হারিয়ে যাওয়ার দুই বছর পর যেভাবে ছেলেকে ফিরে পেলেন মা
Published: 11th, March 2025 GMT
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক আশিকুর রহমান (৩০) দুই বছর আগে নিখোঁজ হন। স্বামী হারিয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন চোখের পানিতে বুক ভাসান স্ত্রী। পাঁচ বছরের ছেলেও কেবল বাবাকে খোঁজে। ছেলের ফেরার প্রতীক্ষায় ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মা পথ চেয়ে থাকেন। কিন্তু ছেলে আর ঘরে ফেরেন না।
দুই বছর পর অবশেষে সেই ছেলে ঘরে ফিরলেন। উম্মে হুমায়রা নামে বান্দরবানের এক কনটেন্ট ক্রিয়েটর কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটা ভিডিও পোস্ট করেন আশিকুরকে নিয়ে। কানাইঘাটের কয়েকজন তরুণ এটি দেখে আশিকুরের পরিবারকে খবর দেন। এরপরই সন্ধান মেলে আশিকুর রহমানের।
উম্মে হুমায়রা প্রথম আলোকে বলেন, বান্দরবান শহরে আশিকুরকে তিনি নালা থেকে ময়লা খাবার কুড়িয়ে খেতে দেখেন। কাছে গিয়ে ময়লা খাবার ফেলে তাঁকে শুকনা খাবার দেন। এরপর একটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেন। সেই ভিডিওর সূত্রে প্রথমে কানাইঘাটের দুই তরুণ ও পরে আশিকুরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরে তাঁরা আশিকুরকে নিতে বান্দরবানে আসেন। মায়ের কাছে সন্তানকে তুলে দিতে পারায় তাঁর খুবই আনন্দ হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আশিকুরের পরিবার ও উম্মে হুমায়রার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশিকুরের সন্ধান পেয়ে তাঁর বোনের জামাই রইস উদ্দিন মুঠোফোনে উম্মে হুমায়রার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে হুমায়রা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে পুরো বান্দরবান শহর ঘুরে আশিকুরকে গত রোববার সন্ধ্যায় খুঁজে পান। এরপর আশিকুরকে হুমায়রা তাঁর বাসায় এনে গোসল করিয়ে ইফতার করান এবং রাতে বাড়িতেই রাখেন। আশিকুর যেন পালিয়ে না যান, সে জন্য রাতভর হুমায়রার স্বজনেরা তাঁকে দেখেশুনে রাখেন।
গতকাল সোমবার ভোরে আশিকুরের স্বজনেরা বান্দরবান পৌঁছান। বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে আশিকুরকে তাঁর মা মরিয়ম বেগমের (৬১) হাতে তুলে দেন হুমায়রা। এ সময় আশিকুরের বোনের জামাই রইস উদ্দিন, প্রতিবেশী সুলতান আহমেদ (২৮) ও মাহবুব হোসেন (২৬) উপস্থিত ছিলেন। পরে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে আশিকুরকে নিয়ে তাঁরা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান।
আশিকুরের গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপুর এলাকায়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে তিনি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পায়নি পরিবার। তবে কীভাবে আশিকুর বান্দরবানে গেছেন, সেটা পরিবারের সদস্যরা এখনো জানতে পারেননি।
স্বজনেরা জানান, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে আশিকুর তৃতীয় সন্তান। ১৫ বছর পর্যন্ত আশিকুর স্বাভাবিক ছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে তাঁর মানসিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। ছয় বছর আগে আশিকুরের বিয়ে হয়। যখন তিনি নিখোঁজ হন, তখন তাঁর ছেলের বয়স ছিল তিন বছর। তাঁর দুই ভাইয়ের একজন সৌদি আরব ও অন্যজন কুয়েতে থাকেন। পরিবারে মা ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী আছেন। এ ছাড়া একমাত্র বোনের অনেক আগেই বিয়ে হয়েছে।
শ্রীপুরের বাসিন্দা ও মাদ্রাসাশিক্ষক সুলতান আহমেদও আশিকুরকে আনতে বান্দরবান গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ফেসবুকে উম্মে হুমায়রার ভিডিও দেখে তাঁরা আশিকুরকে চিনতে পেরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে আশিকুরের পরিবারের সদস্যদেরও বিষয়টি জানান। এরপরই আশিকুরের মা ও বোনের স্বামীসহ তাঁরা বান্দরবান যান। গতকাল রাতে তাঁরা আশিকুরকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফেরায় এখন আশিকুরের পরিবার খুবই আনন্দিত।
মুঠোফোনে আশিকুরের মা মরিয়ম বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুয়ারে পাইছি, আমি খুশি হইছি। আমার ঘরে শান্তি ফিরা আইছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
সংস্কার শেষে ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এ কারার যাত্রা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামিদের রাখা হবে।
কারা সূত্র জানায়, দেশের পুরোনো চারটি কারাগারের মধ্যে ফেনী-২ কারাগার একটি। শত বছরের পুরোনো এ কারাগার ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এ কারণে ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে কারাগারটি অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল।
নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে জেলা এটিকে কারাগারে উন্নীত হয়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৭২ জন। এর মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন বন্দীকে আনা হয়েছিল। তাঁরা সবাই সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত। এ কারাগারে তাঁরা রান্নার দায়িত্বে থাকবেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনীর দ্বিতীয় কারাগারে আনা হবে। আপাতত এতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এ কারাগার নিয়ে বর্তমানে দেশে কারার সংখ্যা ৭১।
জানতে চাইলে ফেনী-২–এর জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের কেন্দ্র হোক। এরই অংশ হিসেবে সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে।’
কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার ফেরদৌস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সও যোগদান করেছেন। বেশির ভাগ পদে কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।’