Prothomalo:
2025-05-01@03:23:36 GMT

ইয়াসিন দরজি

Published: 19th, March 2025 GMT

মতিহার সিনেমা হলের পাশ দিয়ে যে সরু গলিটা ঢুকে গেছে, তার মাঝবরাবর ইয়াছিন দরজির দোকান। ফুটপাতে কনডেন্সড মিল্কের চা–দোকান, ঠেলাগাড়িতে তরকারি বিক্রেতা, মোটর পার্টসের দোকান, ডিসপেনসারি, যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা রিকশা-ট্যাক্সি, ভিড়ের গিজগিজ মানুষ—চারপাশের এসব বিচিত্র হাঁকডাকের মধ্যে বৈশিষ্ট্যহীন একটি দোকান। কোনো সাইনবোর্ড নেই। পুরোনো দরজি, হাতের কাজ ভালো। লোকের মুখে মুখে ইয়াছিন দরজির নাম ছড়িয়ে যায়।

এখন গলিটার নামই হয়ে গেছে ইয়াছিন দরজির গলি। তাই দূরদূরান্ত থেকে লোকজন খুঁজে খুঁজে এসে শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ব্লাউজ, সালোয়ার-কামিজ সেলাই করতে দিয়ে যায়। প্রথম দিকে বড় ছেলে সেলিম পড়ালেখার ফাঁকে বাবার কাজে সাহায্য করত। মেশিনে বসে নিজে নিজে সেলাইয়ের কাজ, কাটিং, বোতাম লাগানো, ঘের তোলার কাজ শিখে ফেলেছিল। এমব্রয়ডারির কাজেও দক্ষ হয়ে উঠেছিল। ম্যাট্রিক পাস করার পর সিটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি করে দিয়েছিল ইয়াছিন দরজি।

মনে বড় আশা ছিল, ছেলেটা পড়ালেখা শিখে একদিন মান্যগণ্য মানুষ হবে। কিন্তু ছেলেটার মাথায় কী যে ঢুকল, পড়ালেখা করল না। কেবল বলে—বিদেশ যাব, বিদেশ যাব। স্বাধীনতার পর তখন আবুধাবি, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতারে প্রচুর লোক যাচ্ছে। ছেলে দোকানেও বসে না, কলেজেও যায় না। ছেলের মা–ও যোগ দিয়েছে ছেলের দলে। ইয়াছিন দরজি করবে কী?

ধারকর্জ করে ইয়াছিন দরজি পুত্র সেলিমকে কাতার পাঠিয়ে দিয়েছে। একনাগাড়ে চার বছর কাতারে থেকে দেশে এসেছে সেলিম। টাকাপয়সা যা পাঠিয়েছে, ধারকর্জ শোধ করে সব কাজে লাগিয়েছে সে। কাঁচা ঘরটা সেমিপাকা করেছে। ছেলে আয়রোজগার করে, সবাই বলে সেলিমের জন্য এবার বউ আনো ঘরে। ইয়াছিনের মা–ও বলে, সেলিমকে বিয়ে করাও। দেখেশুনে হাজি বাড়ির ছামাদের মেয়ে রাহেলাকে বউ করে ঘরে এনেছে ইয়াছিন। ষোলো বছর ধরে সেলিম কাতার আছে। মাশা আল্লাহ ছেলের ঘরের দুই নাতি এখন বড় হয়েছে। বড় নাতি পারভেজ প্রতিদিন দুপুরবেলায় দাদুর জন্য ভাত নিয়ে আসে। স্থানীয় গরীবে নেওয়াজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ে সে। ছোট নাতি মুরাদ পড়ে ক্লাস থ্রিতে। ছয়–সাত বছর আগে ইয়াছিন দরজির স্ত্রী সফুরা খাতুন মারা গেছে। জ্বরজারি কিছু নাই, একদিন গভীর রাতে সফুরা বলে, ‘আমার বুকে ব্যথা, আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে, আমারে ধরো, ধরো।’

ইয়াছিন দরজি এত রাতে কোথায় যাবে, কী করবে বুঝতে পারে না। ডিসপেনসারিতে একজন মহিলা ডাক্তার বসে। তাড়াতাড়ি ডাক্তারের বাসায় গিয়ে, ঘুম থেকে জাগিয়ে ডাক্তারকে নিয়ে আসে ইয়াছিন। ডাক্তার রোকেয়া বেগম স্টেথিস্কোপ বুকে ধরে, শিরা দেখে বলে—‘নেই’।

ইয়াছিন দরজি কাঁদে আর বলে, ‘আহা রে! সফুরা, আমারে তুমি একবার হাসপাতালে নেওয়ার টাইম দিলা না।’

ছোট ছেলেটা মা মা বলে গড়িয়ে গড়িয়ে কেঁদেছে। মা মরে যাওয়ার পর লতিফ শূন্য দৃষ্টি নিয়ে এদিক–ওদিক কয়েক দিন ঘোরাফেরা করেছে। তারপর গোঁ ধরল, সে–ও বড় ভাইয়ের মতো বিদেশ যাবে। টাকাপয়সা জোগাড় করে লতিফকেও বিদেশে পাঠানো হয়েছে। লতিফ এখন সৌদি আরব আছে। মাঝেমধ্যে টেলিফোন করে, খোঁজখবর নেয়। বড় ছেলেটা এখন আর বাপের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। নিজের আলাদা সংসার হয়েছে, ছেলেপেলে হয়ে গেছে, আর কী!

দোকানে কর্মচারী আছে তিনজন—রমিজ, লুৎফর আর তাহের। তারাও অনেক দিনের পুরোনো। কিশোর বয়সে ইয়াছিন দরজির দোকানে ঢুকেছে। এখন প্রায় মাঝবয়সে পৌঁছে গেছে। বিয়ে করে সংসার পেতেছে। তাদেরও ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেছে। আয়রোজগার ভালো, তাই অন্য কোথাও যায়নি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেলাই মেশিনের একটানা গরর গরর আওয়াজ শোনা যায়। হাতে কাজের ফুরসত নেই। ছোটখাটো কারখানার মতো চলে দরজির দোকান।

ঈদ এলে দরজির দোকানে ভিড়টা বেড়ে যায়। ইয়াছিন দরজির কদরও তখন বাড়ে। নির্ঘুম, একটানা রাত জেগে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায় শরীর। ‘অর্ডার ক্লোজ’ স্টিকার লাগানো থাকা সত্ত্বেও কাস্টমার ঢুকে হাত-পা ধরে রিকোয়েস্ট করে। পরিচিত, পুরোনো কাস্টমার হলে তো কথা নেই। তাদের ফিরিয়ে দিতে পারে না ইয়াছিন। এভাবে রিকোয়েস্ট রাখতে গিয়ে বিপাকে পড়ে ইয়াছিন দরজি। হিমশিম খেতে হয় তাকে। সময়মতো কাপড় ডেলিভারি দিতে না পারলে ঝগড়া-চেঁচামেচি-ফ্যাসাদও কম হয় না। প্রতিবছর ঈদের সময় প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটে। চল্লিশ-বেয়াল্লিশ বছরের দরজি–জীবন তার। মানুষের কাপড় সেলাই করতে করতে একটা জীবন পার করে দিয়েছে সে। এই জীবনে ঈদের চাঁদ দেখার সুযোগ তার হয়নি। ওই সময়টা তার দমবন্ধ ব্যস্ততার মধ্যে কাটে প্রতিবছর। এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ ইয়াছিন দরজি। কত হবে তার বয়স? সে নিজেই কি জানে? সত্তর–পঁচাত্তর! বেশিও হতে পারে। সেকালে তো কেউ জন্মসাল লিখে রাখত না। জন্মের হিসাব ছিল মুখে মুখে।

‘ওই যে, একবার কার্তিক মাসে বড় তুফান হইছিল, তুফানের পর তুই হইছিস!’ 

 ছোটবেলায় মায়ের মুখে শোনা। জন্মের বৃত্তান্ত এইটুকু। 

চোখে ভালো দেখে না আজকাল। কোঠরাগত চোখে হাই পাওয়ারের চশমা। সরাসরি তাকালে মনে হয়, স্বচ্ছ কাচের গ্লাস তোকমায় ভেজানো পানি। চোখের ছানি অপারেশন করিয়েছে একবার। মুখে অজস্র বলিরেখা। গালের দুপাশের চামড়া ঝুলে পড়েছে। মুখে দাঁত একটিও আর অবশিষ্ট নেই। মাথাটা হয়ে গেছে শ্রাবণ মাসের পাকা তালের মতো। তালুতে চুল নেই, কানের দুপাশে ও পেছনে শণের মতো পাতলা ক–গাছি চুল যেন অকারণেই রয়ে গেছে। সেলাই মেশিনে মাথা ঝুঁকে কাজ করতে করতে ইয়াছিন দরজির শরীর এখন ঈদের চাঁদের মতো বাঁকা হয়ে গেছে।

 পুরোনো কাস্টমার, অনেক দিনের পরিচিত কেউ এসে ইয়াছিন দরজিকে দেখলে সালাম দেয়। আবার অবাকও হয়, ‘চাচা, আপনি এখনো বাঁইচ্ছা আছেন!’

কথাটা জিজ্ঞেস করে আইনুদ্দিন নিজেই যেন শরমের মধ্যে পড়ে যায়। সলজ্জিত চোখে ইয়াছিন দরজির ভাঁজপড়া মুখের দিকে তাকায়। জিব কেটে, বলে, ‘চাচা, আমার কথায় কিছু মনে করেননি তো?’

ইয়াছিন দরজিও বোঝে, কথাটা আইনুদ্দিন ভুলে বলে ফেলেছে। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ইয়াছিন দরজি বলে, ‘হয়াত মৌত হইলো আল্লার কাছে। যেদিন ডাক আসবে, সেদিন কেউ ধরে রাখতে পাইরবো না।’

দিন চলে যায়, দিন থেমে থাকে না। ইয়াছিন দরজিরও দিন যাচ্ছে। এবার রোজা পড়েছে বর্ষার মধ্যে। বৃষ্টিও হচ্ছে এবার বেশি। সন্ধ্যায় ধারা বৃষ্টি নামলে কোনো কোনো দিন মানুষ তারাবিহর নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে পারে না। শহরের কোনো কোনো অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। হাঁটুপানি, কোমরপানিতে ডুবে যায়।

বান-বর্ষার প্রতিকূলতার মধ্যেও ঈদের প্রস্তুতি চলে। শবে বরাতের পর থেকে শুরু হয়েছে উৎসব আয়োজনের, রোজা যত শেষ হয়ে আসছে, ঈদ ঘনিয়ে আসছে, মানুষের ব্যস্ততা তত বেড়ে গেছে। ঈদের আগেই সব কাজ শেষ করা চাই। সারা রাত মার্কেটগুলো খোলা থাকে, ক্রেতারও কমতি নেই। দিনের চেয়ে রাতে মার্কেটগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। নারী-শিশুদের প্রচণ্ড ভিড়, রাস্তায় দীর্ঘ যানজট। কেনাকাটা চলছে ধুমসে। ইয়াছিন দরজির দোকানেও ভিড়। তিনজন কর্মচারীর দম ফেলার সময় নেই। ইয়াছিন দরজির শরীরটা এবার ভালো যাচ্ছে না। বর্ষার পানি মাথার তালুতে একটু পড়তেই গায়ে জ্বর এসে গেল। মাথাটা ভারী এবং সর্দি-কাশিতে নাক-বুক জ্যাম হয়ে গেছে। দরজির দোকানে সেলাই মেশিনের একটানা আওয়াজে কানে তালা লেগে যায়। হরদম কাস্টমার আসছে-যাচ্ছে। কাল সকালেই ঈদ, ইফতারের পর ইয়াছিন দরজি দোকানের মধ্যেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল। তাকে কয়েকজন ধরাধরি করে ট্যাক্সিতে তুলে নিয়ে গেল হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের কাজ শেষ করে ইয়াছিনকে বেডে শোয়ানো হলে ডিউটি ডাক্তার যখন হাত ধরলেন, তখন ইয়াছিন দরজি শরীর নিথর। রাত পোহালে ঈদ। সবাই নতুন জামাকাপড় পরে ঈদের নামাজে যাবে। খুশির ঈদ, আনন্দের ঈদ। ঘরে ইয়াছিন দরজি অপেক্ষা করছে কাফনের কাপড় পরে, সে–ও যাবে। তবে ঈদগাহে নয়, গোরস্তানে।

সকালে ঈদের নামাজ। ইয়াছিন দরজির দাফনের কাজটা তাই বাদ আসরই হয়। জানাজার সময় সবাই দেখে খাটের ওপর শোয়ানো সাদা কাফনে মোড়া ইয়াছিন দরজি। ঈদের চাঁদের মতো বাঁকা হয়ে আছে।

 কী সুন্দর ঈদের চাঁদ!

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দরজ র দ ক ন ক স টম র ঈদ র চ

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ