ঈদের ছুটিতে লাশবাহী গাড়িতে বাড়ি ফিরলেন এসআই কবির
Published: 29th, March 2025 GMT
ঈদের ছুটিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়িতে ফেরার কথা ছিল সাভার থানার এসআই ফজলুর রহমান কবিরের। ফিরলেন ঠিকই; কিন্তু লাশ হয়ে। লাশবাহী গাড়িতে করে শুক্রবার নান্দাইল উপজেলার মেরেঙ্গা গ্রামে ফেরে তাঁর নিথর দেহ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা, স্ত্রী ও সন্তানরা। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। শুক্রবার বাদ জুমা জানাজা শেষে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
মুশুলী ইউনিয়নের মেরেঙ্গা গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির মৃত শুনু ভূঁইয়ার তিন ছেলের মধ্যে কনিষ্ঠ ফজলুর রহমান কবির (৩৯)। স্থানীয় আব্দুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর এলএলবি পাস করেন তিনি। ২০০৬ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। পদোন্নতি পেয়ে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও ৬ বছর আগে উপপরিদর্শক (এসআই) হন। সর্বশেষ সাভার থানায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে সাভারে বসবাস করতেন স্ত্রী মেঘলা, ৩ বছরের মেয়ে আয়াত, ১৮ মাস বয়সী ছেলে আলভী ও মা শরবানু। বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মেজো ভাই ইকবাল হোসেন। সুখেই কাটছিল তাদের দিন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুক্রবার স্ত্রী-সন্তান ও মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল কবিরের। কিন্তু বিধিবাম। তাঁর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে একটি বালুবাহী ট্রাক।
বৃহস্পতিবার সাভার থানা এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে সহায়তা করেন এসআই কবির। এর পর দুপুর ২টার দিকে স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্পে রাখা তাঁর বাইক নিয়ে থানায় ফেরার পথে তাঁকে চাপা দেয় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুবাহী ট্রাক। রাজধানীর একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাভার থানার পাঁচজন পুলিশ একটি ফ্রিজিং গাড়িতে করে লাশ নিয়ে কবিরে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান শুক্রবার ভোরে।
শুক্রবার দুপুরে কবিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লোকজনের ভিড়। বাড়ির সামনেই লাশবাহী গাড়ি। ঘরের ভেতর থেকে আসছে স্বজনের কান্নার শব্দ। নিহত কবিরের বড় ভাই হারুন অর রশিদ সিভিল এভিয়েশনে কর্মরত। তাঁর ভাষ্য, সাভার থানা পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাটি জানিয়েছে তাদের। তিনি বলেন, ‘মা কবিরের কাছেই ছিলেন। কথা ছিল ঈদের ছুটিতে শুক্রবারে সবাই একসঙ্গে বাড়িতে আসবেন। সবাই এসেছে, তবে আমার আদরের ছোট ভাইটি লাশ হয়ে ফ্রিজিং গাড়িতে করে।’ এটুকু বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন তিনি।
প্রতিবেশী খোকা ভূঁইয়া জানান, কবির ছিলেন তাদের গ্রামের গর্ব। কোনো ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না তাঁর ভেতর। সবার সঙ্গেই সবসময় হাসিমুখে কথা বলতেন।
লাশের সঙ্গে আসা সাভার থানার এএসআই নেসার উদ্দিনের ভাষ্য, কবিরকে চাপা দেওয়া ট্রাকটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে চালকসহ আটক করা হয়েছে।
নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, জানাজায় অংশ গ্রহণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতে এসআই সালামের নেতৃত্বে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন শ ক রব র
এছাড়াও পড়ুন:
গৌরনদী থানার ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা
এক লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে গৌরনদী মডেল থানার ওসি ইউনুস মিয়া ও উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী। বরিশাল সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আজ মঙ্গলবার মামলাটি দায়ের করেন গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজাদ সরদারের স্ত্রী সুমা বেগম।
অভিযোগকারীর আইনজীবী নাজিম উদ্দীন আহমেদ পান্না এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী মামলায় অভিযোগ করেছেন, গত ১১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় কতিপয় দুর্বৃত্তরা তার (সুমা) শ্বশুরবাড়ির পাকা কবরস্থান ভাঙচুর করে ও দখলের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় বাদী জরুরি সেবা ৯৯৯- এ কল করলে থানার এসআই নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। তবে নজরুল ইসলাম ভুক্তভোগী সুমা বেগমসহ মামলার তিনজন সাক্ষীকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। ওসি এবং এসআই আটককৃতদের ছেড়ে দিতে সুমা বেগমের কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা দিকে অপরাগতা প্রকাশ করায় মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন ওসি এবং এসআই। ওইদিন রাত নয়টার পর থানা হেফাজত থেকে বাদী ও মামলার তিনজন সাক্ষীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ওসি এবং এসআই মামলার বাদী ও তিন সাক্ষীকে দীর্ঘসময় থানায় আটকে রাখার সুযোগে দুর্বৃত্তরা কবরস্থান ভাঙচুর করে দখল করতে পেরেছে। বাদীর দায়ের করা এজাহার থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। এ ঘটনায় বাদী সুমা বেগম গত ১৩ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের বরিশাল কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘ঘুষ দাবির কোনো ঘটনা সেদিন ঘটেনি। একটি কু-চক্রী মহলের প্ররোচনায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।