তিরিশ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুতে দিনে অন্তত ৩০টি ট্রেন চলবে। এটিই ছিল পরিকল্পনা। পরী বানু পরী হয়ে উড়ে গেছে কল্পনার ফানুস রেখে। এখন এক রেকে জাহানাবাদ/রূপসী বাংলা, সুন্দরবন, বেনাপোল, মধুমতী ও নকশিকাঁথা পদ্মা সেতুকে গমগমিয়ে মাতালেও ভাঙা-জামদিয়া রেলপথ দেখে শুধু জাহানাবাদ/রূপসী বাংলার নাচন। ২৪ ডিসেম্বর ঘটা করে যখন উদ্বোধন হলো একটি রেক দিয়ে জাহানাবাদ/রূপসী বাংলা নামে দুটি ট্রেন, সেদিনের ট্রেনে গিয়েছিলাম নড়াইল। পথে পথে সে কী বরণ! মুকসুদপুর, নগরকান্দা, কাশিয়ানী, লোহাগড়া ও নড়াইলে কী উচ্ছ্বাস! লোকালয়ে ট্রেন এলো। ঢাকা এসে গেল ঢিল ছোড়া দূরত্বে। তবে সেই রেলপথে সপ্তাহে এক দিন সোমবার কোনো ট্রেনের বাঁশি বাজে না। সেদিন জাহানাবাদ/রূপসী বাংলা ট্রেনের ছুটি। শুধু ট্রেন নয়, সোমবারে ভাঙা-জামদিয়া সেকশনে সবার ঘুমপাড়ানিয়া। আশা ছিল ১০ মার্চ চালু হওয়া নতুন সময়সূচিতে ট্রেন বাড়বে, বাড়েনি। বলা হয়, কোচ নেই। অথচ পদ্মা সেতু দিয়ে নড়াইল হয়ে খুলনা/যশোর ট্রেন যাবে বলে কেনা হয়েছিল ১০০ খানা কোচ। সেসব কোচ ভাগাভাগি হয়ে চলে গেছে নানান দিকে, শুধু পদ্মা সেতুর ভাগেই জোটেনি বরাদ্দ।

থাকত যদি একটা রেক অন্তত গোটা দশেক কোচ নিয়ে, তাহলে হতে পারত একটি নতুন ট্রেন; যেটি দাপাতে পারত পদ্মা সেতু আর ভাঙা-জামদিয়া সেকশন। কেমন হতো ট্রেনটা? সকাল ৬টায় ছাড়ত ঢাকার শহরতলি প্ল্যাটফর্ম, ঠিক ৯টায় পৌঁছে যেত যশোর। না, যশোরে কোনো ঝাড়পোঁছ নয়, লোকো ঘুরিয়ে ৯:১৫-তে খুলনার পথে ছুটে পথে নোয়াপাড়া থেমে ১০:১৫-তে খুলনা পৌঁছে হবে ঝাড়পোঁছ। ঢাকা থেকে ওই ট্রেনে বিক্রি হবে যশোর ও খুলনার টিকিট। সেই সঙ্গে পথে আর যে যে স্টেশনে থামবে সেখানকার টিকিট। ১১টায় খুলনা ছেড়ে এ যাত্রায় যশোর না গিয়ে ১৪:৩০-এ ঢাকা। ঢাকায় দমটম নিয়ে ১৫:৩০-এ এবার খুলনামুখী যাত্রা, অনায়াসে ১৯:০০-এ খুলনা পৌঁছে লোকো রিভার্স করে ১৯:১৫-এ খুলনা ছেড়ে ২০:১৫-তে যশোর। এ যাত্রায় ঢাকা থেকে যাত্রীরা কিনতে পারবেন খুলনা ও যশোরের টিকিট। খুলনার যাত্রীরাও কিনতে পারবেন যশোর, ঢাকাসহ পথিমধ্যের স্টেশনের টিকিট। যশোরে লোকো রিভার্স করে ২০:৩০-এ ঢাকার পথে দে ছুট; ২৩:৩০টায় ঢাকায় পৌঁছে লম্বা বিরতি।
ইশ, হবে কি এমন একটি ট্রেন! যদি লোকো জোটে আর জোটে একটি রেক, তবে হবে কি এমন একটি ট্রেন? ট্রেনের নাম হতে পারে দখিনা ১, ২, ৩, ৪। সাপ্তাহিক বিরতি থাকুক শুক্রবারে। হলফ করে বলছি ট্রেনটি চালু হলে চিত্রা আর সুন্দরবন এক্সপ্রেসের জন্য খুলনা-যশোরের যাত্রীরা হত্যে দেবে না। কোচ নেই? নিকট ভবিষ্যতে ‘মৈত্রী’ আর ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ চালুর সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। অথচ ওই দুই ট্রেনের রেক দিব্বি পড়ে আছে ঈশ্বরদীর ইয়ার্ডে, বিবর্ণ হচ্ছে রোদে তাপে। আপাতত পড়ে থাকা ওই রেক দিয়েই না-হয় চালু হোক দখিনা এক্সপ্রেস। হলে খুলনা, যশোর, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী, নগরকান্দা, মুকসুদপুরের মানুষ বড়ই উপকৃত হতো।

আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা