প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে বিশাল বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ২০২৮ সাল পর্যন্ত কোটা ও শুল্ক সুবিধার প্রতিশ্রুতিও।

সফরে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন এবং বাংলাদেশ চীনের ‘এক চীন নীতিতে’ তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। একইসঙ্গে ‘এক চীন নীতিতে’ বাংলাদেশ তার অবস্থান আবারো স্পষ্ট করেছে চীনের কাছে। ফলে চীনের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

২১০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে সেদেশের সরকার ও চীনা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দেশটির প্রায় ৩০টি কোম্পানি বাংলাদেশের বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে।

এ ছাড়া, মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চীন। চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরো ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে বাকি অর্থ।

২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনে কোটা ও শুল্ক সুবিধা

বাংলাদেশের বিদ্যমান শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা আরো দুই বছর বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে চীন। এর আগে চীনা বাজারে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা ছিল। প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াংয়ের এক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন চীনের বাজারে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ২০২৮ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে।

চীনে আম রপ্তানির দুয়ার খুলল

চীন বাংলাদেশ থেকে আম নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশও চীনে আম পাঠাতে চায়। বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানির জন্য ৬ বছর আগে দেশটির কাছে আবেদন করেছিল। তবে নানা জটিলতায় সেটা আর কার্যকর হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মধ্যে দিয়ে সেদেশে আম রপ্তানির দুয়ার খুলেছে। আগামী মে-জুন মাস থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। এর মধ্যে দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশি আমের চাহিদা বাড়বে।

তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা দেবে চীন

তিস্তা নদী প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক আগেই থেকে চীনের সহায়তা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবার প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে এই প্রকল্পে সহায়তার আশ্বাস মিলেছে। তবে শুধু তিস্তা প্রকল্প নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি অধ্যাপক ইউনূস। তিনি নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য চীন থেকে ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক চীন সফরে সেদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী লি গোইয়িংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেসময় নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বৈঠকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও ঢাকার চারপাশের দূষিত পানি পরিষ্কারের বিষয়ে সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।

এক চীন নীতিতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশ সব সময় এক চীন নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেও মনে করে বাংলাদেশ। তবে এবার প্রধান উপদেষ্টার সফরে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে। একই সঙ্গে চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার ব্যাপারে নিজেদের অঙ্গীকারের কথা স্পষ্ট করেছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলায় সমর্থনের কথাও বলেছে চীন।

তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেছেন, এই বাক্যটি হয়তো চীনের আগ্রহে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হোক বা না হোক, এটি কোনো পার্থক্য তৈরি করে না।

৯ চুক্তি ও সমঝোতা সই

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে একটি চুক্তি ও ৮টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতা–সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া, দুই দেশের চিরায়ত সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে সই হয়েছে ৮টি সমঝোতা স্মারক।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত বুধবার (২৬ মার্চ) চারদিনের চীন সফরে যান। প্রধান উপদেষ্টার এটাই প্রথম কোনো দেশে দ্বিপক্ষীয় সফর। এরই মধ্যে চারদিনের সফর শেষে ঢাকায় ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা। 

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এক চ ন ন ত প রকল প ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

অলিম্পিকে ক্রিকেট: খেলতে না পারার শঙ্কায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড

সোয়া শ বছরের বিরতির পর ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ফিরছে ক্রিকেট। ছেলে ও মেয়েদের ইভেন্টে খেলবে ছয়টি করে দল। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) অলিম্পিকের জন্য ছয় দল চূড়ান্তের যে প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছে, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড।

অলিম্পিকের অংশগ্রহণকারী দল নির্বাচনের যে পদ্ধতি, তাতে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার মতো দলগুলোর খেলার সুযোগ অতি সীমিত। অনিশ্চয়তা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের কোনো দলের অংশগ্রহণও। যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।

জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসি বার্ষিক সভায় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশির লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক নিয়ে আলোচনা হয়। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, সভার পর আইসিসি অলিম্পিকের ছয় দল নির্ধারণের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী এশিয়া, ওশেনিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার শীর্ষ র‍্যাঙ্কিংয়ের দলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। আর স্বাগতিক হিসেবে সুযোগ পাবে যুক্তরাষ্ট্র। বাকি থাকা ৬ নম্বর জায়গাটি কীভাবে পূরণ হবে, সেটি পরে ঠিক হবে।

বর্তমান টি–টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিং অনুসারে এশিয়ার শীর্ষ দল ভারত (র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর), ওশেনিয়ার সেরা অস্ট্রেলিয়া (র‍্যাঙ্কিংয়ে ২), ইউরোপের সেরা ইংল্যান্ড (র‍্যাঙ্কিংয়ে ৩) আর আফ্রিকার সেরা দল দক্ষিণ আফ্রিকা (র‍্যাঙ্কিংয়ে ৫)। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) চায় বিশ্বের সব অঞ্চল থেকে গেমসে প্রতিনিধিত্ব থাকুক। সেদিক থেকে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র আর চার মহাদেশের র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানধারীর অংশগ্রহণ ‘বৈশ্বিক’ রূপই পায়।

আরও পড়ুনঅলিম্পিকে সোনার পদক জেতা শীর্ষ ১০ খেলোয়াড় কারা২৯ জুলাই ২০২৫

তবে ‘সেরা দলই অলিম্পিকে খেলবে’—এমন মানদণ্ড এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় না। বর্তমানে আইসিসির পূর্ণ সদস্যদেশ আছে ১২টি। এর মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা পাঁচে থাকার পরও ওশেনিয়া অঞ্চলের নিউজিল্যান্ড (৪ নম্বরে) আঞ্চলিক র‍্যাঙ্কিং বাছাইয়ের কারণে অলিম্পিকে সুযোগ পাচ্ছে না। আবার যুক্তরাষ্ট্র (র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৭) স্বাগতিক হিসেবে অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাবনাও প্রায় শেষ বলা চলে।

অলিম্পিকে সাধারণত সার্বভৌম দেশ অংশগ্রহণ করে থাকে। ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে যে দলটি খেলে থাকে, সেটি মূলত ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলোর খেলোয়াড় নিয়ে গড়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড আঞ্চলিক বাছাইয়ের মাধ্যমে যেকোনো একটি দেশকে অলিম্পিকে পাঠাতে চায়, যেমনটা হয়েছে ২০২২ কমনওয়েলথ গেমসের সময় (বার্বাডোজ খেলেছিল)। এবার যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিক খেললে আমেরিকা অঞ্চল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্ব আটকে যেতে পারে।

আরও পড়ুন১৩ দেশ মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাহলে অলিম্পিক ক্রিকেটে খেলবে কোন দেশ১৬ মে ২০২৫

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের পাশাপাশি ২০২৮ অলিম্পিকে খেলার আশা মিইয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ (১০), পাকিস্তান (৮), শ্রীলঙ্কা (৭), আফগানিস্তানের (৯) মতো দলগুলোরও। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, অলিম্পিকে খেলার সুযোগ হাতছাড়া হতে চলায় অসন্তোষ জানিয়েছে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। তবে আঞ্চলিক র‍্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে দল নির্ধারণের বিষয়টি এখনো আইসিসি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করেনি। যদিও সংশোধনের সম্ভাবনা কমও বলে লিখেছে গার্ডিয়ান।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেয়েদের ইভেন্টের ছয় দল ২০২৬ নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে। 

অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত মাত্র একবারই ক্রিকেট খেলা দেখা গেছে। ১৯০০ সালে প্যারিস অলিম্পিকে গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যকার একমাত্র ম্যাচে জিতে সোনা জিতেছিল গ্রেট ব্রিটেন।

আরও পড়ুনছিলেন অলিম্পিক তারকা, এখন এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায়০৯ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অলিম্পিকে ক্রিকেট: খেলতে না পারার শঙ্কায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড