নিবন্ধিত ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা কি ‘ডা.’ ব্যবহার করতে পারবে?
Published: 12th, March 2025 GMT
সম্প্রতি এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ‘ডা.’ পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে কি নিবন্ধিত ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করতে পারবে না?
হাইকোর্টের ওই রায়ের ফলে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিবন্ধিত ভেটেরিনারি, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের স্বীকৃতি নিয়ে আইনি অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন, ২০১৯ এবং বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল আইন, ২০২৪-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, নিবন্ধিত ভেটেরিনারি ডাক্তার এবং হোমিওপ্যাথিক ডিপ্লোমা ও ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী চিকিৎসকরা ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন।
কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন, ২০১০-এর ধারা ২৯(১) অনুযায়ী এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসক ব্যতীত অন্য কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না।
ওই ধারায় ‘অন্য কেউ ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না’ বলার কারণে সাধারণ জনগণ এটাই মনে করে থাকেন যে, বাংলাদেশে কেবল ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) এবং ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ডিগ্রিধারীরাই ডাক্তার। অন্য কেউ ডাক্তার নয়।
২৯(১) ধারায় উদ্ভট লাইনের কারণে অনেকে মনে করে থাকেন যে, ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম), বিএসসি ইন ভেট সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি, ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারী ডিএইচএমএস, ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি বিএইচএমএস ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ডাক্তার নন। কিংবা যে কেউ ভাবতে পারেন বিএমডিসি আইন ২০১০ অনুযায়ী ডিভিএম, বিএইচএমএস, ডিএইচএমএস ধারীরা নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। এতে করে জাতির কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।
একটি আইনে যখন ‘অন্য কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না’ এরূপ বলা হয়, তখন ধরেই নেওয়া হয় বাকী পেশাজীবি চিকিৎসকরা কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। আইনে এরূপ উদ্ভট বাক্য চয়ন অন্যান্য পেশাজীবী চিকিৎসকদের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে।
২৯(১) ধারার এই সাংঘর্ষিক বিধান নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে রাষ্ট্র স্বীকৃত নিবন্ধিত চিকিৎসকদের ডাক্তার পদবি ব্যবহারের অনুমোদন দিচ্ছে। অন্যদিকে বিএমডিসি আইন সেটিকে অস্বীকার করছে। ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং ভেটেরিনারি, হোমিওপ্যাথিক ও অন্যান্য চিকিৎসকদের অনেক সময় ভুয়া ডাক্তার বলে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিএমডিসি আইন সংশোধন করা জরুরি, যাতে সব নিবন্ধিত চিকিৎসক তাদের ন্যায্য স্বীকৃতি পান। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগণও দাবি জানিয়েছেন, বিএমডিসি আইন সংশোধন করে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, বিএমডিসি নিবন্ধিত চিকিৎসকগণ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন।
এ অসঙ্গতির সমাধান না হলে, নিবন্ধিত ভেটেরিনারি, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকগণ আদালতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিবেচনা করতে পারেন। তারা মনে করেন, এই বৈষম্যমূলক বিধান সংশোধন হলে জনগণের বিভ্রান্তি দূর হবে এবং চিকিৎসকদের পেশাগত সম্মান নিশ্চিত হবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও আইন বিশেষজ্ঞরা।
(লেখক: শিক্ষার্থী, ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম), ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ)
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন বন ধ ত ভ ট র ন র অন য ক উ ড ক ত র ক উ ড ক ত র পদব ব যবহ র করত চ ক ৎসকদ র চ ক ৎসকর প রব ন ন ব এমড স
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
রাশেদুল ইসলাম (৬১) পাঁচ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরছেন। তাঁর ওয়ারিশান সনদ দরকার। এই সনদ ছাড়া তিনি জমি রেজিস্ট্রি করতে পারছেন না। এই কাজের জন্য গতকাল সোমবারও এসেছিলেন তিনি। একইভাবে ফিরে গেছেন।
নানা প্রয়োজনে এসে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে রাশেদুলের মতো অনেক মানুষকে প্রতিদিনই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এই ইউপিতে সব নাগরিক সেবা চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জনগণ প্রায় ৩০ ধরনের সেবা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, গ্রাম আদালত, কয়েক ধরনের ভাতা, ভিজিডি ও ভিজিএফের খাদ্যপণ্য বিতরণ, ট্রেড লাইসেন্স উল্লেখযোগ্য। বাজুবাঘা ইউপিতে এর সব কটি সেবাই বন্ধ। ইউপি চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষে প্রশাসক নিয়োগে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে চেয়ারম্যানের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে সেবা কার্যক্রম চালুর দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন।
বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ফিরোজ আহম্মেদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। সরকার ১০ ডিসেম্বর তাঁর স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। ওই প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে ২২ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান হাইকোর্ট একটি রিট করেন। শুনানির পর আদালত প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এ জন্য প্রশাসক কোনো কাজ করতে পারছেন না। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের ক্ষমতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে।
২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ফিরোজ আহম্মেদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। সরকার ১০ ডিসেম্বর তাঁর স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। ওই প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে ২২ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান হাইকোর্ট একটি রিট করেন।বাজুবাঘা ইউনিয়নের নাগরিক সেবায় ভোগান্তি লাঘবে অতিদ্রুত প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে বাজুবাঘা ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে একটি মানববন্ধন হয়। এই কর্মসূচিতে দাবি করা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ (রঞ্জু) ইউনিয়ন পরিষদে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ক্ষমতার লোভে ইউনিয়ন প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন। এতে জনগণ ইউনিয়নের সব ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গতকাল সোমবার জেলার বাঘা উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামে বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের বারান্দায় কয়েকজন গ্রাম পুলিশ বসে আছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষ খোলা। তিনি সেবাগ্রহিতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। কেন সেবা দেওয়া যাচ্ছে না, এর কারণ জানাচ্ছেন। চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ লেখা কক্ষটিতে তালা লাগানো।
সেখানেই কথা হয় কয়েকজন সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে। জোতরাঘোব গ্রামের সুমন হোসেন (২৮) ছেলের জন্মনিবন্ধন করার জন্য এসেছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি তো জানি নি যে ইউনিয়ন পরিষদের এই অবস্থা হয়্যা আছে। আজ গা জাননু, সব কামই নাকি পাড়ি আছে। কিছুই হচ্ছে না।’
ছেলের জন্মনিবন্ধন করার জন্য এসেছিলেন বাজিতপুর গ্রামের রুবেল হোসেন (৩০)। তাঁকেও হতাশ হতে হয়েছে। এক গ্রাম পুলিশ যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কাজ শুরু হলে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থা সম্পর্কে বারান্দায় বসে থাকা গ্রাম পুলিশের দফাদার মকলেছুর রহমান জানান, ‘প্রতিদিন আমরা পালাক্রমে ডিউটি করছি। কার্যক্রম স্থগিতের প্রথম দিকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন লোক আসত। এখনো ১০ থেকে ১৫ লোকজন আসেন। তবে এখন বেশির ভাগ লোকজন ফোনে খবর নেন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, দেশের পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী ঘরানার পৌর মেয়র, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে যান। পরে বর্তমান সরকার সেবা কার্যক্রম সুচারু রূপে পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেন। ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ‘যেহেতু আমার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয়নি। সে জন্য বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছি। মহামান্য আদালত ছয় মাসের জন্য এই ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেন। জনগণের ভোগান্তি হোক, এটা আমি চাই না। তবে এটার দ্রুত সমাধান আশা করছি।’
চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ লেখা কক্ষটিতে তালা লাগানো। গতকাল সোমবার তোলা