স্বপ্নের পেছনে ছোটা স্বপ্নীল সুলতানা কুমিল্লার প্রথম বাইক ও স্কুটি প্রশিক্ষক
Published: 16th, March 2025 GMT
কয়েক বছর আগেও কুমিল্লা নগরের সড়কে কোনো নারী মোটরসাইকেল বা স্কুটি চালিয়ে চলাচল করছেন—এমন দৃশ্য চোখে পড়ত না। এখন নগরের সড়কে প্রায়ই নারীদের মোটরসাইকেল বা স্কুটি চালাতে দেখা যায়। এই পরিবর্তনের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছেন স্বপ্নীল সুলতানা নামের এক নারী।
কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে স্বপ্নীল। কুমিল্লা নগরে তিনিই প্রথম নারীদের বাইক ও স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। গত সাত বছরে তিনি আড়াই হাজারের বেশি নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এরই মধ্যে নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে চালু করেছেন স্কুটি ও বাইক প্রশিক্ষণ সেন্টার। যেখানে তাঁর সঙ্গে নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আরও পাঁচ তরুণী।
স্বপ্নীল সুলতানা কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর করেন। ২০১৭ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর চাকরি হয়। স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান বলে সেই চাকরি দুই বছরের মাথায় ছেড়ে দেন। তাঁর স্বামী প্রাণিসম্পদ বিভাগে চাকরি করেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁদের সংসার।
শুরুর কথা জানতে চাইলে স্বপ্নীল সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৯ সালে স্কুলে পড়ার সময় এক আত্মীয়ের কাছ থেকে বাইক চালানো শিখেছিলেন। ২০১১ সালে এসএসসি পাস করেন। পরের বছর একাদশ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। তবে স্বামীর উৎসাহে পড়াশোনা চালিয়ে যান। বিয়ের পর মাঝেমধ্যে স্বামীর মোটরসাইকেল চালাতেন। নিজের একটা মোটরসাইকেলের স্বপ্ন ছিল তাঁর। পরিবারের কেউ অবশ্য এটা সমর্থন করেননি। ২০১৭ সালে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে জমানো কিছু টাকা এবং বাকিটা কিস্তিতে নিয়ে তিনি একটি স্কুটি কেনেন। ওই বছরই তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান। স্কুটিতে করেই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতেন তিনি। তখন কেউ কেউ কটুকথা বলতেন, কেউ আড়চোখে দেখতেন, অনেকেই উৎসাহ দিতেন। নারীরা জানতে চাইতেন, তিনি কোথায় স্কুটি চালানো শিখেছেন, তাঁরাও শিখতে চান। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি নারীদের মোটরসাইকেল ও স্কুটি চালানো শেখাবেন।
স্বপ্নীল সুলতানা বলতে থাকেন, ২০১৮ সাল থেকে তিনি নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। প্রথমে মাত্র তিনজনকে দিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর তিনি ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে প্রচার চালান। আস্তে আস্তে আগ্রহী নারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে করোনার কারণে কয়েক মাস শেখানোর কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাঁর ভাষ্য, এখন পর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি নারী তাঁর এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৫০০ জন নিয়মিত স্কুটি চালাচ্ছেন। কুমিল্লা নগর ও আশপাশে নিয়মিত স্কুটি ও মোটরসাইকেল চালান—এমন নারীর সংখ্যা প্রায় ৩৫০।
এখন পর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি নারী স্বপ্নীল সুলতানার এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর
গাজীপুর নগরের কাশিমপুর শ্মশান মন্দিরে আংশিক প্রস্তুত ছয়টি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। তবে কারা প্রতিমাগুলো ভাঙচুর করেছে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কাশিমপুর শ্মশান মন্দিরে প্রতিবছরের মতো এবারও পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য তৈরি করা হচ্ছিল বিভিন্ন প্রতিমা। প্রতিমাগুলো তখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি, রংও করা হয়নি। গতকাল দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে কারিগর ও মন্দিরসংলগ্ন লোকজন কাজ বন্ধ রেখে চলে যান। পরে সন্ধ্যায় মন্দিরে এসে তাঁরা দেখতে পান, পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায়, পূজা শুরু হয়নি বলে এখনো পাহারার ব্যবস্থা করা হয়নি। মন্দিরের আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই। কারা প্রতিমাগুলো ভাঙচুর করেছে, তা তারা জানে না। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিমাগুলো আবার মেরামত করা হবে।
অগ্রগামী যুব সংঘ সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপের সভাপতি প্রবীর দত্ত বলেন, ‘গতকাল পূজা মন্ডপের কাজ শেষে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। বিকেল বেলা কে বা কারা পূজামন্ডপে ঢুকে ৫-৬ টি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে; অন্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্নের মধ্যে আছি।’
কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, চুরি করতে এসে দুর্বৃত্তরা ভেতরে ঢুকে প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। প্রতিমাগুলোর কাজ এখনো শেষ হয়নি। সেগুলো মেরামতের কথা জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’