Risingbd:
2025-12-13@08:53:46 GMT

ইতিহাসের পাতায় ২৫ মার্চ ১৯৭১

Published: 25th, March 2025 GMT

ইতিহাসের পাতায় ২৫ মার্চ ১৯৭১

কালরাত ছিল অকাল মৃত্যুর রাত; মুক্তিকামী বাঙালির ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলে স্বাধীনতার স্বপ্ন সমাধিস্থ করার অপচেষ্টার রজনী। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠি ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছিল। আর একাত্তরের ২৫ মার্চ তারা সংঘটিত করেছিল গণহত্যার সূচনা। আজকের তরুণ প্রজন্ম কল্পনাও করতে পারবে না যে, আচমকা এক রাতে পাকিস্তানি সশস্ত্র সৈনিকেরা কীভাবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাঙালিদের ওপর চড়াও হয়ে নির্বিচার গণহত্যায় মেতেছিল। 

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে সাত হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হয় আরও তিন হাজার। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। এরপর পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুনতাড়িত শ্মশান ভূমি।’

১৯৭১-এর ২৫ মার্চে লে.

জেনারেল টিক্কা খান যুগপৎ গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন। ১০ এপ্রিল তার কাছ থেকে সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব বুঝে নেন লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে নিয়াজি বলেন:

আরো পড়ুন:

ঢাকা বাদে ৬৩ জেলায় স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ: প্রেস উইং

ইবিতে ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ নামে হল, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

‘একাত্তর সালের ২৫/২৬ মার্চ জেনারেল টিক্কা আঘাত হানেন। সুনসান রাত বিলাপ, কান্না আর আগুনে পুড়ল। জেনারেল টিক্কা তার শক্তির সবটুকুই ব্যবহার করলেন। বিপথগামী ও বিভ্রান্ত দেশবাসীকে সামাল না দিয়ে তিনি যেন শত্রুকে আক্রমণ করলেন। সামরিক অভিযানটি ছিল নিষ্ঠুর, যা বোখারা ও বাগদাদে চেঙ্গিস খান ও হালাকু খানের অথবা জালিয়ানওয়ালাবাগে জেনারেল ডায়ারের আক্রমণের চেয়েও নৃশংস।’

বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র ও বাঙালি নেতাদের গ্রেপ্তারের দায়িত্ব ছিল তার। এটা না করে তিনি পোড়ামাটি নীতির আশ্রয় নেন। ফরমান আলী ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের মাটি লাল করে দিতে হবে।’ সৈন্যদের তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মাটি চাই, মানুষ চাই না।’

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব ব্যবস্থা চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ছেড়ে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে।

কালের পরিক্রায় আজ ফিরে এসেছে সেই ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এইদিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত নেমে এসেছিল। ওইদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’র নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মার্চের শুরু থেকেই তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক জাহাজযোগে এবং করাচি থেকে ঢাকায় বিমানযোগে বিপুল সংখ্যক সৈন্য ঢাকায় আসতে শুরু করে। এ ঘটনায় এটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে পাকিস্তানের সামরিকজান্তা মার্চের একেবারে শুরু থেকেই বাঙালিদের দমন পীড়নের জন্য চূড়ান্ত পন্থারই পরিকল্পনা আঁটছিল। 

অপারেশন সার্চলাইট অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়।

অনেক পরে, ২০১২ সালে, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ শিরোনামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত সেই আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো ‘অপারেশন সার্চলাইট’ সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।

‘অপারেশন সার্চলাইট’ কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন ‘অপারেশন সার্চলাইট’।

এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও আছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল তাতে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’

অর্ধশতাব্দীকাল আগের ইতিহাসের পাতায় ফিরে গেলে এখনও মানুষ শিহরিত হয়। সেদিন, অর্থাৎ একাত্তরের ২৫ মার্চে ঢাকার ইপিআর সদরদপ্তর পিলখানায় থাকা ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাংক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাংক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের নয় শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। সেখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

দীর্ঘদিন ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ছিল সর্বস্তরের মানুষের। জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে দাবি পূরণ করা হয়েছে। দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সম্মান জানাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে। 

আন্তর্জাতিকভাবে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করেছে বিগত সরকার। ইতোমধ্যে এই অপরাধযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জেনোসাইড ওয়াচ এবং লেমকিন ইন্সটিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন। এছাড়া সংস্থা দুটি জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এই নৃশংস গণহত্যাকে আরও স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারস (আইএজিএস)। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২৪ এপ্রিল ২০২৩ তারিখের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

২৫ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে সারাদেশে এক মিনিট ব্ল্যাক আউট বা নিষ্প্রদীপ মহড়া পালিত হয়ে থাকে শহীদদের স্মরণে। দিবসটি পালনের লক্ষ্যে আজও সারা দেশে রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট (১ মিনিট) প্রতীকী ব্ল্যাক আউট (কেপিআই বা জরুরি স্থাপনা ব্যতীত) পালন করা হবে। এক মিনিট অন্ধকারে থাকার পর আমরা আলো জ্বালিয়ে স্বস্তিতে ফিরব। কিন্তু এই আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যদি আমরা মুহূর্তের জন্য হলেও একাত্তরের সেই কালরাতকে, সে রাতের সুতীব্র ভয়াবহতাকে এবং মৃত্যুসম আঘাত পেয়েও বাঙালির ঘুরে দাঁড়ানো এবং হানাদার শত্রুকে পরাস্ত করে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার গৌরব যদি অনুভব না করতে করি, তাহলে আমাদের বীর পূর্বপুরুষদের প্রতি আমরা যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে ব্যর্থ হবো। তাই শুধু আনুষ্ঠানিকতার সুসংহত কর্মসূচির মধ্যে নয়, আমাদের দায়িত্ব হবে একাত্তরের অন্ধকার হটিয়ে আলোর স্বদেশ প্রতিষ্ঠার সংকল্পকে অনুভব ও অন্তরে ধারণ করা। 

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ধ নত ১৯৭১ স ল র র ২৫ ম র চ ২৫ ম র চ র গণহত য র আম দ র ফরম ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যক্তি উদ্যোগে গড়া সংগ্রহশালা, আছে ৪০০ বছর আগের ইটসহ নানা দুর্লভ জিনিস

পুরোনো ক্যালকুলেটর, শত বছরের পুরোনো টাইপ রাইটার, ১৩০ বছর আগের ঘড়ি, দেড় শ বছরের পুরোনো লাঠি, ৪০০ বছর আগের ইট, গ্রামোফোনসহ নানা দুর্লভ জিনিসে ভরা এক সংগ্রহশালা। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বাসিন্দা আলী মাহমেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে।

আখাউড়ার বড় বাজার মসজিদের পেছনে আলী মাহমেদের বাড়ি। সম্প্রতি সেই বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে চারপাশজুড়ে থাকা গাছপালা। বাড়িটির উত্তর দিকে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন। দক্ষিণ দিকে গাছের গুঁড়ি দিয়ে বানানো চেয়ার। আছে ফায়ারপ্লেস। ঘরে ঢুকতেই পুরোনো সব জিনিস স্বাগত জানায়, নিয়ে যায় সুদূর অতীতে। বাড়ির প্রতিটি কক্ষ, সিঁড়ির পাশের প্রতিটি দেয়াল পুরোনো নানা জিনিস দিয়ে সাজানো।

ফায়ারপ্লেসের স্থানে ৪০০ বছর পুরোনো ইট। তির, ধুনক, টাইপরাইটার, গ্রামোফোন, ভিনাইল রেকর্ড, বুকশেলফে সাজানো সারি সারি বই। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতেই হাতের বাম পাশের দেয়ালে শেলফে পুরোনো টেপ রেকর্ডার, কম্পিউটার, বাদ্যযন্ত্র, ক্যাসেট প্লেয়ার, ১৯৫৭ সালের টেলিফোন সেট, পুরোনো ছোট টেলিভিশন। আরেকটি শেলফে সাজানো বিভিন্ন ধরনের পুরোনো জিনিসের সংগ্রহ।

আলী মাহমেদ একজন লেখক। তিনি এলাকায় সবার কাছে মোহাম্মদ আলী নামে পরিচিত। তাঁর বাবা প্রয়াত নিজাম উদ্দিন আহমেদ আখাউড়ার দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। দেশি-বিদেশি লেখকের বই, নিজের লেখা সব বই এবং নব্বইয়ের দশকে পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর প্রতিটি লেখা যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছেন আলী মাহমেদ।

পুরোনো জিনিস সংগ্রহে নিজের আগ্রহের প্রসঙ্গে আলী মাহমেদ বলেন, ‘১৯৮৩ সালে বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর বাবার সবকিছু জুতা, মোজা, চশমা ইত্যাদি সংগ্রহ করা শুরু করি। সম্ভবত এখান থেকেই দুর্লভ-দুষ্প্রাপ্য জিনিসপত্র সংগ্রহের আগ্রহ তৈরি হয়। প্রাচীন, দুর্লভ জিনিসপত্র সংগ্রহ করার শখ হয়। যখন যেখানে যা পেয়েছি সংগ্রহ করে রাখার চেষ্টা করেছি। যাঁরা আমাকে চেনেন, তাঁরা জানেন আমি দুর্লভ জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে পছন্দ করি। বিভিন্ন এলাকার অনেক লোক নিজ উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী মূল্যবান জিনিসপত্র এনে আমার কাছে দিয়ে গেছেন।’

আখাউড়ায় আলী মাহমেদের সংগ্রহে হুঁক্কা, বল্লম, বদনা, পাদুকা, থালাবাটি, কোরবানির ছুরি, যুদ্ধের অস্ত্র, কলের গান, ঢাকঢোল, মঙ্গলসূত্র, মাটির তৈরি তৈজসপত্র, বাঁশের খড়ের পণ্য, ঘোড়ার চাবুক, খুন্তি, লাঙল, দা, মই, হাতুড়ি, ফলা, কাস্তে, পুঁথি, বাঁশি, সানাই, টোপর, তযবিহ, জায়নামাজসহ হাজারখানেক জিনিসপত্র আছে। তবে সন্তানদের পড়াশোনার জন্য তাঁকে ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। অনেক জিনিস তিনি ঢাকার বাসায় নিয়ে গেছেন। 

ঢাকার বাসায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পরনের কাপড়, গুলির বাক্স, তামার বুলেট ও খোসা, ১৯৬০ সালের ক্যামেরা, পুরোনো ইয়াসিকা ক্যামেরা, টিঅ্যান্ডটির সঙ্গে ব্যবহৃত প্রাচীন মডেম, ১৯৯৬ সালে কেনা বাংলা সফটওয়্যার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মেডেল, চোখ পরীক্ষা করার যন্ত্র, তাঁর নানির ১৯৪২ সালের শাড়ি, ১৯৫৫ সালের পত্রিকা তওহীদ–এর একটি কপি, টেলিস্কোপ, জাহাজের বাতি ও কম্পাস, রেলের বাতি (লাল, সবুজ ও হলুদ), কলমের কালি রাখার পাত্র, সিলভারের পানদানি, তাঁর নানার ১৯৪২ সালের চশমা, বাবার হাতের ঘড়িসহ অনেক কিছু রেখেছেন।

আলাপে আলী মাহমেদ জানালেন, আবদুল জব্বার বীর প্রতীক তাঁকে ১৯৭১ সালের গুলির বাক্স দিয়েছেন। একজন পবিত্র হজ পালনে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় তাঁর জন্য মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর রওজা শরিফের একটি পাথর এনেছিলেন। সেটি তিনি নিজের সংগ্রহশালায় রেখে দিয়েছেন। 

স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আলী মাহমেদের সংসার। স্ত্রী ফারজানা আফরোজ গৃহিণী। ছেলে আহমেদ ইফতেখার অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন এবং মেয়ে নাহিয়ান আঞ্জুম মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি জানালেন, সংগ্রহশালার জিনিসপত্র নিয়ে ছেলের বেশ আগ্রহ আছে। তাঁর স্ত্রী নিয়মিত এসব পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে তাঁকে সহায়তা করেন।

আলী মাহমেদের সংগ্রহের বেশির ভাগই আখাউড়ার বাড়িতে। তাঁর কাছে এমন অনেক জিনিস আছে, যেগুলো তরুণ প্রজন্ম নিজের চোখে দেখেনি। তাদের জন্য তিনি এসব রেখে যাচ্ছেন। তাঁর আশা, এগুলো একদিন সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেবে সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আকাশপথে কিলো ফ্লাইটের আক্রমণ
  • পাকিস্তানে বাঙালি বন্দিশিবিরের গোপন ইতিহাস
  • ব্যক্তি উদ্যোগে গড়া সংগ্রহশালা, আছে ৪০০ বছর আগের ইটসহ নানা দুর্লভ জিনিস
  • ২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া
  • এবারের নির্বাচনের লড়াইটা কঠিন: মির্জা ফখরুল
  • বিজয়যাত্রার সূচনা হলো সর্বাত্মক যুদ্ধে
  • টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর
  • সে ছিল ক্যাটালিস্ট
  • গ্রেনেড ছোড়ার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ফোরকান বেগম
  • দু–তিন দিনে পড়ার মতো মুক্তিযুদ্ধের অনবদ্য পাঁচ উপন্যাস