বিগত পাঁচ বছরে কোম্পানি করের হার ৩৫ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কি কোম্পানির কর দায় কমেছে? আমাদের দেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো অনলাইনে খোঁজ নিলে জানতে পারে, করহার ২৫ শতাংশ। কিন্তু আসলেই কি কার্যকর করহার সেটি? হিসাব কষে আমরা যখন বলি, কার্যকর করহার ৮০ শতাংশ, তখন অনেকেই তা বিশ্বাস করতে চান না।

বর্তমানে কোম্পানির ক্ষেত্রে কার্যকর করহার বৃদ্ধির মূল কারণ দুটি। প্রথমত, উৎসে করের হার অতিরিক্ত বেশি। দ্বিতীয়ত, কিছু খরচ বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা পরিপালন এবং নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা।

এ মুহূর্তে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ খুবই দরকার। তাই এখনই সময় জনস্বার্থে কর ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনা। বিশেষ করে কার্যকর করহার হ্রাসের যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়া।

শুরুতে উৎসে করের কারণে কার্যকর করহার বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা যাক। একটি কোম্পানি কাঁচামাল আমদানি করলে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। পরবর্তী সময়ে ওই কাঁচামাল দিয়ে প্রস্তুতকৃত পণ্য যদি কোনো উৎসে কর কর্তনকারী পরিবেশক বা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়, তাহলে আবারও ৫ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করা হয়।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আমদানি মূল্য ৫০ টাকা। তার ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর(এআইটি) প্রদান করা হয়, যার পরিমাণ ২.

৫০ টাকা। অন্যান্য খরচ ৩০ টাকা। পণ্যটি ১০০ টাকায় বিক্রি করা হলো। ১০০ টাকায় বিক্রির ওপর আবার ৫ টাকা উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে, অর্থাৎ সর্বমোট ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়েছে। কোম্পানির লাভ হলো ২০ টাকা। এই ২০ টাকার ওপর ২৫ শতাংশ কর হার প্রয়োগ করলে কর দাঁড়ায় ৫ টাকা। কিন্তু কর দেওয়া হয়েছে ৭.৫০ টাকার বেশি। ২০ টাকার ওপর ৭.৫০ টাকার বেশি কর দিলে কার্যকর করহার দাঁড়ায় ৩৭.৫০ শতাংশ। যেসব কোম্পানি ২০ শতাংশ লাভ করতে পারে না, তাদের কার্যকর করহার আরও বেশি।

একটি পরিবেশক কোম্পানি সাধারণত ৫–৮ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকে। বর্তমান আয়কর আইন অনুযায়ী, এই কমিশনের ওপর ১০ শতাংশ কর কর্তন করা হয়। ধরা যাক, কোনো এক বছর ৮ কোটি টাকা কমিশনের ওপর ৮০ লাখ টাকা কর কর্তন করা হলো। ওই বছর পরিবেশক কোম্পানির খরচ হলো ৭ কোটি টাকা। আর নিট লাভ এক কোটি টাকা। এই ১ কোটি টাকার ওপর ২৫ শতাংশ করহার প্রয়োগ করলে প্রদেয় কর দাঁড়ায় ২৫ লাখ টাকা। অথচ আগে কেটে রাখা ৮০ লাখ টাকা বিবেচনায় নেওয়া হলে ১ কোটি টাকার লাভের ওপর কার্যকর করহার দাঁড়ায় ৮০ শতাংশ। যেসব কোম্পানি সাড়ে ১২ শতাংশ লাভ করতে পারে না, তাদের কার্যকর করহার আরও বেশি।

কয়েক বছর ধরে উৎসে কর কিছুটা কমানো হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কার্যকর করহার বৃদ্ধি পায় আইনি বাধ্যবাধকতা পরিপালন ও নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণের কারণে। আয়কর আইনের ধারা ৫৫ মোতাবেক ব্যবসার খরচ পরিশোধে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্র ব্যতীত পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীকে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হয়। উৎসে কর কর্তন ও পণ্য বা সেবা সরবরাহকারী যে কর রিটার্ন দাখিল করেছেন, তার প্রমাণপত্র (পিএসআর) সংগ্রহে রাখতে হয়।

ধরা যাক, কোনো কোম্পানি এক কোটি টাকার বিল ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করল। উৎসে করও দিল, কিন্তু পিএসআর নিল না। সে ক্ষেত্রে ওই কোম্পানিকে ভবিষ্যতে ১ কোটি টাকার ওপর ২৫ শতাংশ বা ২৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত কর দিতে হতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় অনেক পণ্য বা সেবা সরবরাহকারী নগদে লেনদেন করেন। উৎসে কর ও পিএসআর দিতে চায় না। এ ক্ষেত্রে যেসব কোম্পানি কর সঠিকভাবে পরিচালনা করতে চায়, তাদের খরচ বেড়ে যায়। এ ছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন না করলে ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত উৎসে কর দিতে হয়। পিএসআর না থাকলে আরও অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর দিতে হবে।

আয়কর

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট ক র ওপর সরবর হ ৫০ ট ক কর দ ত

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্ত্রীসহ সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের আয়কর নথি তলবের নির্দেশ
  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প
  • ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর