ধনীদের নানা রকম শখ থাকে। একসময় বাংলাদেশের অভিজাত ধনীরা বিদেশি কুকুর পালতেন এবং বাড়ির সামনে ছোট্ট সাইনবোর্ডে ঝোলানো থাকত, ‘কুকুর হইতে সাবধান’। অভিজাত হওয়ার ক্ষেত্রে এটা ছিল অব্যর্থ লক্ষণ।

সময় পাল্টেছে। এখন দেশের ধনীদের শখ বদলেছে। নতুন শখের তালিকায় যুক্ত হয়েছে গাড়ি কেনা, রিসোর্টে ঘুরতে যাওয়া, বাগানবাড়ি করা—এ রকম আরও কত কী! সেই সঙ্গে উন্নত বিশ্বের ধনীদের শখও পাল্টেছে। সেই শখের তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে ব্যক্তিগত বিমান থেকে শুরু করে প্রমোদতরি। মোদ্দাকথা, দৈনন্দিন জীবনের ঝামেলা থেকে রেহাই বা নিষ্কৃতি পেতে ধনীরা প্রায়ই পার্টি করেন। সেই পার্টিতে নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে প্রমোদতরি।

দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় সব অতি ধনীর প্রমোদতরি আছে। দিন কয়েকের খাবারদাবার ও পার্টির নানা অনুষঙ্গ সঙ্গে করে এই অতি ধনীরা সাগরে প্রমোদতরি নিয়ে ভেসে পড়েন।

ধনীরা বিলিয়ন বিলিয়ন বা শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেন এসব প্রমোদতরি নির্মাণে। ফোর্বস ম্যাগাজিন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৪০০ ধনীর প্রমোদতরি নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করেছে। তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৪০০ ধনীর অন্তত ৬০টি প্রমোদতরি আছে। কারও কারও আছে একাধিক। এসব প্রমোদতরির দাম ৬০০ কোটি ডলার। ভেসেলস ভ্যালু নামের এক প্রতিষ্ঠান এসব প্রমোদতরির মূল্যমান নির্ধারণ করে থাকে। তাদের হিসাব অনুসারে, এসব প্রমোদতরির দাম ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

এই ধনীদের কেউ কেউ একাধিক প্রমোদতরির মালিক। প্রমোদতরিকে নানাভাবে সাজিয়ে তোলেন তাঁরা। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, এসব প্রমোদতরির দাম ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখ ডলার থেকে শুরু করে ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত। সুইমিংপুল থেকে শুরু করে হেলিপ্যাড—কী নেই এসব প্রমোদতরিতে। দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রমোদতরি কোনগুলো।

কোরু

মালিক: জেফ বেজোস

দৈর্ঘ্য: ৪১৭ ফুট

সম্ভাব্য মূল্য: ৫০ কোটি ডলার

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এই প্রমোদতরির মালিক। এ তরির নির্মাণকারী ডাচ কোম্পানি ওশেনাকো। এটি চালানোর জন্য ঐতিহাসিক রটারডাম সেতু আংশিকভাবে ভেঙে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। এ নিয়ে বেশ বিতর্কও হয়েছিল। এ তরির সাহায্যকারী তরির নাম আবেওনা। এর দাম ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ তরির দাঁড়ে এক নারীর ভাস্কর্য খোদিত আছে। ধারণা করা হয়, এটি বেজোসের বর্তমান বান্ধবী লরেন সানচেজের, যদিও তিনি এ দাবি অস্বীকার করেছেন।

কিসমেত

মালিক: শহীদ খান

দৈর্ঘ্য: ৪০০ ফুট

সম্ভাব্য মূল্য: ৩৯ কোটি ডলার

কিসমেত নামের এই প্রমোদতরি তৈরি করা হয়েছে আরাম-আয়েশের জন্য। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, এ প্রমোদতরিতে সাত তারকা মানের সুযোগ-সুবিধা আছে। এতে ম্যাসাজ থেকে শুরু করে ক্রায়োথেরাপি (অতি শীতল তাপমাত্রায় টিস্যুর চিকিৎসা) চেম্বার আছে। সেই সঙ্গে আছে সিনেমা থিয়েটার, যাকে বলে ‘নেমে সিনেমা’। এই থিয়েটারে আছে ১৫০ ইঞ্চি টেলিভিশন, আছে জাহাজের ডুবে থাকা অংশে বসে সিনেমা দেখার সুযোগ।

লঞ্চপ্যাড

মালিক: মার্ক জাকারবার্গ

দৈর্ঘ্য: ৪০০ ফুট

সম্ভাব্য মূল্য: ৩৯ কোটি ডলার

এই প্রমোদতরির জগতে মার্ক জাকারবার্গ নতুন মানুষ, যদিও তিনি শুরু করেছেন বড় ছক্কা দিয়ে। বিশ্বের অন্যতম প্রমোদতরি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফেডশিপ জাকারবার্গের এ প্রমোদতরি; অর্থাৎ লঞ্চপ্যাড তৈরি করেছে। বিলাসব্যসনের যা যা দরকার বা প্রমোদতরিতে যা যা থাকতে পারে, তার সবই জাকারবার্গের এ প্রমোদতরিতে আছে। যেমন দুটি হেলিপ্যাড, সুইমিংপুল, চলন্ত মেঝে ও ডেক।

প্রজেক্ট ওয়াই ৭২২

মালিক: গ্যাবে নিউয়েল

আকৃতি: ৩৬৪ ফুট

সম্ভাব্য মূল্য: ৩৩ কোটি ৫০ লাখ

মূল্যের দিক থেকে এটি চতুর্থ প্রমোদতরি, যদিও এটি এখন পর্যন্ত মালিকের হাতে পৌঁছায়নি। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কোম্পানি ওশানো তরিটি তৈরি করছে। এতে নিজস্ব ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র আছে। সেই সঙ্গে আছে ব্যাটারিতে শক্তি সংরক্ষণের ব্যবস্থা। ফলে দীর্ঘ সময় কোনো ধরনের কার্বন নিঃসরণ না করে এ তরি চলতে পারে। চলতি বছরেই এ তরি হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।

নর্ন

মালিক: চার্লস সিমিওনি

দৈর্ঘ্য: ২৯৫ ফুট

সম্ভাব্য মূল্য: ২৫ কোটি ডিলার

এ প্রমোদতরি তৈরি করেছে লারসেন নামের এক কোম্পানি। এর দাঁড় অনেকটা সামরিক যানের মতো। এর মালিক চার্লস সিমিওনি একসময় মাইক্রোসফটের মালিক ছিলেন। নর্নে আছে সিনেমা থিয়েটার, সুইমিংপুল ও উঁচুতে ওঠানো যায়—এমন মেঝে। এ মেঝেকে নাচের মেঝে হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

মার্কিন ধনীদের ব্যবহৃত দামি প্রমোদতরিগুলোর মধ্যে আরও আছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের মুনরাইজ। এর মালিক হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যান কৌম। এরপর আছে ২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের কাওস। ৩৬১ ফুট দীর্ঘ এ তরির মালিক ন্যান্সি ওয়ালটন লরি। ২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার সম্ভাব্য মূল্যের ব্রাভো ইউজেনিয়ার মালিক জেরি জোন্স। ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যের রাইজিং সান আছে এরপর। এর মালিক ডেভিড গেফেন। দশম স্থানে আছে ১৯ কোটি ডলার মূল্যের ফ্রাঙ্ক ফেরিতা-৩। এ জাহাজের দৈর্ঘ্য ২০৮ ফুট এবং এর মূল্য ১৯ কোটি ডলার।

অর্থনীতিতে অবদান

দামি এসব প্রমোদতরি বা সুপারইয়ট নির্মাণের ব্যয় রীতিমতো পিলে চমকে দেওয়ার মতো। মার্কিন ধনীদের সবচেয়ে দামি প্রমোদতরির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই এটি কেন্দ্র করে একধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আছে। এসব প্রমোদতরি নির্মাণে উচ্চমানের প্রকৌশল, নকশা ও দক্ষতা প্রয়োজন হয়। এর বদৌলতে জাহাজনির্মাণ কারখানা, উপকরণ সরবরাহকারী ও দক্ষ শ্রমিকদের বিপুল আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়। দরকার হয় ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, ইলেকট্রনিকস, অভ্যন্তরীণ সজ্জা ও বিলাসবহুল আসবাবের। তার সঙ্গে আছে রক্ষণাবেক্ষণ ও জাহাজের নাবিক-সহকারীদের বেতন–ভাতা—সব মিলিয়ে বড় ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম হয় এ শিল্প কেন্দ্র করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ টসম ভ ব য ম ল য জ ক রব র গ এর ম ল

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ