্যাম্পাসে তৈরি করেছে এক আনন্দঘন পরিবেশ।
বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, জেলা ও উপজেলা সংগঠন, এমনকি হলভিত্তিক বিভিন্ন দলও এ ইফতার আয়োজনে শামিল হচ্ছে। প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় মসজিদেও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা, যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী একসঙ্গে ইফতার করছেন।
শনিবার (৮ মার্চ) সরেজমিনে রাবির শহীদ মিনার, পুরাতন ফোকলোর চত্বর, জুবেরি মাঠ ও হল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীরা নানা পদের ইফতার সামগ্রী নিয়ে জড়ো হচ্ছেন। তাদের ইফতারে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, শরবত, কলা, পেয়ারাসহ আরো কত কি।
আরো পড়ুন:
ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাবি ও রাবিতে নারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
নিজ বিভাগ থেকে চেয়ারম্যান দাবি রাবির ট্যুরিজম শিক্ষার্থীদের
এ ইফতার আয়োজন যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক অপূর্ব মেলবন্ধন তৈরি করেছে। কেউ বাজার থেকে ভাজাপোড়া আনছেন, কেউ শরবত বানাচ্ছেন, আবার কেউ ফল কেটে প্লেট সাজাচ্ছেন। পরিবারের সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকা শিক্ষার্থীরা বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীদের সাথে ইফতারের মাধ্যমে যেন এক পারিবারিক আবহ তৈরি করছেন।
বিকেল গড়াতেই ক্যাম্পাসে শুরু হয় ইফতারের প্রস্তুতি। পছন্দের জায়গায় দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা গল্প-গুজবের ফাঁকে ইফতার তৈরি করেন। অ্যাকাডেমিক ভবনের ক্লাসরুম, হলের টিভি রুমেও চলছে ইফতার মাহফিল।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফাসান আলম বলেন, “পরিবার ছেড়ে ক্যাম্পাসে একা রমজান মাস কাটানোটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা। বাসার ইফতারের উষ্ণতা, মায়ের হাতের রান্না মিস করি ঠিকই, তবে ক্যাম্পাসের ইফতারের অনুভূতিও আলাদা। বন্ধু-বান্ধব, হল-মেসের পরিবেশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় পরিসরের ইফতার আয়োজন- সব মিলিয়ে নতুন এক অভিজ্ঞতা হচ্ছে।”
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হোসাইন বলেন, “ক্যাম্পাসে থাকার কারণে এত মানুষের সঙ্গে একত্রে ইফতার করার সুযোগ পেয়েছি। মনে হচ্ছে ক্যাম্পাসে যেন মেলা বসেছে। এছাড়া বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই, ছোট ভাই সবার সাথেই নিয়মিত ইফতারের আয়োজন চলছে। একেকদিন একেক জায়গায় ইফতার, সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিহা সাঈদ নিশা বলেন, “রমজানে পরিবার ছাড়া এত দূরে থাকাটা কষ্টের। তাদের কথা সবসময় মনে পড়ে। তবে ক্যাম্পাসের বন্ধুরা এখন পরিবারের মতো হয়ে গেছে। বন্ধুদের সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে ইফতার করার মজাই আলাদা। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকে, এভাবেই এবারের রমজান কেটে যাচ্ছে। ইফতার ও সেহরির সময় পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে। তবুও জীবন তো থেমে থাকে না।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ইফত র ইফত র র পর ব র রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।