‘ক্লিন ইমেজের’ আড়ালে ‘কলঙ্ক’, দুদকের জালে জিএম কাদের
Published: 20th, March 2025 GMT
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) রাজনীতিতে তার দলীয় নেতাদের বর্ণনা অনুযায়ী ‘ক্লিন ইমেজের’ নেতা। তবে তার আড়ালে অবৈধ সম্পদই শুধু গড়েননি, বরং বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে কয়েকটি দেশে সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। জিএম কাদেরের ক্লিন ইমেজের আড়ালে এই ‘কলঙ্ক’ খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ ও নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা ‘অপকর্ম’ করে গড়া বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নামে-বেনামে সম্পদ পাচার করেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে দুদক। ফলে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.
আরো পড়ুন:
মেয়েসহ আমুর অবৈধ সম্পদ সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা, ৩ মামলা
টুঙ্গিপাড়ার সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়িতে দুদকের অভিযান
তিনি বলেন, “গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জিএম কাদের) বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
আক্তার হোসেন জানান, জি এম কাদের সিঙ্গাপুর, লন্ডন, সিডনিসহ বিভিন্ন দেশে নামে-বেনামে সম্পদ পাচার করেছেন। দুদকের গোপন অনুসন্ধানে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের ‘যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে’। এজন্য তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন দিতে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকার ঘুষ গ্রহণ করা হয়, যার মূল সুবিধাভোগী ছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
চুক্তি অনুযায়ী, অর্থ পরিশোধ না করায় অধ্যাপক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তার স্থলে জিএম কাদেরের স্ত্রী শরীফা কাদের সংসদ সদস্য হন।
অভিযোগে এ-ও বলা হয়, জিএম কাদের জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হন এবং দলীয় পদ বাণিজ্য ও মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেন, যা পরে বিদেশে পাচার করেছেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট হলেও বর্তমানে ৬০০ থেকে ৬৫০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পদ বাণিজ্যের প্রমাণ।
অভিযোগ আছে, দুটি সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনের প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনি মনোনয়নের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। তাদের কাউকে কাউকে এই টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে জমিজমাও বিক্রি করতে হয়েছে। জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে নিজে, কখনো মহাসচিব ও তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য মোটা অংকের টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে নেতাকর্মীদের।
যদিও জিএম কাদের সব সময় নিজেকে সৎ রাজনীতিক হিসেবে দাবি করে আসছেন। তার অনুগত নেতাকর্মীরাও বলে থাকেন তিনি ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, জিএম কাদেরের নামে নগদ ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। তার স্ত্রী শরীফা কাদেরের নামে নগদ ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ব্যাংকে ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং ৮০ লাখ টাকা মূল্যের তারও একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে লালমনিরহাট এবং ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে।
১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া জিএম কাদের জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র জ এম ক দ র র প চ র কর কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব