মিয়ানমারের আজ শুক্রবার পরপর দুটি ভূমিকম্প হয়েছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশে এর প্রভাব অনুভূত হয়েছে। আজ দুপুর ১২টা ২১ মিনিটে কেঁপে উঠে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর–উত্তরপশ্চিমে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ১০ কিলোমিটার গভীরে।
ইউএসজিএস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ, ভারত, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং চীনে।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে পরপর দুটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর একটি ৭ দশমিক ৭ মাত্রার, অন্যটি ৬ দশমিক ৪ মাত্রার। মিয়ানমারে থেকে এর উৎপত্তি হয়। তবে থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য অঞ্চলে অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
তিনি বলেন, ভূমিকম্পের প্রভাবে অনুভূত হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির হয়নি।
মিয়ানমার
মিয়ানমারের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এবং এর গভীরতা ছিল ভূঅভ্যন্তরের ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) গভীরে। প্রথম বার আঘাত হানার পর আরেকটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের তীব্রতায় রাস্তাঘাট ফাটল দেখা গেছে এবং ভবনের টুকরো খসে পড়েছে। ইরাবতী নদীতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। ভয়াবহ ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ে ৯১ বছরের পুরোনো আভা সেতু, যা পুরোনো সাগাইং সেতু নামেও পরিচিত।
মিয়ানমারের ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘আমরা হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করার জন্য ইয়াঙ্গুনে অনুসন্ধান শুরু করেছি এবং ঘুরে দেখছি। এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’
চীন
চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টার (সিইএনসি) জানিয়েছে, চীনের ইউনানে এর কম্পন অনুভূত হয়েছে। সিনহুয়া জানিয়েছে, এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৯।
ভারত
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমিওলজি জানিয়েছে, মেঘালয়ের পূর্ব গারো পাহাড়ে ৪ মাত্রার ভূমিকম্পন অনুভূত হয়। কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
থাইল্যান্ড
মিয়ানমারে উৎপন্ন ভূমিকম্প থাইল্যান্ডে আঘাত হানে। রাজধানী ব্যাংককে কম্পনে নির্মাণাধীন একটি ৩০ তলা সরকারি অফিস ভবন ধসে পড়েছে। সেখানে কর্মরত অন্তত ৪৩ জন শ্রমিক ভেতরে আটকা পড়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ ও মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। উত্তর ও মধ্য থাইল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায়ও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ প্রচারিত একটি ভিডিওতে ভবনগুলো কাঁপতে দেখা গেছে। আতঙ্কে লোকজন রাস্তায় ছোটাছুটি করেন। দুপুরে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত করে ব্যাংককে। ভূমিকম্পের প্রভাবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর ব্যাংককের ওই ভবনটি ধসে পড়ে।
লাওস
চীনের সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার এক প্রতিবেদেন বলা হয়, মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে লাওসের কয়েকটি শহরে কম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
লাও জাতীয় ভূমিকম্প তথ্যকেন্দ্রের তথ্যমতে, লাওসের উত্তর ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে কম্পন অনুভূত হয়েছে। রাজধানী ভিয়েনতিয়েনেও কেঁপে উঠে। দেশটির কর্তৃপক্ষ সেখানকার বাসিন্দাদের সম্ভাব্য আফটারশকের জন্য প্রস্তুত থাকতে সতর্ক করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ৭ দশম ক ৭ ম ত র র র ভ ম কম প ভ ম কম প র র উৎপত ত
এছাড়াও পড়ুন:
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।
আরো পড়ুন:
নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”
প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”
গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী