সম্প্রতি এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ‘ডা.’ পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে কি নিবন্ধিত ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করতে পারবে না? 

হাইকোর্টের ওই রায়ের ফলে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিবন্ধিত ভেটেরিনারি, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের স্বীকৃতি নিয়ে আইনি অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন, ২০১৯ এবং বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল আইন, ২০২৪-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, নিবন্ধিত ভেটেরিনারি ডাক্তার এবং হোমিওপ্যাথিক ডিপ্লোমা ও ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী চিকিৎসকরা ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন।

কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন, ২০১০-এর ধারা ২৯(১) অনুযায়ী এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসক ব্যতীত অন্য কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না।

ওই ধারায় ‘অন্য কেউ ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না’ বলার কারণে সাধারণ জনগণ এটাই মনে করে থাকেন যে, বাংলাদেশে কেবল ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) এবং ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ডিগ্রিধারীরাই ডাক্তার। অন্য কেউ ডাক্তার নয়।

২৯(১) ধারায় উদ্ভট লাইনের কারণে অনেকে মনে করে থাকেন যে, ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম), বিএসসি ইন ভেট সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি, ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারী ডিএইচএমএস, ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি বিএইচএমএস ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ডাক্তার নন। কিংবা যে কেউ ভাবতে পারেন বিএমডিসি আইন ২০১০ অনুযায়ী ডিভিএম, বিএইচএমএস, ডিএইচএমএস ধারীরা নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। এতে করে জাতির কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।

একটি আইনে যখন ‘অন্য কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না’ এরূপ বলা হয়, তখন ধরেই নেওয়া হয় বাকী পেশাজীবি চিকিৎসকরা কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। আইনে এরূপ উদ্ভট বাক্য চয়ন অন্যান্য পেশাজীবী চিকিৎসকদের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে।

২৯(১) ধারার এই সাংঘর্ষিক বিধান নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে রাষ্ট্র স্বীকৃত নিবন্ধিত চিকিৎসকদের ডাক্তার পদবি ব্যবহারের অনুমোদন দিচ্ছে। অন্যদিকে বিএমডিসি আইন সেটিকে অস্বীকার করছে। ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং ভেটেরিনারি, হোমিওপ্যাথিক ও অন্যান্য চিকিৎসকদের অনেক সময় ভুয়া ডাক্তার বলে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।

আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিএমডিসি আইন সংশোধন করা জরুরি, যাতে সব নিবন্ধিত চিকিৎসক তাদের ন্যায্য স্বীকৃতি পান। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগণও দাবি জানিয়েছেন, বিএমডিসি আইন সংশোধন করে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, বিএমডিসি নিবন্ধিত চিকিৎসকগণ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন।

এ অসঙ্গতির সমাধান না হলে, নিবন্ধিত ভেটেরিনারি, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকগণ আদালতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিবেচনা করতে পারেন। তারা মনে করেন, এই বৈষম্যমূলক বিধান সংশোধন হলে জনগণের বিভ্রান্তি দূর হবে এবং চিকিৎসকদের পেশাগত সম্মান নিশ্চিত হবে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও আইন বিশেষজ্ঞরা।
(লেখক: শিক্ষার্থী, ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম), ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ)

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন বন ধ ত ভ ট র ন র অন য ক উ ড ক ত র ক উ ড ক ত র পদব ব যবহ র করত চ ক ৎসকদ র চ ক ৎসকর প রব ন ন ব এমড স

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদে আমাদের যে সম্মতি সেটি আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তবে এটিকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে একমত নয় বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জনগণের সার্বভৌম এখতিয়ারের ভিত্তিতেই আমরা এই ঘোষণাপত্রকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করছি। সেটা আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি। এর চেয়ে বড় জাতীয় সম্মতি আর নেই। এটা আইনের ঊর্ধ্বে। এটা জনগণের অভিপ্রায়। এটা সার্বভৌম ব্যাপারের কাছাকাছি হয়ে গেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো জানান সালাহউদ্দিন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ নামে যে খসড়া বিএনপির কাছে পাঠানো হয়েছে, সেখানে বাক্যগত কিছু অসামঞ্জস্যতা ছিল বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘সেগুলো আমরা সংশোধন করেছি। সনদে প্রস্তাব আছে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে এই অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার জন্য। আমরা এটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তারা বলেছিল এই প্রতিশ্রুতিগুলো পালনের জন্য, সংবিধানে এবং বিভিন্ন আইনে, বিধিবিধানে। সেখানে যা পরিবর্তন করতে হবে, সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। আমরা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছি।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই সনদে শুধু কমিশন নয়, সব রাজনৈতিক দল সই করবে। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্য। এটি জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়। এটি আইনের চেয়েও বড়, এটি একধরনের “লেজিটিমেট এক্সপেকটেশন অব দ্য পিপল”। জনগণের এই প্রত্যাশা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করার জন্য আমরা অঙ্গীকার করেছি।’ তিনি বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থান ও ছাত্র আন্দোলনের পথ ধরে এই ঘোষণাপত্র এসেছে। সেটার বৈধতা আমরা সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেব। এটাকে যদি আমরা আইনে ভিত্তি না বলি তাহলে কোনটাকে বলব?’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা ও সুপারিশের কাজ করবে, কিন্তু কোনোভাবেই তারা সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার পাবে না।’ তিনি বলেন, ‘উচ্চকক্ষের সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত না হওয়ায় তাঁদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চিন্তা গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী। সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল সার্বভৌম জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতে থাকা উচিত।’

উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের যৌথভাবে পাস হওয়া আইনের মধ্য দিয়ে একটি শেয়ারড লেজিসলেটিভ প্রসেস গড়ে ওঠার প্রস্তাব দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির এই নেতা জানান। তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা করবে, সুপারিশ করতে পারবে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে নিম্নকক্ষে। তবে আমরা উচ্চকক্ষের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা দেখছি কিছু পক্ষ সংবিধান সংশোধনকে কঠিনতর করতে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনির্বাচিত বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

৭০ অনুচ্ছেদ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আগেই প্রস্তাব করেছিলাম, ৭০ অনুচ্ছেদে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংসদ সদস্যদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই প্রস্তাব আজ গৃহীত হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিরা দলীয় চাপে থাকবেন না, গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। যদি উচ্চ ও নিম্নকক্ষ দুটিই থাকে, তাহলে উভয় কক্ষের সদস্যরা যৌথভাবে গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন।’

সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি বর্তমানে শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে এ ক্ষমতার বাইরে রাষ্ট্রপতির আরও কিছু দায়িত্ব থাকা উচিত বলে বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে। আলোচনার পর তা প্রকাশ করা হবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সংসদে একটি মধ্যবর্তী বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কমিশন এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেবে।

এ ছাড়া মৌলিক অধিকার–সংক্রান্ত আলোচনাও এখনো চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি বিদ্যমান মৌলিক অধিকারের সঙ্গে আধুনিক সময়ের আলোকে কিছু অধিকার যেমন ইন্টারনেটের অধিকার যুক্ত করা যায় কি না। তবে মৌলিক অধিকার একবার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হলে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কারণ, সংবিধানের ২৬ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে থাকা অধিকারগুলো সেলফ এনফোর্সেবল এবং ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকেরা তা প্রয়োগে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। তাই অত্যন্ত সচেতনভাবে নতুন কোনো অধিকার সংযোজন করতে হবে।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত বাক্যটি যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমরা একমত। এতে বলা হয়েছে—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। তবে কিছু দলের আপত্তি থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে আসবে।’

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড্যাবের নির্বাচন ৯ আগস্ট, দুটি প্যানেলই শক্ত
  • ইসির প্রতিটি কাজে জবাবদিহি থাকতে হবে
  • জুলাই সনদে আমাদের যে সম্মতি সেটি আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন
  • জুলাই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়াবেন না: টুকু
  • সবাই অপেক্ষা করছে একটা নির্বাচনের জন্য
  • জামায়াত আমিরের হার্টে ৩ ব্লক, বাইপাস সার্জারির সিদ্ধান্ত
  • সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে: তারেক রহমান
  • সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান
  • ট্রাম্পের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন ৪০ শতাংশে ঠেকেছে
  • জাতিসংঘে সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান বৈঠক, ফিলিস্তিন ইস্যুতে উদ্বেগ