যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি ইউক্রেন, বল এখন ‘রাশিয়ার কোর্টে’
Published: 12th, March 2025 GMT
রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইউক্রেন। গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দায় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়। এখন যুদ্ধবিরতি হবে কি না, সেটা নির্ভর করছে রাশিয়ার ওপর।
যুদ্ধবিরতিতে ইউক্রেনের রাজি হওয়ার পর আজ বুধবার মস্কোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর সিদ্ধান্ত জানাবে তারা। তবে রাশিয়ার একাধিক সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এতে রাজি হবেন না বলেই মনে করছে তারা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে উদ্যোগী হন। কিন্তু গত মাসের শেষে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এখন ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা বলছে, বল এখন রাশিয়ার কোর্টে। মস্কো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় কি না, সেটা দেখেই বোঝা যাবে, তারা শান্তি চায় কি না।
ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়া প্রসঙ্গে গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আজ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটা এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে রাশিয়ার ওপর। তারা হ্যাঁ বলে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। যদি রাশিয়া রাজি হয়, তাহলে সেটা হবে খুবই ভালো খবর। আর এটা হলে পরবর্তী কাজ শুরু করব আমরা। এই শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সাধ্যের মধ্যে যতটা সম্ভব সব চেষ্টাই করব আমরা।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যদি রাশিয়া রাজি না হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই সবকিছু ভেবে দেখব। বোঝার চেষ্টা করব, তারা কী চায়। যদি তারা না বলে, তাহলে সেটাই তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের ধারণা দেবে। পাশাপাশি বুঝতে পারব, তারা কী চাইছে।’
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘৩০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির এ পরিকল্পনা ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর পথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। এখন এটা নির্ভর করছে পুতিনের ওপর।’
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইউক্রেনের প্রস্তাব নিয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানার অপেক্ষা করছেন তাঁরা।
পেসকভ বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ আগামী দিনগুলোতে নানা মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। চলমান আলোচনা ও আলোচনায় হওয়া সমঝোতার বিষয়ে আমাদের জানানো হবে।’ মস্কো একটি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনি তো সময়ের আগেই এ প্রশ্নের উত্তর চাইছেন।’
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। সম্ভাব্য ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি যদি হয়ে যায়, তাহলে এই সময়ে বড় পরিসরে একটি শান্তিচুক্তির খসড়া তৈরির কাজ হতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলাম অনুসারে সন্তানের আধুনিক নাম
সন্তানের নাম দেওয়া একটি পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দায়িত্ব। ইসলামে নামকরণ শুধু একটি সামাজিক রীতি নয়, বরং এটি সন্তানের পরিচয়, যা চরিত্র ও ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
আধুনিক যুগে মুসলিম পরিবারগুলো সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে এমন নাম খুঁজছে, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অথচ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক, সংক্ষিপ্ত ও শ্রুতিমধুর।
ফলে ইসলামের আলোকে মুসলিম সন্তানের নামকরণের গুরুত্ব, আধুনিক নামের প্রবণতা এবং কীভাবে ইসলামি ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানো যায়, তা নিয়ে আলোচনার দাবি রাখে।
ইসলামে নামকরণের গুরুত্বইসলামে সন্তানের নামকরণ একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক সন্তানের বেলায় পিতার দায়িত্ব হলো তাকে একটি সুন্দর নাম দেওয়া এবং তাকে ভালো শিক্ষা দেওয়া।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৯৪৯)
নাম শুধু একটি পরিচয় নয়, বরং এটি সন্তানের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইসলামে নামের অর্থের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) নিজে কিছু নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, যদি সেগুলোর অর্থ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অশোভন হতো। তিনি ‘হারব’ (যুদ্ধ) নামটি পরিবর্তন করে ‘হাসান’ (সুন্দর) রেখেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১৯০)
এটি প্রমাণ করে যে নামের অর্থ সুন্দর, ইতিবাচক ও ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
আরও পড়ুনদস্তরখানের নামে সুরার নাম০৪ মার্চ ২০২৫রাসুল (সা.) নিজে কিছু নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, যদি সেগুলোর অর্থ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অশোভন হতো। তিনি ‘হারব’ (যুদ্ধ) নামটি পরিবর্তন করে ‘হাসান’ (সুন্দর) রেখেছিলেন।আধুনিক নামকরণের প্রবণতাআধুনিক যুগে মুসলিম সমাজে নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু নতুন প্রবণতা লক্ষ করা যায়। মা–বাবা এখন এমন নাম পছন্দ করেন, যা সংক্ষিপ্ত, উচ্চারণে সহজ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য। যেমন ‘আয়ান’, ‘ইয়াসির’, ‘জায়ান’, ‘নুয়াইরা’, ‘আদিয়া’ ইত্যাদি নাম বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই নামগুলোর অর্থও ভালো, যেমন ‘আয়ান’ অর্থ ‘ঐশী উপহার’ এবং ‘নুয়াইরা’ অর্থ ‘আলো’ বা ‘দীপ্তি’।
আধুনিক নামের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো প্রায়ই লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। ‘রায়ান’, ‘ইমান’ বা ‘নূর’–এর মতো নাম ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলা, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষার শব্দের পাশাপাশি কিছু নাম স্থানীয় সংস্কৃতি থেকেও গৃহীত হচ্ছে, যা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।
ইসলামি ও আধুনিক নামের সমন্বয়ইসলামি নাম বলতে শুধু আরবি নাম বোঝায় না। ইসলাম যেকোনো ভাষার নাম গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে, যতক্ষণ তা অর্থপূর্ণ ও ইতিবাচক। শায়েখ উসাইমিন (রহ.) বলেন, ‘নাম যেকোনো ভাষার হতে পারে, যদি তা শরিয়াহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং অর্থে কোনো নেতিবাচকতা না থাকে।’ (ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারব, পৃষ্ঠা: ১২৫, দারুল ইফতা প্রকাশনী: ১৯৯৮)
আধুনিক নামকরণে এই নীতি মেনে চলা যায়। যেমন ‘তাহা’ (কোরআনের সুরার নাম), ‘ইলিয়াস’ (একজন নবীর নাম), ‘আমিনা’ (রাসুলের মায়ের নাম) ইত্যাদি নাম ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আধুনিক পরিবেশেও গ্রহণযোগ্য।
নাম যেকোনো ভাষার হতে পারে, যদি তা শরিয়াহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং অর্থে কোনো নেতিবাচকতা না থাকে।শায়েখ সালেহ উসাইমিন (রহ.), ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারবএ ছাড়া ‘জায়নাব’, ‘ফাতিমা’, ‘আলি’, ‘ওমর’ ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী নাম আজও জনপ্রিয় এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে।
আরও পড়ুনপাপ থেকে প্রত্যাবর্তন করার নাম তওবা২৮ জানুয়ারি ২০২৫নামকরণে সতর্কতানামকরণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
প্রথমত, নামের অর্থ যেন ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। কোনো দেব-দেবীর নাম বা শিরকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নাম ব্যবহার করা উচিত নয়।
দ্বিতীয়ত, জটিল বা উচ্চারণে কঠিন নাম এড়িয়ে চলা ভালো।
তৃতীয়ত, নামটি এমন হওয়া উচিত, যা সন্তানের জন্য গর্বের এবং সমাজে তার পরিচয়কে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে।
অনেক মা–বাবা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এমন নাম রাখেন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ‘ডায়ানা’র মতো নাম অর্থের দিক থেকে সুন্দর হলেও ইসলামি পরিচয়ের সঙ্গে সব সময় মানানসই না–ও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে মা–বাবাকে নামের অর্থ ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
মা–বাবার করণীয় অনেক মা–বাবা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এমন নাম রাখেন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।ইসলামে নামকরণের জন্য কিছু নির্দেশনা রয়েছে।
প্রথমত, সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিনে নামকরণ করা সুন্নাহ। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৮৩২)
এই সময়ে আকিকা দেওয়ার রীতিও রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, নাম রাখার আগে পরিবারের সদস্য, আলেম বা বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
তৃতীয়ত, নামটি এমন হওয়া উচিত, যা সন্তানের জন্য আত্মবিশ্বাসের উৎস হয়।
আধুনিক যুগে নামকরণের ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, বই ও অ্যাপের সাহায্য নেওয়া যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ, অনেক সময় ভুল অর্থ বা অপ্রমাণিত তথ্য দেওয়া হতে পারে।
নাম শুধু একটি শব্দ নয়, এটি সন্তানের পরিচয়, চরিত্র ও সমাজে তার অবস্থানের প্রতিফলন। তাই মা–বাবার উচিত এমন নাম নির্বাচন করা, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও শ্রুতিমধুর।
আরও পড়ুন‘আল-ওয়াহিদ’ আল্লাহর অনন্য নাম২৩ জুন ২০২৫