Samakal:
2025-06-16@06:30:29 GMT

৮২ বছর বয়সেও লড়াকু রানী হামিদ

Published: 22nd, March 2025 GMT

৮২ বছর বয়সেও লড়াকু রানী হামিদ

দেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার রানী হামিদ ৮২ বছর বয়সেও খেলে এলেন এশিয়ান জোনাল দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ। কেবল তাই নয়, পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থেকেই শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতা শেষ করে দেশে ফেরেন। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বুদাপেস্টে মহিলা বিভাগে ৮১ পেরোনো রানী হামিদের কাছে হেরেছেন নামি দাবাড়ুরা। এশিয়ান জোনাল চ্যাম্পিয়নশিপ মূলত দক্ষিণ এশিয়ান জোনের দাবার বিশ্বকাপ বাছাই টুর্নামেন্ট। ওপেন ও নারী দুই বিভাগের চ্যাম্পিয়নরা সরাসরি বিশ্বকাপ দাবায় খেলার সুযোগ পান। ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বাকি ৬ দেশের দাবাড়ুরা অংশ নিচ্ছেন এ প্রতিযোগিতায়।
সামাজিক সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে পরিবার সামলানোর পাশাপাশি একজন অপরাজেয় দাবা খেলোয়াড় হয়ে ওঠা রানী বাংলাদেশের নারীদের অনুপ্রেরণার এক অনন্য উদাহরণ। বুদাপেস্টে ৪৫তম দাবা অলিম্পিয়াডে ভালো করেনি বাংলাদেশ। তবে আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে আলো ছড়ানো রানী হামিদের দাবা খেলা শুরু সেই ১৯৮৪ থেকে শুরু। দাবার সঙ্গে তাঁর বন্ধনটাও প্রায় ৪০ বছরের। কীভাবে এই খেলার প্রেমে পড়লেন; এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একদিন আমার স্বামী এসে বলল, পেপারে নিউজ দেখলাম। তুমি খেলবা নাকি। আমি তো পুরোপুরি গৃহিণী, চার বাচ্চার মা। কীভাবে কী করি। ও খুব করে বলল। শেষ পর্যন্ত আর চুপ থাকতে পারিনি। সে সময় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা ডা.

আকমল হোসেন ছিলেন আমার প্রতিবেশী এবং ওনার মিসেস ছিলেন আমার ক্লাসফ্রেন্ডের বড় বোন, ওনাদের সঙ্গে বিষয়টি খোলামেলা আলাপ করলাম। এরপর একটা সময় মনে হলো, যাই না একবার, দেখি কী হয়। তারাও খুব সহযোগিতা করলেন। এরপর খেলতে গেলাম। সেই যে শুরু, আর ছাড়তে পারলাম না। তবে আমার বাবাও দাবা খেলতেন। ছোটবেলা থেকে তাঁকে নিয়মিত দাবা খেলতে দেখতাম। তখন দাবা খেলার আমাদের কোনো অনুমতি ছিল না। এটিকে আউটডোর গেমস খেলার কথা বলা হতো। এই বাইরে যাও, দৌড়াও, ফুটবল খেলো, ক্রিকেট খেলো, ব্যাডমিন্টন খেলো। যা ইচ্ছে তাই খেলো, কিন্তু দাবা নয়। তখন এই বিষয়টাও প্রচলিত ছিল, বুড়োরা শুধু দাবা খেলবে, বসে বসে খেলা তো। এখন প্রেক্ষাপট উল্টো। এখন তো বুড়োরা বলে, এটা বাচ্চাদের খেলা। হ্যাঁ, এটি ঠিক, আমি কোনো দিনও আজকের রানী হামিদ হতে পারতাম না, যদি পরিবার থেকে সমর্থন না পেতাম।’ 
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের কথা। তখন এতটা মাতামাতি ছিল না দাবা নিয়ে। তারাও কোনোরকমে খেলে যাচ্ছিলেন। তখন পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে দেন রানী হামিদ। সেদিন পুরো হলরুমে তালি পড়ে। দেশ থেকেও অনেক প্রশংসা কুড়ান তিনি। ওই স্মৃতি, ওই দিনটা কখনও ভুলতে পারেন না তিনি। এত কিছুর সঙ্গে ছুটছে বয়সের ঘড়ি। এরই মধ্যে আশিটি বসন্ত পার করেছেন। আর কত দিন দাবার বোর্ডে রাজত্ব করতে চান, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শরীর যত দিন চলবে ততদিন। কারণ শরীরের অবস্থা দেখে তো বুঝতে পারছি না। দেখা যাক কী হয়। শরীর ঠিক থাকলে ইনশাআল্লাহ চেষ্টা চালিয়ে যাব। খেলা তো আর ছাড়ছি না। যতক্ষণ শরীর ভালো আছে, চলবে।’
তরুণ যারা, বিশেষ করে মেয়েদের যারা দাবায় আসতে চান কিংবা এই খেলাকে পেশা ও নেশা হিসেবে নিতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে রানী হামিদ বলেন, ‘প্রথমত অভিভাবকদের অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, হারলেই তারা রাগ করে, বকাঝকা করে। এখন তো খুব সহজ হয়ে গেছে খেলাটা। এখন তারা ইন্টারনেটে দেখতে পায়, শিখতে পায়, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা যখন খেলে, তাদের খেলা দেখতে পায়। আবার মফস্বলের অনেকে জানেও না কীভাবে খেলতে হয়। যেমন একজন ফেসবুকে লিখেছেন, আমার ছেলে অলিম্পিয়াডে খেলতে চায়। তবে গ্রামে-গঞ্জে দাবা খেলাটা কিন্তু আছে। তারা যখন সংবাদপত্রে দেখে আমরা খেলছি, তখন তাদেরও ইচ্ছা হয়। এই তৃণমূলে জোর দেওয়া দরকার। তবেই আমাদের মেয়েরা আরও সাহসের সঙ্গে দাবায় আসবে। দাবাকে পেশা হিসেবে নেবে।’ v

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ য ম প য়নস ল গ

এছাড়াও পড়ুন:

গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব

১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালিন বাকশাল সরকার চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। এতে হাজারো সাংবাদিক রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। জনগন সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর জানা থেকে বঞ্চিত হয়। গোটা দেশে যেন অন্ধকার নেমে আসে। জবরদস্তিমূলকভাবে তখন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবীদেরকে  বাকশালে যোগদানে বাধ্য করা হয়। 
অনেক সাংবাদিক সেদিন জীবন-জীবিকার ভয়ে বাকশালের ফরম পূরণ করেন। তাই সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। আজ দিবস আর কালো নেই। তথ্য প্রবাহের যুগে এখন মন খূলে লেখা যায়, প্রচার করা যায়। বিশেষ করে গেলো বছরের ৫ আগষ্টে ফ্যাসিবাদের পতনের পর গনমাধ্যমে অনেকটা স্বাধীনতা বেড়েছে। গণভবনের তেল তেলা তোষামদি প্রশ্ন এখন আর চলে না। বলা চলে গণমাধ্যম বিগত ১৬ বছরের চাইতে এখন বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে একটা প্রশ্ন রয়েই গেছে তা হলো পেশাদার কিছু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে । এসব মামলা বেশির ভাগই আক্রোশের কারনে হয়েছে। বাদীকে না জানিয়ে একটা মহল মামলায় সাংবাদিকের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটা নিন্দনীয়। একজন সাংবাদিক মানুষ খুনের মামলার আসামী এটা মেনে নেয়া  দুস্কর । 
৫ আগষ্টে আগে যারা তোষামদি করতো , সঠিক সংবাদ লিখতে কিংবা প্রচার করতো পারতো না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দোহাই দিয়ে যারা গনমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করে রেখেছিল তাদের ভয়ে আতংকে থাকতো। তাদের অনেকে এখন গনমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে মিথ্যা প্রপ্রাগান্ডা চড়াচ্ছে। গনহত্যাার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি একটা দলের প্রতি বিশেষ দরদ দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য চড়াচ্ছে। অনেকে তাদের ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। যাচাই বাছাই ছাড়া  মিথ্যা তথ্য শেয়ার করছে। তাদের এখনই থামা দরকার। সত্য প্রকাশ করা একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব । এ পেশাগত দায়িত্বের কেউ অপব্যবহার করলে মুলত তিনিই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। একসময় তার মিথ্যা সংবাদ পরিবেশের কারনে কেউ তার পাশে আর থাকবেন না। তাকে পেশাদার সাংবাদিক নয়, একজন দালাল হিসেবে চিহ্নিত  হয়ে  আস্তুাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। 
পেছনের কথায় ফিরে  আসি, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সংবাদ পত্রের কালো দিবস পেরিয়ে  ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভাবনীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর সাংবাদিকদের লেখার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত করেন।
জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সব কালাকানুন শিথিল করে দেশের সব জায়গা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহ প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, প্রকাশিত সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখা সরকারেরই দায়িত্ব বলেই তিনি মনে করতেন। তিনি রাজশাহী থেকে ‘দৈনিক বার্তা’ নামে একটি প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এ পত্রিকা ঘিরে সমগ্র উত্তরাঞ্চলে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। বহু সাংবাদিকের কর্মসংস্থান হয়।ডিক্লারেশনের শর্ত শিথিল করার কারণে সে সময় ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয়, জেলা এমনকি থানা পর্যায় থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। এসব পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে জিয়াউর রহমান সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টননীতিও শিথিল করেন। বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বণ্টন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন। একই সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞাপনের ৬০ ভাগ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় এবং বাকি ৪০ ভাগ মফস্বল থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সারা দেশে সংবাদপত্র প্রকাশনায় নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। 
শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই  প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হাঁটে দলটি। গত প্রায় ১৫ বছরে আমার দেশ, দিনকাল, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবিসহ জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দিয়েছিল । ৬০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে। একের পর এক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কথায় সাংবাদিক গ্রেফতার তখন নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয়ে একদল চাটুকার আওয়ামীলীগের দু:শাসনের মদদ দিয়ে জাতির উপর জুলুমের মাত্রা আরো বাড়িয়েছিল। ছাত্রজনতার বিপ্লবে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ পতনে মানুষ যেমন স্বস্তি ফিরে পেয়েছে তেমনি গণমাধ্যম ফিরেছে অবাধ স্বাধীনতায়। 

লেখক : সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
  • কালিয়াকৈরে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আটক ২ নেতা, পরে ছাড়া পেলেন একজন
  • আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম: আমির খান
  • প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১
  • খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প
  • খামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প
  • সাংবাদিক পরিচয়ে গেস্ট হাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি, দম্পতির কাছে বিয়ের প্রমাণ দাবি
  • ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
  • চলতি মাসের ১৫ দিনে করোনায় ৪ জনের মৃত্যু
  • গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব