কুষ্টিয়া জেলা শহরে রিকশা চালাতেন আবুল কালাম আজাদ। ২০০৯ সালে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়েন তিনি। হারাতে হয় দুটি হাত ও একটি পা। সেই থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী তাঁর। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা শুরু করেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খোকসা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে নেওয়া একটি প্রকল্পের আওতায় কিছু সহায়তা পান। সেই সহায়তা আজাদের জীবন পরিবর্তনে কোনো কাজেই আসেনি। একই অবস্থা প্রকল্পটির আওতায় ৯টি অর্থবছরে সহায়তা পাওয়া দুই শতাধিক ভিক্ষুকের। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৬ ভিক্ষুককে প্রথমবার এই প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়। এর পর প্রতি বছরই নতুন বরাদ্দ এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত উপজেলার দুই শতাধিক ভিক্ষুক প্রকল্পটি থেকে সহায়তা পেয়েছেন। এর মধ্যে গত দুই অর্থবছরে সহায়তা পেয়েছেন ৩২ জন।
আবুল কালাম আজাদ এই প্রকল্পের আওতায় সহায়তা পান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। অনেক দেনদরবারের পর তাঁকে ব্যবসার জন্য নগদ ১৮ হাজার টাকা ও ঘর তৈরির জন্য এক বান্ডেল ঢেউটিন ও কিছু কাঠ দেওয়া হয় তাঁকে। সরকারি টাকার সঙ্গে ভিক্ষা করে জমানো ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির আঙিনায় দোকানঘর তৈরি শুরু করেছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে সেই ঘরটি আর তৈরি করতে পারেননি। ব্যবসাও তাই শুরু হয়নি। বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে ফেরেন আজাদ। 
খোকসার গোপগ্রাম ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামে বাড়ি আজাদের। গ্রামটি উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তরে পদ্মা নদীর তীরে। সম্প্রতি ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় আজাদের স্ত্রী আসমা খাতুনের সঙ্গে। তাদের সংসারে দুই ছেলে। এদিন সকালেই ভিক্ষা করতে চলে গেছেন আজাদ। পাকা রাস্তা লাগোয়া নিজের বসতঘরের উত্তরে বাড়ির জমিতেই অসমাপ্ত আধাপাকা দোকানঘরটি দেখা গেছে। ১৫ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া ঘরটির পোতা পর্যন্ত উঠেছে। অর্থাভাবে কয়েক মাস আগেই বন্ধ হয়ে গেছে কাজ। 
আসমা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী ভিক্ষুক ছিলেন না। ভাগ্যের দোষে প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন। ছোট ছোট দুই ছেলে আর সংসারের তাগিদে মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক চেষ্টা-তদবিরের পর গত বছর ব্যবসার জন্য সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে নগদ ১৮ হাজার টাকা, এক বান্ডেল ঢেউটিন ও কিছু কাঠ পেয়েছিলেন। এই টাকায় ঘরের পোতা পর্যন্ত হয়নি। জমানো ১৫ হাজার টাকা দিয়ে পোতা করা সম্ভব হয়েছে। ঘরই করা যায়নি, তারা ব্যবসা করবেন কী দিয়ে?  
কয়েকদিন পর খোকসা বাসস্ট্যান্ডে দেখা হয় আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারি টিন ও টাকায় দোকানঘর করাই হয়নি। ব্যবসার পুঁজির আগে সেটি ঠিক করা জরুরি। এ জন্য এক-দেড় লাখ টাকা লাগবে। পরে ব্যবসার পুঁজি! সব মিলিয়ে দুই-আড়াই লাখ টাকার মামলা। এখন বাড়ির লোকের দুই বেলা খাবারই দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করছেন।
আজাদের ভাষ্য, সরকারি সহায়তার দুটি মুরগি বা হাঁস, একটা ছাগল অথবা গরুর বাছুর দিয়ে কেউ কিছুই করতে পারেনি। তাই প্রায় সবাই ভিক্ষা করছেন তাঁর মতো।
তাঁর বক্তব্যের সত্যতা মেলে কয়েকজন নারী সুবিধাভোগীর কথায়। কমলাপুর আদিবাসী পল্লির আল্লাদী, শেফালি ও সুবোধ– তারা প্রথম দফায় ১৫ কেজি চাল, নগদ কয়েকশ টাকা পেয়েছিলেন। পরের দফায় শুধু শেফালি পেয়েছিলেন একটা ছাগলের বাচ্চা। সেটিও রুগ্‌ণ হওয়ায় বাঁচাতে পারেননি। 
প্রকল্পের সুফল যে মেলেনি, তার প্রমাণ উপজেলার গ্রামগঞ্জ ও হাটবাজারে দল বেঁধে ভিক্ষা করতে দেখা যায় অসংখ্য ভিখারিকে। তাদের বেশির ভাগই সুবিধা পাননি। স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ার পর ভিক্ষায় নামতে হয় জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের মাসালিয়া গ্রামের আমেনা বেগমকে। তিনি এই পেশায় পাঁচ বছর ধরে। গত শীতে অসুস্থ স্বামীর জন্য একটা কম্বলের জন্য গিয়েছিলেন সমাজসেবা অফিসে।  শেষ পর্যন্ত কম্বল তাঁর ভাগ্যে জোটেনি। একই গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রেহানা খাতুন। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে তাঁর। তিনিও প্রকল্পের কথা জানেন না। রেবা, বিলকিস, জয়নব, সারথি রানী মণ্ডলের মতো অন্য ভিক্ষুকরাও এই কথা জানান। 
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলামের ভাষ্য, ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি সুবিধাভোগীদের কল্যাণেই এসেছে। কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসতে সময় লাগবে। প্রকল্পটি অনেক আগে চালু হলেও তার কাছে গত দুই অর্থবছরের সহায়তা পাওয়া ৩২ জনের তালিকা আছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ব্যবসা করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই আছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা হয় খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুদীপ্ত রায় দ্বীপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি সর্বশেষ কী অবস্থায় আছে, তা ফাইল দেখে জানাতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র ব যবস র আজ দ র র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি