ইসরায়েলের হত্যা-আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ
Published: 21st, March 2025 GMT
যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিভিন্ন শহরে আকাশ ও স্থলপথে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। হামলায় ইতোমধ্যে ৬০০ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। এর মধ্যে অন্তত ২০০ জন শিশু রয়েছে। গাজায় ইউনিসেফের মুখপাত্র রোসালিয়া পোওলিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইসরায়েলের এ নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রংপুর:
শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুরে রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বাংলার চোখ’ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়ো, ফিলিস্তিনকে রক্ষা করো’, ‘ফিলিস্তিনের কান্না আর না, আর না’ স্লোগান সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
গাজীপুরে দুই কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বাংলার চোখ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন আশরাফী।
পঞ্চগড়:
আজ জুমার নামাজের পর পঞ্চগড়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও ঈমান আক্বীদা রক্ষা কমিটিসহ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলগুলো শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলকারীরা এসময় ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন জাতিসংঘ জবাব চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
ঈমান আক্বিদা রক্ষা কমিটির সভাপতি আব্দুল হান্নান, সাধারণ সম্পাদক ক্বারী মো.
বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করছে। গত কয়েকদিনে সহস্রাধিক নিরীহ ফিলিস্তিনি গণহত্যার শিকার হয়েছেন। বিশ্ব মুসলিমকে জেগে উঠতে হবে। চুপ থাকার সময় শেষ।
সুনামগঞ্জ:
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও ভারতে মুসলমানদের ওপর আগ্রাসের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ জুমার নামাজ শেষে পৌর শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে সচেতন তাওহীদী জনতার ব্যানারে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাদের পাশাপাশি নানা শ্রেণি পেসার মানুষ অংশ নেন।
জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর গণহত্যা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমেরিকা ইসরায়েলকে সবপ্রকার সহযোগিতা করে। তাদের এ দ্বিচারিতা বন্ধ করতে হবে। বক্তারা বিশ্বের সব দেশকে আহ্বান জানান, তারা যেন তারা নীরবতা ভেঙে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ান।
গোপালগঞ্জ:
ইসরায়েলের গাজা দখলের চক্রান্ত ও ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গোপালগঞ্জ ওলামা পরিষদ এ বিক্ষোভের আয়োজন করে।
জুমার নামাজের পর গোপালগঞ্জ কোর্ট মসজিদ এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মুসল্লিরা। মিছিলটি জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে গোপালগঞ্জ কোর্ট মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গোপালগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রেজাউল করিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা তসলিম হোসাইন শিকদার, অ্যাডভোকেট গোলাম মেহেদী খান, এস.এম বাবুল কায়ুম সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এ বিক্ষোভ কর্মসূচীতে বিভিন্ন ইসলামীক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।
অপরদিকে, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও রজমান মাসে নির্বিচারে ফিলিস্তিনি নারী শিশুদের হত্যা করছে ইসরায়েল। মুসলিম বিশ্ব এখনো চুপ করে বসে আছে। ইসরাইলি আগ্রাসন দমাতে হবে। পাশাপাশি তাদের পণ্য বর্জন করতে হবে।
রাঙামাটি:
রাঙামাটি শহরের বনরুপা জামে মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও স্টুডেন্টস এন্ড সিটিজেন অব রাঙামাটি। মিছিলটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘুরে বনরুপা পেট্রোল পাম্পে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির রাঙামাটি জেলার সদস্য মো. জালাল উদ্দীনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ইসলামী ছাত্র আন্দোলন রাঙামাটি জেলার সভাপতি মো. হোসাইন মল্লিক, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মিনহাজ মুরশীদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলার সভাপতি মো. আবদুস সালাম, ইসলামী ছাত্রশিবির রাঙামাটি জেলার সভাপতি শহিদুল ইসলাম সাফি।
বক্তারা বলেন, রমজান মাসে ইসরায়েল নিরীহ ফিলিস্তিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করছে। ফিলিস্তিদের জীবন আজ বিপন্ন। মানবতার দূত হিসেবে খ্যাত জাতিসংঘ ইসরায়েলের বিপক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সারা বিশ্বের মুসলিম জনতা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে ইসরায়েল পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এসময় ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণারও দাবি জানান তারা।
অপরদিকে বনরুপা জামে মসজিদ মুসল্লি পরিষদের ব্যানারেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে বনরুপা মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বনরুপা জামে মসজিদের খতিব আলহাজ ইকবাল হোসেন আল ক্বাদেরী, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ুব চৌধুরীসহ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ফিলিস্তিনের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার জন্য ইসরায়েলকে একদিন জবাবদিহি করতে হবে। সেহরি ও ইফতারের সময় বোমা নিক্ষেপ করে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে, অনেককে আহত করা হচ্ছে। আমরা মুসলিম বিশ্বের কাছে দাবি জানাই, অবিলম্বে ইসরাইলকে নিষিদ্ধ রাষ্ট্র ঘোষণা করার।
টাঙ্গাইল:
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মিছিল বের করে তারা। সেটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় তাদের বিভিন্ন ধরনের ইসরায়েল বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ইসলামী ছাত্রশিবিরের টাঙ্গাইল জেলা সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, অর্থ সম্পাদক আব্দুল আলিম।
বক্তারা বলেন, ইসরায়েল ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষকে হত্যা করছে। তাদের হামলায় যারা মারা যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই শিশু এবং নারী। ইসরায়েলের চালানো হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দ্রুত গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। এসময় ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা। শহরের শান্তিমোড়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে একটি মিছিল বের হয়ে বিশ্বরোডে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে গাজাবাসীর শান্তি ও ইসরায়েলের ধ্বংস কামনা করে মোনাজাত হয়।
সামাবেশে বক্তারা বলেন, ইসরায়েলের ইহুদিরা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজার মুসলিমদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এর ফলে সেখানকার নারী-শিশুসহ অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছেন। আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অনাহারে দিন কাটছে তাদের। সেখানকার মানুষরা মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত। এখন পৃথিবীর মানবাধিকার সংগঠনগুলো কোথায়? বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ গঠন করা হয়েছে। এই বর্বর হামলার বিরুদ্ধে তারা কোনো কথা বলেনি। আমরা এসবের জবাব চাই।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাহিন খান, মুত্তাসিন বিশ্বাস, শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ ও মাহফুজ, রামকৃষ্টপুর মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, কোর্ট মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. সুলতান আলী, আরামবাগ মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. জাহিদ।
পাবনা:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাবনার উদ্যোগে শুক্রবার (২১ মার্চ) বাদ জুমা পাবনার চাপা বিবি ওয়াকফ মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পাবনা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ইন্দারা মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সেখানে বক্তব্য রাখেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাবনার আহ্বায়ক বরকতউল্লাহ ফাহাদ, মুখ্য সংগঠক ইউসুফ আরফান বিপ্লব, যুগ্ম আহ্বায়ক মিনহাজুর হোসেন রাতুল, শফিকুল ইসলাম শাকিল, রাসেল আহমেদ।
বক্তরা বলেন, “সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের দোসররা বলে, তারা নাকি শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী। অথচ তারাই বিশ্বে অশান্তি প্রতিষ্ঠাকারী। যদি বর্বর ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো গণহত্যা বন্ধ না হয় এবং মুসলিম উম্মাহ যদি জিহাদের ডাক দেয় আমরা সেই জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত আছি।
সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরা জেলা শহরের খুলনা রোডস্থ মোড় শহীদ আসিফ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সাতক্ষীরা শহর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মো. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির শহর শাখার সভাপতি আল মামুন।
আল মামুন বলেন, “চার শতাধিক ঘুমন্ত ও সেহেরিরত ফিলিস্তিনি ভাই-বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। বিশ্ব মানবতার এই দুর্দিনে আমাদের সবাইকে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের দায়ে নেতানিয়াহু সরকার ও ইসরায়েলকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”
বিক্ষোভ মিছিল আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা শহর সেক্রেটারি খোরশেদ আলম, সাতক্ষীরা শহর শিবিরের সাবেক সভাপতি আবু তালেব ও আনিছুর রহমান,সাতক্ষীরা শহর শাখার অফিস সম্পাদক নূরুন্নবী, অর্থ সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ, সাহিত্য সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
নেত্রকোণা:
নেত্রকোনা বড়বাজার শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জেলা খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তরা বলেন, গাজায় নিরীহ মুসলমানদের হত্যা ও ভারতে মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমরা এই নৃশংসতা বন্ধে জাতিসংঘ, ওআইসি, আরবলীগসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কার্যকর হস্তক্ষেপ দাবি করছি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মোতালিব খান ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বীন ইয়ামিন। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব গাজী মুহাম্মাদ আবদুর রহীম রুহী।
এদিকে, বাদ জুমা মোক্তারপাড়া বড় মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নেত্রকোণা জেলা শাখার উদ্যোগে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে করে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী,ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৪৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি থাকলেও গত মঙ্গলবার থেকে নির্বিচারে গাজায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।
ঢাকা/আমিরুল, নাঈম, মনোয়ার, বাদল, শংকর, কাওছার, মেহেদী, শাহীন, শাহীন, সোহেল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ম ছ ল ব র কর ম ছ ল ব র হয় ল দ শ ইসল ম গ প লগঞ জ ইসর য় ল র গণহত য র দ র স মন দ র ওপর শহর র ব শ ষ হয় ত হয় ছ বক ত র ন সড়ক বর বর স গঠন শহর শ
এছাড়াও পড়ুন:
যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
ইসরায়েল আবারও ইরানে বড় রকমের হামলা করেছে। হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায়। একদিন পর পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এতে কয়েকজন ইসরায়েলি নিহত হয়। ধ্বংস হয় তেলআবিবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ইসরায়েল তার ইরানবিরোধী এ হামলার নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। এ নাম রাখা হয়েছে হিব্রু বাইবেলের একটি চরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যে নাম ইসরায়েলের একটি শক্তিশালী ও বিজয়দীপ্ত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র উপাসনাস্থল জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়ালের একটি ফাটলে হাতে লেখা একটি চিরকুট রেখে আসার সময় ছবি তোলেন। এটি ছিল মূলত ইরানে ইসরায়েলের হামলার ইঙ্গিত।
শুক্রবার তার অফিস থেকে সেই চিরকুটে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা ছিল: ‘জনগণ সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে।’
এই বাক্যাংশটি হিব্রু বাইবেলের গ্রন্থ বুক অব নাম্বারস (গণনা পুস্তক) ২৩:২৪ পদ থেকে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে: ‘দেখো, এই জাতি একটি মহান সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে এবং একটি তরুণ সিংহের মতো নিজেকে উদ্দীপ্ত করবে; সে শিকার না খাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না এবং নিহতদের রক্ত না পান করা পর্যন্ত থামবে না।’
এই চরণটি হিব্রু বাইবেলের অ-ইসরায়েলীয় একজন নবী ও ভবিষ্যদ্বক্তা বালামের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর অংশ। সেখানে তিনি ইসরায়েলের শক্তি ও ক্ষমতার কথা বলেন। তাদের এমন এক সিংহের সঙ্গে তুলনা করেন যে নিজের ক্ষুধা না মেটানো পর্যন্ত বিশ্রামে যায় না।
অনেকেই মনে করেন, এই অভিযানের নাম ইরানের শেষ শাহ-এর পুত্রের প্রতি ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ পারস্য রাজপরিবারের প্রতীক হিসেবেও সিংহ ব্যবহৃত হতো।
ইসরায়েলের ঐশ্বরিক অধিকারের দাবিইসরায়েল প্রায়শই তার সামরিক অভিযানের নাম হিব্রু বাইবেল বা ওল্ড টেস্টেমেন্ট থেকে নেয় বা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে গ্রহণ করে। ফিলিস্তিনি ভূমির উপর ইহুদিদের তথাকথিত ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিতে ইসরায়েল এসব ধর্মীয় বিষয় ব্যবহৃত করে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।
উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো এক অভিযানের নাম দিয়েছিল, ‘অ্যারো অব বাশান।’ ‘বাশান’ শব্দটি ইসরায়েলিদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি দিয়ে মূলত সিরিয়ার দক্ষিণ ও জর্ডান নদীর পূর্বে অবস্থিত একটি অঞ্চলকে নির্দেশ করা হয়। বাশানের রাজাকে পরাজিত করে ইসরায়েলিরা সেই অঞ্চলকে দখল করেছিল।
গাজা উপত্যকার ওপর হামলা চালাতেও অস্ত্র ও অভিযানের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় প্রতীক বা অনুষঙ্গ ব্যবহার করছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু অন্তত তিনবার গাজায় আক্রমণের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় আমালেক কাহিনি ব্যবহার করেছেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রন্থ ‘বুক অব ডিউটেরনমি’(২৫:১৭) এর থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:
‘আমালেক তোমার সঙ্গে যা করেছিল তা মনে রেখো, আমরা মনে রাখি এবং আমরা যুদ্ধ করি।’
এর মধ্য দিয়ে গাজাবাসীদের উপর পূর্ণাঙ্গ হামলা করা উচিত বলে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত করেন। কারণ ডিউটেরনমির এই উদ্ধৃতি বাইবেলের স্যামুয়েল গ্রন্থে বর্ণিত আমালেকীয়দের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ধ্বংসের আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাইবেলের এ কাহিনিতে ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণকারীদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজার গোটা জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে বাইবেলের এ কাহিনিকে হাজির করেছেন নেতানিয়াহু।
গণহত্যার মামলায় নেতানিয়াহুর বক্তব্যইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রথম শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষের আইনজীবী হিব্রু বাইবেলের উদ্ধৃতির মাধ্যমে নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে তুলে ধরেন।
আইনজীবী আরও জানান, নেতানিয়াহু ৩ নভেম্বর সেনাদের উদ্দেশ্যে লেখা আরেকটি চিঠিতে একই আমালেকীয় গল্প পুনরাবৃত্তি করেন।
ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে সামরিক প্রযুক্তিইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গাজায় বোমাবর্ষণে সহায়তা করছে, তাদের নাম ‘ল্যাভেন্ডার’ এবং ‘দ্য গসপেল’, যা উভয়ই হিব্রু বাইবেলীয় ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক রাভালে মহিদিনের মতে, প্রায়ই ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসরায়েলের অস্ত্রের নামকরণ করা হয়। যেমন, স্যামসন রিমোট কন্ট্রোলড ওয়েপন স্টেশন।
জেরিকো ব্যালিস্টিক মিসাইল-এর নাম রাখা হয়েছে জেরিকো শহরের নামে। হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব যশুয়া’ অনুসারে ইসরায়েলিরা এই শহর ফিলিস্তিনিদের কাছ দখল করেছিল।
ডেভিড’স স্লিং নামক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নাম রাখা হয়েছে বাইবেলের মেষপালক ডেভিড ও বিশাল যোদ্ধা গোলিয়াথের মধ্যকার বিখ্যাত সেই লড়াইয়ের স্মরণে, যেখানে ডেভিডের বিজয় হয়েছিল। এই কাহিনী আছে হিব্রু বাইবেল ও ওল্ট টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব স্যামুয়েল’-এ।
*দ্য নিউ আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক ও হার্ভার্ডের গবেষক রাভালে মহিদিনের একটি লেখার অবলম্বনে দ্য নিউ আরব এ বিশ্লেষণটি প্রকাশ করেছে। অনুবাদ করেছেন: রাফসান গালিব