লঞ্চযাত্রী মা-মেয়ের মরদেহ ভাসছিল মেঘনায়
Published: 13th, March 2025 GMT
স্বামীর সঙ্গে রাগ করে সন্তান নিয়ে ভাইয়ের কাছে যেতে ঢাকাগামী লঞ্চে উঠেছিলেন তানিয়া বেগম (২৬)। তাঁকে ফেরাতে একই লঞ্চে ওঠেন স্বামী ও শ্বশুর। মঙ্গলবার ভোরে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট-সংলগ্ন মেঘনায় তানিয়া ও তাঁর চার বছরের সন্তান রাবেয়ার মরদেহ পাওয়া গেছে। তাদের মৃত্যু কীভাবে হলো, তার কূলকিনারা পাচ্ছেন না কেউ। তবে লঞ্চটি ঢাকায় পৌঁছার পর স্বামী আবদুর রহমান ও শ্বশুর ইসমাইল হোসেন আত্মগোপন করেছেন।
সোমবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় মা-মেয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হন। এটা হত্যা, নাকি আত্মহত্যা– তা এখনও স্পষ্ট নয়। তানিয়ার বাবা দুলাল হাওলাদার স্বামী, শ্বশুরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গোসাইরহাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। শরীয়তপুর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মা-মেয়ের মরদেহ বুধবার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আরমানিক ইউনিয়নের ভঙ্গা গ্রামের দুলাল হাওলাদারের মেয়ে তানিয়া। ৫ বছর আগে হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের ইন্দুরিয়া গ্রামের দিনমজুর আবদুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। রাবেয়া তাদের একমাত্র সন্তান।
মেহেন্দীগঞ্জের ভাসানচর-ঢাকা রুটের সম্রাট-২ লঞ্চের কেবিনবয় কামাল হোসেন জানান, তাদের লঞ্চটি সোমবার বিকেলে ভাসানচর থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হিজলার গঙ্গাপুর নামক স্টেশনে পৌঁছায়। তখন এক নারী যাত্রী শিশুসহ ট্রলারে এসে লঞ্চে ওঠেন। তাৎক্ষণিক ২১০ নম্বর সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া নেন। কিছুক্ষণ পর আরেকটি ট্রলারে তিনজন পুরুষ লঞ্চে ওঠেন। পরে তারা জানতে পারেন, নারী যাত্রীর নাম তানিয়া এবং পরে ওঠা তিনজনের মধ্যে একজন তার স্বামী ও আরেকজন শ্বশুর।
কামাল হোসেনের ভাষ্য, পুরুষ তিনজন লঞ্চে ওঠার পরই তানিয়া কেবিনে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। স্বামী-শ্বশুর দরজা খোলার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ নিয়ে ২১০ নম্বর কেবিনের সামনে জটলা চলে। এর পর লঞ্চের কর্মচারীরা যে যার কাজে চলে যান। সেহরির সময়ে তানিয়ার স্বামী ও শ্বশুর এসে জানান, তানিয়া ও তাঁর সন্তানকে কেবিনের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না। কর্মচারীরা গিয়ে দেখেন দরজা খোলা, কেবিনের মধ্যে একটি বোরকা ও ছোট হাতব্যাগ পড়ে আছে। লঞ্চের সর্বত্র খুঁজেও তাদের পাওয়া যায়নি। সকাল সাড়ে ৭টায় লঞ্চ ঢাকায় সদরঘাটে পৌঁছলে তানিয়ার ভাইও সেখানে উপস্থিত হন।
তানিয়ার ভাই আমির হোসাইন জানান, সম্রাট-২ লঞ্চের ২১০ নম্বর কেবিনে ওঠার বিষয়টি তানিয়া ফোনে তাঁকে জানিয়েছিলেন। সকালে লঞ্চঘাটে গিয়ে তানিয়াকে কল দিলে ফোন বন্ধ পান। কিছুক্ষণ পর লঞ্চ সদরঘাটে পৌঁছলে তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও জয়নাল লঞ্চ থেকে নেমে এলোমেলো কথা বলে কৌশলে পালিয়ে যান।
সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে তানিয়ার বাবা দুলাল হাওলাদার মঙ্গলবার বিকেলে হিজলা থানায় জিডি করতে যান। তখন ডিউটি অফিসার দুটি মরদেহের ছবি দেখালে সেটা তার মেয়ে ও নাতনির বলে শনাক্ত করেন।
গোসাইরহাটের নরসিংহপুর নৌ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো.
তানিয়ার স্বামী আবদুর রহমানের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আর শ্বশুর ইউসুফ মাঝির ফোন ধরেন তাঁর স্ত্রী বকুল বেগম। তিনি দাবি করেন, তাদের পুত্রবধূ ইচ্ছেমতো বাবার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি ছিল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল র মরদ হ ত নজন
এছাড়াও পড়ুন:
ছুটি শেষে রাজধানীতে মানুষ বাড়ছে
পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, কমলাপুর ও সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে গ্রাম ছেড়ে আসা মানুষের ভিড়। করোনার নতুন উপধরনের উপদ্রব দেখা দিলেও কাউকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ দফা নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি।
গত ৭ জুন দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীরা এবারের ঈদে ১০ দিন ছুটি পেয়েছেন, যা শেষ হবে আগামী শনিবার। ফলে আরও দুই দিন রাজধানীমুখী মানুষের চাপ অব্যাহত থাকবে।
যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বাসগুলো প্রায় পূর্ণ যাত্রী নিয়ে আসছে। যাত্রীরা নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রাইডশেয়ারিং গাড়ি অথবা বাসে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
বাসচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তায় যানজট না থাকায় সময় কম লেগেছে। ক্লান্তি ছিল তুলনামূলক কম।
সায়েদাবাদ টার্মিনালেও একই চিত্র দেখা গেছে। বাসস্ট্যান্ডজুড়ে যাত্রীদের আসা-যাওয়া থাকলেও তারা স্বস্তিতে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। মাহমুদুল হাসান নামে এক যাত্রী জানান, আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার ঈদের পর ফেরার অভিজ্ঞতা অনেকটা স্বস্তিদায়ক।
পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সদস্য তোফায়েল হোসেন বলেন, ঈদের পর সাধারণত তৃতীয় বা চতুর্থ দিন থেকে ঢাকায় ফিরতি যাত্রীর চাপ বাড়ে। এবার লম্বা ছুটি হওয়ায় একটু পরে মানুষ ফিরছে। প্রতিটি রুটে অতিরিক্ত বাস নামানো হয়েছে। তবে যাত্রীর চাপ এত বেশি যে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্য বলেন, ঈদের ছুটির পর রাজধানী এখনও তুলনামূলক ফাঁকা। ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের চাপ থাকলেও রাস্তার অবস্থা ভালো থাকায় কোথাও বড় ধরনের জট বা বিশৃঙ্খলা হয়নি।
কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন যাত্রীরা। স্টেশনজুড়ে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়।
যাত্রী তন্ময় শিকদার বলেন, ঈদের লম্বা ছুটি কাটালাম পরিবারের সঙ্গে। এবার কাজে যোগ দেওয়ার পালা। পরিবার রেখে কাজে ফেরা বরাবরের মতো কষ্টের। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা তো মানতে হবে। আসার পথে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ট্রেন যথাসময়ে ছেড়েছে।
কমলাপুর স্টেশন মাস্টার মাজহারুল ইসলাম জানান, ফিরতি পথে ট্রেনের কোনো সংকট নেই। গত মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৫টি ট্রেন ঢাকায় প্রবেশ করেছে।
সদরঘাটেও দেখা গেছে একই চিত্র। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে লঞ্চে ঢাকায় ফিরছেন মানুষ। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রাহাত খান বলেন, এই কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ছিলাম। এখন আবার ফিরলাম কর্মস্থলে। যানজট এড়াতে আগে আগে ফিরলাম। ঈদের আনন্দ শেষ, এখন জীবনযুদ্ধ শুরু।
করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ
দেশে করোনাভাইরাসের নতুন একটি উপধরনে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ায় গত বুধবার ১১ দফা নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে বাস, ট্রেন এবং লঞ্চ টার্মিনালে এসব নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে ছিল না মাস্ক। ভিড়ের কারণে তারা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা মানতে পারেননি।