ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট। মানিকগঞ্জের সড়ক ও জনপথের সামনের ফুটপাতে গতকাল মঙ্গলবার এ সময় একে একে আসতে থাকেন লাইফ ফর ব্লাড নামের সংগঠনের সদস্যরা। কেউ নিয়ে এসেছেন ইফতারের জন্য বসার মাদুর, কেউবা পানিসহ নানা খাবার, প্লেট-গ্লাস।
এর মধ্যে একে একে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়ো হতে থাকেন ফুটপাতে। ইফতারের ঠিক ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগেই রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোরিকশার চালক, ছিন্নমূল মানুষ, হকার, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ ভুলে বসে পড়েন মাদুর বিছানো ফুটপাতে।
প্লেটে সাজানো ছোলা-মুড়ি, খেজুর, ফলসহ মাংস-খিচুরি। গ্লাসে শরবত। ফুটপাতে বসা অতিথিদের সামনে একে একে এনে দেওয়া হয় ইফতার। বসার স্থান না পেয়ে অনেকেই রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশায় বসেই ইফতার সারেন। এ এক অভিনব দৃশ্য!
ইফতারে অংশ নেওয়া বাবুল হোসেন জানান, তাঁর বাড়ি গাইবান্ধায়। তিনি মানিকগঞ্জে তিন বছর ধরে রিকশা চালান। প্রতিবছর এখানে তিনি ইফতারে অংশ নেন। এবার দু-এক দিন বাদে সব দিনই তিনি এখানে ইফতার করেছেন। 
রিকশাচালক বজলু বলেন, রোজার সময় দেখেন সবাই বসে এখানে ইফতার করেন। আয়োজকদের একজন তাঁর রিকশায় উঠেছিলেন। তাঁর দাওয়াতেই প্রথমবারের মতো এখানে ইফতার করেছেন। এখানে অনেক গরিব মানুষের পাশাপাশি ধনী লোকও ইফতার করেছেন। এটা দেখে ভালো লেগেছে বজলুর।
ছিন্নমূল নারী মরিয়ম বেগম বলেন, আমার কোনো থাকার জায়গা নেই। রাতে ফুটপাতে থাকেন। কয়েক বছর ধরে তিনি এখানে ইফতার করছেন। আয়োজকরা তাঁকে সম্মান দিয়ে ইফতার দেন বলে তিনি জানান।
সাবেক খেলোয়াড় রুবেল হোসেন জানান, তাঁর বাড়ি কাছেই। প্রতিদিনই দেখেন এখানে সব শ্রেণির মানুষ ভেদাভেদ ভুলে পাশাপাশি বসে ইফতার করেন। এটা দেখে তাঁরও এখানে বসে ইফতার করার ইচ্ছা হয়। তাই প্রথমবারের মতো গতকাল তিনি এখানে বসে ইফতার করেছেন। 
মানিকগঞ্জ লাইফ ফর ব্লাডের সাবেক সভাপতি মুসফিক নিবিড় জানান, করোনার সময় পথচারীদের কথা চিন্তা করে প্রথমে সাত দিনের জন্য ইফতারের আয়োজন করেছিলেন। সেই কাজে সাড়া পেয়ে পরে ১৫ দিনের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। এর পর ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় সেটা তিন বছর ধরে রমজান মাসজুড়ে করা হয়। এ আয়োজনে তাদের আশপাশের পরিচিত অনেকেই সহযোগিতা করছেন। 
সংগঠনের আহ্বায়ক সিয়াম খান বলেন, চার বছর ধরে তারা এখানে ইফতারের আয়োজন করছেন। প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ এখানে ইফতার করেন। কখনও ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ হয়। সংগঠনের ৩১ জন সদস্য সবাই শিক্ষার্থী। তাদের অর্থের পাশাপাশি সমাজের অনেকেই এ সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ইফতারে অংশ নেওয়া বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহাবুবুর রহমান জয় বলেন, এলাকার ছোট ভাইয়েরা প্রতিবছর এই ফুটপাতে ইফতারের আয়োজন করে। সমাজের বিত্তবান মানুষ কিছু সহযোগিতা করেন। নিম্নবিত্ত মানুষের সঙ্গে এক কাতারে বসে ইফতার করার অনুভূতি অন্য রকম। সমাজের আরও বিত্তবান মানুষ এই সংগঠনের পাশে দাঁড়াবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
লাইফ ফর ব্লাড নামে শিক্ষার্থীদের এই সংগঠনের জন্ম হয়েছিল রক্ত দিয়ে রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। করোনাকালে তারা পথচারীদের জন্য ফুটপাতে ইফতারের আয়োজন করে। এরই ধারাবাহিকতায় চতুর্থবারের মতো এ আয়োজন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইফত র স গঠন র র জন য ন র জন ফ টপ ত

এছাড়াও পড়ুন:

জমজমাট নাটকের পর কিংসের শিরোপা উৎসব

সময়ের চেয়েও বেশি দীর্ঘ হলো অপেক্ষা। উত্তেজনার বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে ছিল ফুটবলীয় রোমাঞ্চ। শেষ ১৫ মিনিট যেন পরিণত হলো রূপকথার উপসংহারে—যেখানে আবাহনীর স্বপ্ন থেমে যায়, আর বসুন্ধরা কিংস খুঁজে পায় চতুর্থ ফেডারেশন কাপের সোনালি মুহূর্ত।

বৃষ্টির ছন্দে বিভ্রান্ত হওয়া ফাইনাল আবার শুরু হলো এক সপ্তাহ পর। ১-১ সমতায় থাকা ম্যাচের বাকি অংশ গড়ালো ময়মনসিংহ জেলা স্টেডিয়ামে। যেখানে শুরু থেকেই ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে নামে কিংস। অতিরিক্ত সময়ে কিছুই হল না। তবে অপেক্ষার পুরস্কার মিলল টাইব্রেকারে।

সেখানে বাজিমাত করলেন কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ। আবাহনীর দ্বিতীয় শট আটকে দিয়ে দলকে দিলেন এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস। আর শেষ শটটি নেন ব্রাজিলিয়ান ড্যাসিয়েল, যা গোললাইন পার হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উৎসবে ফেটে পড়ে কিংস শিবির।

আরো পড়ুন:

যে কারণে এবারের লিগ জয়কে এগিয়ে রাখছেন সালাহ

পাঁচ গোলের রোমাঞ্চকর ফাইনালে শেষ হাসি বার্সার

কিছুদিন আগেই আবাহনীর কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল কিংস। এবার সেই হারের উত্তরটা যেন মিলল একই মঞ্চে, একই কৌশলে— তবে ভিন্ন ফলাফলে। মোরসালিন, তপু, ইনসান, জোনাথন আর ড্যাসিয়েল— কেউই ভুল করেননি। আবাহনীর একমাত্র ব্যর্থ শটটি ছিল নাইজেরিয়ান এমেকার, যা ঠেকিয়ে দেন শ্রাবণ। আর মিরাজুলের চতুর্থ শট, যা প্রথমবার ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন শ্রাবণ। কিন্তু রেফারির সিদ্ধান্তে আবার নিতে হয়। তাতেও গোল হলেও ততক্ষণে কিংস হয়ে গেছে অপ্রতিরোধ্য।

এদিন মাত্র ১৫ মিনিট খেলা হলেও মাঠের উত্তাপ ছিল পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটকের মতো। শুরুতেই হলুদ কার্ড দেখেন আবাহনীর সুমন রেজা ও অধিনায়ক হৃদয়। আগের ম্যাচেও হলুদ-লাল কার্ডে ভরা ছিল দৃশ্যপট। ফুটবল এখানে শুধু কৌশলের খেলা নয় তা যেন হয়ে ওঠে মানসিক স্থিতির পরীক্ষাও।

এই জয়ে বসুন্ধরা কিংস চতুর্থবারের মতো ফেডারেশন কাপ জয় করল। একই সঙ্গে আবাহনীকে প্রথমবার কোনো ফাইনালে হারানোর কৃতিত্বও অর্জন করল তারা। অতীতে দুই ফাইনালে পরাজিত হয়েছিল কিংস। এবার তারা সেই রেকর্ড মুছে দিল নির্ভার ফুটবলে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশ গড়ার নায়কদের জন্য ফ্লাইট এক্সপার্টের বিশেষ উদ্যোগ
  • প্রথমবারের মতো দেশে সংযোজিত এসইউভি গাড়ি আনল প্রোটন
  • এক সপ্তাহে এভারেস্ট জয় কি সত্যিই সম্ভব
  • সম্পর্কের ৫০ বছর: বাংলাদেশে প্রথমবার চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী
  • জমজমাট নাটকের পর কিংসের শিরোপা উৎসব
  • বন্ধু রাশিয়াকে সাহায্য করতে সেনা পাঠায় উত্তর কোরিয়া