বিএসইসিতে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় প্রশাসনিক মামলা ও তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব
Published: 17th, March 2025 GMT
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) ৫ মার্চ সংঘটিত বিশৃঙ্খলায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত বিএসইসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা পরিচালনায় কমিটি গঠনের জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। বিএসইসির পক্ষ থেকে এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে এসব সুপারিশ করা হয়। কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫ মার্চ চার দফা দাবিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তিন কমিশনারকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। এ সময় তাঁরা বিএসইসি ভবনের বিদ্যুৎ–সংযোগ ও সিসিটিভি বন্ধ করে দেন। পরে সেনা হস্তক্ষেপে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার হয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনার। ওই দিনই সংস্থাটির বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পুরো কমিশনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।
এ ঘটনায় বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তাকে আসামি করে ৬ মার্চ রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন বিএসইসির চেয়ারম্যানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত গানম্যান আশিকুর রহমান। ওই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান (৫৮), নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম (৫৭), নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম (৫৪), পরিচালক আবু রায়হান মো.
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে এবং কমিশনার মো. মহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখের উপস্থিতিতে কমিশনের নির্ধারিত সভাকক্ষে সভা চলাকালে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাসহ আরও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কমিশনের সভাকক্ষে জোরপূর্বক ও অনধিকার প্রবেশের মাধ্যমে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করেন। এরই মধ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কমিশনের মূল ফটকে তালা দেন, সিসি ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই, কমিশনের লিফট বন্ধ করে দেন এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে মারাত্মক অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন।
সম্প্রতি এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ কমিশনের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে লিখিতভাবে তুলে ধরেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। সেখানে বেশ কিছু করণীয় বিষয়ে সরকারের সহায়তাও চাওয়া হয়। সেই সহায়তার আওতায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক তদন্তের উদ্যোগ ও জড়িতদের বিষয়ে বিভাগীয় মামলা পরিচালনায় কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, কমিশনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চেইন অব কমান্ড নিশ্চিত করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, আইন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জরুরি ভিত্তিতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে দেওয়া এ–সংক্রান্ত বিএসইসির চিঠিতে আরও বলা হয়, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো বিবেচনায় বিএসইসির নিরাপত্তায় সশস্ত্র আনসার নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথাও জানানো হয়। এ ছাড়া কমিশনের কাজে গতি আনতে প্রেষণে জরুরি ভিত্তিতে ১৯ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই ১৯ কর্মকর্তার মধ্যে ৩ জন কমিশনের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার, ৩ জন পরিচালক পদমর্যাদার, ১ জন কমিশন সচিব ও ১২ জন যুগ্ম বা অতিরিক্ত পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা চাওয়া হয়েছে।
বিএসইসিতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় কমিশনের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বাইরে বহিরাগত কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা গোয়েন্দাদের মাধ্যমে খতিয়ে দেখতেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি। সেই সঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিরাপত্তা জোরদারেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
বিএসইসির চিঠিতে সব মিলিয়ে ১২টি সুপারিশ করা হয়। এসব সুপারিশের মধ্যে আরও রয়েছে বিএসইসির সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত সিএমডিপি প্রকল্পের অর্থ তছরুপের ঘটনা তদন্ত, এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া মাশরুর রিয়াজের নিয়োগের বিষয়ে বিএসইসির কর্মকর্তাদের বিরোধিতার বিষয় তদন্তেরও সুপারিশ করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কর মকর ত ব এসইস র চ স প র শ কর ন ব এসইস ল ইসল ম সরক র র পর চ ল গঠন র ঘটন য় তদন ত সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ জন্য দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উভয় পক্ষের এ বৈঠকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তুর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এ বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আজকে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আমরা পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরব। বিশেষ করে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানাবো। আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম রাইজিংবিডিকে বলেন, “ঈদের আগেই এ বৈঠকের বিষয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিএসইসি। আমরা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করব। আলোচনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।”
তবে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা বিএসইসির এ আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছি। একই সঙ্গে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করা হবে। এ জন্য আজকে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”
ঢাকা/এনটি/ইভা