রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাহত রিকশাচালক গোলাম হোসেন (৪৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁর স্ত্রী পরী বানুর অভিযোগ, স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধা দেন বিএনপির দুই নেত্রী। এতে তাঁর চিকিৎসা পেতে এক ঘণ্টা দেরি হয়। এ ঘটনায় নগরের বোয়ালিয়া থানায় গেলেও অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। তবে পুলিশ ও বিএনপি নেত্রীদের কেউই অভিযোগ স্বীকার করেননি।

আওয়ামী লীগের এক নেতার ফ্ল্যাটে অভিযান ও তাঁর ভাইকে পুলিশে দেওয়াকে কেন্দ্র করে নগরের দড়িখড়বোনা এলাকায় গত শুক্রবার রাতে সংঘর্ষে জড়ান বিএনপির পক্ষের নেতা–কর্মীরা। এক পক্ষে মহানগর মহিলা দলের সহ-ক্রীড়া সম্পাদক লাভলী খাতুনের অনুসারী ও অন্য পক্ষে মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মারুফ হোসেনের অনুসারীরা ছিলেন। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ, গুলির শব্দ পাওয়া যায়। সংঘর্ষের সময় তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ওই রাতে রিকশাচালক গোলাম হোসেন রিকশা জমা দিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলেন। দড়িখড়বোনা মোড়ে এক পক্ষের নেতা–কর্মীরা তাঁকে আরেক পক্ষের লোক ভেবে ছুরিকাঘাত করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে গোলাম হোসেন মারা যান। ময়নাতদন্তের পর আজ বুধবার দুপুরে তাঁর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিহত গোলাম হোসেনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার সাহেবপাড়ায়। ছয় বছর বয়সে মা–বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মামা তাঁকে রাজশাহীতে এনে এতিমখানায় রেখেছিলেন। কিছুটা বড় হওয়ার পর এতিমখানা থেকে ফিরে মামার বাড়িতেই মানুষ হন। মামা নূরু চৌধুরী মোহনপুরের মেয়ে পরী বানুর সঙ্গে গোলামের বিয়ে দিয়েছিলেন। গোলাম কোনো রাজনীতি করেন না, সংসার চালাতেন রিকশা চালিয়ে। তিন বছর আগে গোলাম তাঁর মেয়ে রাখি আক্তারের বিয়ে দেন। ধার-দেনা করে ছেলে রাকিবুল হাসানকে দুবাই পাঠিয়েছেন। স্ত্রীকে নিয়ে ১০ বছর ধরে নগরের দড়িখড়বোনা রেললাইনের পাশে দুই হাজার টাকায় একটি টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত রিকশাচালকের মৃত্যু১১ মার্চ ২০২৫

বাবার ওপর হামলার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন মেয়ে। পরীবানু হোয়াটসঅ্যাপে দুবাইপ্রবাসী ছেলেকে কল করে আহাজারি করে বলছিলেন, ‘বাবা তোমাকে আর ট্যাকা পাঠাইতে হবে না। তুমি বাপের জানাজায় আইস, তুমার বাপ নাই।’

ঘটনার পরদিন বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ করতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে পরী বানু বলেন, ‘থানায় গেছি। আমি কেস করতে চাই। বলল, ঠিক আছে কেস করবেন। আপনি কী চেনেন কাউকে? আমি বলি, দু-তিনজনকে চিনি। স্বামী বলেছে, “আমি তাঁদের চিনি। সুস্থ হই, ক্লাবে মামাদের কাছে যাব। বলব, মামা আমি কী অপরাধ করেছিলাম? আমাকে এভাবে কেন পঙ্গু করে দিল?” আমি জানতে চাই, কে মেরেছিল তোমাক? সে বলছিল, “সোহেল নামের একটা লোক, আরেকজন দাঁড়িয়ে ছিল।” পরে থানা অভিযোগ নেয়নি।’

পরী বানু অভিযোগ করে বলেন, ‘মেডিকেলে যখন স্বামীকে নিয়ে যাই, লাভলী (মহিলা দলের নেত্রী) তখন বলছে, “এই রোগী নেবেন না, খবরদার।” আমার স্বামীকে ভর্তি করতে দিচ্ছিল না। আমি অনেক রিকোয়েস্ট করলাম। আগে একটু চিকিৎসাটা দেন। লাভলী ওখানে আমার কোনো কথা শুনছিল না। তখন পুলিশের হাত ধরলাম। কিন্তু লাভলী বলছে, “খবরদার এই লোককে ঢোকাতে দেবেন না।” লাভলী যদি আমার স্বামীকে ভর্তি করতে দিত, আরও এক ঘণ্টা আগে আমার স্বামী চিকিৎসা পেত।’

পরী বানু বলেন, ‘আমার সামনে আরও কত লোক ছিল। ওই সিসি ক্যামেরা যদি টানেন দেখতে পাবেন, লাভলী কি করেছিল। ওই লাভলী আর বীথি, দুজনে বলছে না না, এই রোগী ভর্তি চলবে না। হঠান হঠান, এই রোগী হবে না। লাভলী এই রকম করে বলল। বীথি বলল, না না চলবে না। আমি ডাক্তারকে বলেছি, আমার স্বামীর মুখটা দেখেন, সে কোনো সন্ত্রাসী না। পরে ডাক্তার ভর্তি নেন।’

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মহানগর মহিলা দলের সহ-ক্রীড়া সম্পাদক লাভলী খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ। তবে মহানগর মহিলা দলের ক্রীড়া সম্পাদক বীথি বলেন, ওই রিকশাচালককে তিনি চেনেন না। তাঁর স্ত্রীকেও চেনেন না। হাসপাতালে তিনি লাভলী ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তখন কে হাসপাতালে গেছেন, না গেছেন তিনি কিছুই খেয়াল করেননি। তিনি বলেন, ‘এটা একটা ষড়যন্ত্র। ওকে দিয়ে কেউ এটা বলাচ্ছে।’

থানায় অভিযোগ না নেওয়ার ব্যাপারে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, থানা থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, এ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসেননি। রিকশাচালক মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁর মামলা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুনআওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪০৭ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র দ ই আম র স ব ম য গ কর স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

গুলিস্তানে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে

ঢাকার গুলিস্তানে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস।

শনিবার (২ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে মার্কেটের পঞ্চম তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের স্টেশন অফিসার এবং মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম রাইজিংবিডিকে বলেন,  ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা  সোয়া এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বেলা ১১টা ১২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। 

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানিয়েছেন, “সকাল ১০টার দিকে আগুন লাগার খবর আসে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সোয়া এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।” 

তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবরও পাওয়া যায়নি। তবে আগুন লাগার খবর পেয়ে ভিড় করে উৎসুক জনতা ও ব্যবসায়ীরা। 

ঘটনাস্থলে এখনো কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঢাকা/রায়হান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ