মায়ের আক্ষেপ ‘সবার বাবা আছে, ওদের নেই’
Published: 26th, March 2025 GMT
গরীব-পথশিশুদের ডাক্তার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুল। চিকিৎসা না পেয়ে কেউ তার কাছ থেকে ফিরে যেতেন না। মানুষের সেবা করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। সেই মানুষটাকে হারিয়ে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি। প্লে-পড়ুয়া কন্যা আওন, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছেলে সামি; সহপাঠী বন্ধু-বান্ধবরা বাবাকে পেলেও, পায় না তারা। তার মায়ের আক্ষেপ, ‘‘সবার বাবা আছে, ওদের নেই। ২/৩ বছর হয়ে গেছে বলে তাকে হারানোর কষ্ট কমে গেছে, বিষয়টা এমন না। যতদিন বাঁচব, কষ্টটা বয়ে নিয়ে বাঁচতে হবে।’’
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভোরে মিরপুরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন দন্ত চিকিৎসক বুলবুল। এ ঘটনায় তার স্ত্রী শাম্মী আক্তার মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে মিরপুর থানা পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। ওই বছরের অক্টোবর মাসে ডিবি পুলিশ ৫ ছিনতাইকারীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২০২৩ সালের ২৫ মে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু হয়। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ১৩তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ কুদরত-এ-এলাহীর আদালতে বিচারাধীন।
সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ছিল। তবে ওইদিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। আদালত আগামী ১৬ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
মামলা সম্পর্কে ডা.
এক প্রশ্নের জবাবে শাম্মী আক্তার বলেন, ‘‘বাচ্চাদের নিয়ে বাবার বাসায় দিনাজপুরে আছি। চাহিদামত চাকরি পাচ্ছি না। সরকারি চাকরির বয়স তো শেষ। বাচ্চাদের নিয়েই আছি। সবার দোয়া চাই। ছেলে ক্লাস ফোরে আর মেয়ে প্লেতে পড়ছে।’’
বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বলতে চাচ্ছি না। এগুলো দিয়ে কী হবে? কী অবস্থায় আছি না আছি এটা জেনে লাভ কী?’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে শাম্মী আক্তার বলেন, ‘‘সন্তানেরা তো বাবার কথা বলবেই। বাবা ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কে আছে আপন। সবার বাবা আছে, ওদের নেই। এর মত কষ্টদায়ক আর কী হতে পারে। সেটা আমরা বুঝতেছি। আমার হাজব্যান্ড নেই, বাচ্চাদের বাবা নেই। আমরা প্রতিনিয়ত এটা ফেস করতেছি। ২/৩ বছর হয়ে গেছে বলে কষ্ট কমে গেছে, বিষয়টা এমন না। যতদিন বাঁচব, কষ্টটা বয়ে নিয়ে বাঁচতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বিচার হোক। সবার কাছে আমাদের জন্য দোয়া চাই। বছর ঘুরে মৃত্যুবার্ষিকী আসলে ২/১ জন ফোন করে নিউজের জন্য। এর বাইরে কে কী করবে? রাষ্ট্র কি আমাদের দায়িত্ব নেবে, বাচ্চাদের দায়িত্ব নেবে? যাদের জন্য আমাদের জীবনটাই শেষ হয়ে গেল, জীবনটাই পাল্টে গেল, তাদের সাজা চাই। সর্বোচ্চ সাজা চাই।’’
মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ৫ জনের সাক্ষ্য হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার শেষ করার চেষ্টা করব। ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সহায়তা থাকবে আমাদের।’’
২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভোর ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে মিরপুরের বাসা হতে বের হয়ে শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার জন্য রিকশায় রওনা হন বুলবুল। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে মিরপুর মডেল থানার পশ্চিম কাজীপাড়ার নাভানা ফার্নিচার শোরুমের সামনে মেইন রাস্তার ওপর পৌঁছালে মামলার আসামি রিপন ও রাসেল রিকশার গতিরোধ করে বুলবুল আহমেদকে যা যা আছে দিয়ে দিতে বলে। না দিলে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখান। বুলবুল আহমেদ মোবাইল ফোন দিতে না চাওয়ায় রিপন তার উরুতে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেন এবং মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান। বুলবুল আহমেদ গুরুতর জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী শাম্মী আক্তার অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামিকে করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন পাঁচ ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার আসামিরা হলেন— মো. রায়হান ওরফে সোহেল আপন, রাসেল হোসেন হাওলাদার, আরিয়ান খান হৃদয়, সোলায়মান ও রিপন।
এরা সবাই কারাগারে আছেন।
এদিকে চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আহমেদ মাহী বুলবুল একজন দন্ত চিকিৎসক ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন। ঠিকাদারি কাজের জন্য নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভোর ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে রওনা হন। পশ্চিম কাজীপাড়ার নাভানা ফার্নিচার শোরুমের সামনে প্রধান সড়কের ওপর পৌঁছালে আসামি রিপন ও রাসেল রিকশাটির গতিরোধ করে তার কাছে যা যা আছে তা দিয়ে দিতে বলে চিকিৎসক বুলবুলকে। না দিলে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখায়। বুলবুল মোবাইল ফোন দিতে না চাওয়ায় রিপন তার ঊরুতে আঘাত করে জখম করে মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় বুলবুল গুরুতর জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে যান। ছিনতাইকারীরা চিকিৎসক বুলবুলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন ১৫০০ টাকায় বিক্রি করে। পরে তা পাঁচ ছিনতাইকারী ভাগ করে নেয়।
মামলা সম্পর্কে জানতে আসামিপক্ষের তিন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা মামলা ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ঢাকা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ষ য গ রহণ চ ক ৎসক আম দ র র জন য অবস থ আহম দ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক