ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে নূর তাপস পেয়েছিলেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫। মোট প্রদত্ত ভোটের ৬০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন পেয়েছিলেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২। প্রদত্ত ভোটের হার ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই নির্বাচনে মেয়র পদে আরও চারজন প্রার্থী ছিলেন, যাঁদের সবাই জামানত হারিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন বলেছে, ওই নির্বাচনে ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু সেই সময়ে যাঁরা ভোটকেন্দ্রগুলো সরেজমিন ঘুরেছেন, তাঁরা দেখেছেন, ১৫ শতাংশ ভোটারও কেন্দ্রে যাননি। তঁাদের মতে, বিজয়ী কিংবা পরাজিত প্রার্থীর যে ভোট দেখানো হয়েছে, দুটিতেই গোলমাল আছে। 

গত বছর আগস্টে দেশত্যাগের আগপর্যন্ত ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং অনেক অঘটনও ঘটিয়েছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় এবং ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া সব স্থানীয় সরকার সংস্থা ভেঙে দেয়। অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মতো ঢাকার দুই সিটিও চলছে প্রশাসক দিয়ে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার রায় জনমনে কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। 

ইশরাক হোসেনের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রার্থী ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা করা হয়, ইভিএমে ভোট জালিয়াতি করা হয়, নির্বাচনে ভোটারদের ভোট গ্রহণে বাধা দেওয়া হয়, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করা হয়। এত সব জালিয়াতির পরও নির্বাচন কমিশন শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ৩ মার্চ ইশরাক হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। আদালত পূর্ণাঙ্গ শুনানি নিয়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করেছেন।

আদালতের রায়ের মাধ্যমে নিকটতম প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা এটাই প্রথম নয়। গত বছরের ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদত হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছিল ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি। নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী সেখানেও বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রাথী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এরপর ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী শাহাদত হোসেন।

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের নির্বাচন হয়েছিল একই দিনে ১ ফেব্রুয়ারি। উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আতিকুল ইসলাম ও বিএনপির তাবিথ আউয়াল। সেখানেও আতিকুল ইসলামকে বিজয়ী ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছিলেন বিএনপির উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। সেই মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়াদ ২০২৬ সালের ২৭ জানুয়ারি শেষ হবে। 

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ করতে হয় এবং সেই ৩০ দিনের মধ্যেই মামলাটি করা হয়েছিল। পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে এই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আইনি বিধান থাকলেও সেটা হয়নি। সাবেক মেয়র তাপস উচ্চ আদালতে আবেদন করে মামলার শুনানি বন্ধ করে রেখেছিলেন। আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, ইশরাক প্রথমে নির্বাচনী রায় বাতিলের আবেদন জানিয়েছিলেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মাস তিনেক আগে সংশোধনী আরজিতে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণার আবেদন জানান। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এটা করতে পারেন। 

একাদশ জাতীয় সংসদের একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বগুড়ার হিরো আলমখ্যাত আশরাফুল হোসেন আলম ফেসবুকে জানিয়েছেন, নিকটতম প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করলে তিনি ঢাকা–১৭ ও বগুড়ার দুটি আসনে জয়ী হওয়ার দাবিদার। কিন্তু মামলা না করলে কারও বিষয় আদালত বিবেচনায় নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে তাঁকেও আদালতে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত ওই সংসদের মেয়াদ অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। ফলে সেই আবেদন আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয় না। 

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হলেও করোনার কারণে সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেন ওই বছরের ১৬ মে। সে ক্ষেত্রে ২০২৫ সালের ১৫ মে মেয়রের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। রায় ঘোষণার পর বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে শুক্রবার ইশরাক হোসেন বলেন, ভোটে তিনি হারেননি, তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর আইন মেনে তিনি মামলা করেছিলেন। সেই মামলা তখন ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ পাঁচ বছর আইনি লড়াইয়ের পর তিনি এখন ন্যায়বিচার পেয়েছেন।

ন্যায়বিচার পেয়েছেন সন্দেহ নেই। কিন্তু যে নির্বাচনে আদালতের রায়ে ইশরাক মেয়র হলেন, সেটি কতটা ‘নির্বাচন’ হয়েছিল, সেই প্রশ্নও না উঠে পারে না। নির্বাচন কমিশন ২৯ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখালেও প্রকৃত ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। 

নির্বাচনের পরদিন ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘নিয়ন্ত্রিত ভোটের নতুন রূপ।’ সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন (বর্তমানে সরকারের উপদেষ্টা) লিখেছিলেন, ‘ভোটারের উপস্থিতি নৈরাশ্যজনক’। বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক আবদুস সালাম বলেছিলেন, ‘ভোট হলো কই। তারা (নির্বাচন কমিশন) মনমতো কিছু ভোট বসিয়ে দিয়েছে।’ 

যে নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ইচ্ছেমতো ভোট বসিয়ে দিয়েছে, সেই নির্বাচনে জয় পুনরুদ্ধার কতটা গৌরবজনক?

আদালতের রায়ের মাধ্যমে একটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত হলো যে নির্বাচনে অনিয়ম করে শেষ বিচারে পার পাওয়া যায় না। এর আগেও দু–একটি ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তির নির্বাচনী রায় বাতিল হয়েছে। এর আগে জাতীয় সংসদের একাধিক নির্বাচনেও পরাজিত প্রার্থী আদালতে মামলা করে পক্ষে রায় পেয়েছেন। অনেক বিলম্বে। কখনো সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, কখনো আবেদনকারী মারা যাওয়ার পর।

শাহাদত হোসেন মেয়াদের আগে রায় পাওয়ায় তিনি শপথ নিয়ে মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু ইশরাকের বেলায় দলের সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি। যদি দল শপথ নেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, তিনি সময় পাবেন ১৫ মে পর্যন্ত। 

একাদশ জাতীয় সংসদের একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বগুড়ার হিরো আলমখ্যাত আশরাফুল হোসেন আলম ফেসবুকে জানিয়েছেন, নিকটতম প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করলে তিনি ঢাকা–১৭ ও বগুড়ার দুটি আসনে জয়ী হওয়ার দাবিদার। কিন্তু মামলা না করলে কারও বিষয় আদালত বিবেচনায় নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে তাঁকেও আদালতে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত ওই সংসদের মেয়াদ অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। ফলে সেই আবেদন আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয় না। 

এ ঘটনায় আরেকটি কঠিন সত্য বেরিয়ে এল। নির্বাচনী অনিয়ম ও কারচুপির বিরুদ্ধে আদালতে যেসব মামলা হয়, সেগুলো ১৮০ দিন বা ছয় মাসের মধ্যেই রায় হওয়া উচিত। বছরের পর বছর এসব মামলা ঝুলে থাকলে আদালতের ন্যায়বিচারও বিচারপ্রার্থীর কোনো কাজে লাগে না। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি আদালতকে প্রভাবিত করে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। 

আদালতের এই রায় ক্ষমতাসীনদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে আশা করি। আদালত যখন কোনো প্রার্থীর পক্ষে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের দেওয়া রায় অবৈধ ঘোষণা করলেন, তখন সেই পদের বিপরীতে তিনি যে বেতন–ভাতা ও সুযোগ–সুবিধা নিয়েছেন, সেটাও ফেরত দেওয়া উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে কেউ এই পথে যেতে সাহস পাবেন না। নির্বাচন সংস্কার কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে অনেকগুলো সুপারিশ করেছে। যেসব সুপারিশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো অবিলম্বে কার্যকর করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। 

সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন ২০২০ স ল র ব এনপ র এক ধ ক হয় ছ ল য় র পর আওয় ম হওয় র সরক র প রথম র আইন

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’

জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী তালিকায় থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত এবং একই অভিযোগে ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার 

ববির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় থাকা ইবির ১৯ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ‘শাস্তি নির্ধারণ কমিটি’ করবেন উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।

এদিকে একই অপরাধে জড়িত থাকায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল করা হবে। আর যারা অধ্যয়নরত, তাদের বহিষ্কার করা হবে।

এর আগে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণে গত ১৫ মার্চ আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন। 

এই কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করে তালিকায় থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নিবর্তনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায়।

কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সাময়িক বরখাস্তের তালিকায় থাকা শিক্ষকরা হলেন: ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ ও অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম আক্তারুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মিয়া রাশিদুজ্জামান।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিনসহ আরো রয়েছেন, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন।

সাসপেন্ড হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকায় রয়েছেন প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান ও আব্দুল হান্নান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা। 

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শাখা কর্মকর্তা উকীল উদ্দিনসহ তালিকায় নাম রয়েছে ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জে এম ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের শাখা কর্মকর্তা তোফাজ্জেল হোসেন, তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) শেখ আবু সিদ্দিক রোকন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমানের।

বহিষ্কার ও সদন বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের বিপুল খান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ ও শাহীন আলম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের রতন রায়। 

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের মুন্সি কামরুল হাসান অনিকসহ তালিকায় রয়েছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের হুসাইন মজুমদার, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের তরিকুল ইসলাম।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের মৃদুল রাব্বী, ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের ফজলে রাব্বী, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শাকিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিমুল খান, আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের কামাল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মাসুদ রানা, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মেজবাহুল ইসলাম বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের তালিকায় রয়েছেন। 

সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের অনিক কুমার, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আব্দুল আলিম, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বিজন রায়, শেখ সোহাগ ও শাওনও এই শাস্তি পেয়েছেন। 

জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করায় শাস্তি পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের তানভীর ও শেখ সাদি, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মাজহারুল ইসলাম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মনিরুল ইসলাম আসিফ, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মারুফ ইসলাম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের পিয়াস, বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ফারহান লাবিব ধ্রুব, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের প্রাঞ্জল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের নাবিল আহমেদ ইমন।

ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের রাফিদ, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আদনান আলি পাটোয়ারি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের লিয়াফত ইসলাম রাকিব এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ইমামুল মুক্তাকী শিমুলও শাস্তির তালিকায় রয়েছেন। 

এদিকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রকাশ্যে বিরোধিতাকারী হিসেবে এই ৬৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও তাদের উস্কানিদাতা এবং পেছন থেকে আন্দোলন দমনকারী অনেকেই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই অভিযোগ অভিযুক্তদেরও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা/তানিম/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’