ধোনির চেন্নাইকে হারিয়ে রাজস্থানের প্রথম জয়
Published: 31st, March 2025 GMT
আইপিএলের এবারের আসরে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল রাজস্থান রয়্যালস। রোববার (৩০ মার্চ) রাতে তারা নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ৬ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসকে।
গৌহাটির বর্ষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রাজস্থান টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৮২ রান সংগ্রহ করে। জবাব দিতে নেমে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে চেন্নাই থামে ১৭৬ রানে।
জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ৩৯ রান। তুষার দেশপান্ডের করা ১৯তম ওভারে ধোনি ও জাদেজা ১ চার ও ২ ছক্কায় ১৯ রান তুলে শেষ ওভারে নিয়ে যান ম্যাচ। যেখানে জিততে তাদের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। কিন্তু তারা ওই ওভারে একটি উইকেট হারিয়ে নিতে পারে মাত্র ১৩ রান।
রান তাড়া করতে নেমে চেন্নাইর রুতুরাজ গায়কোয়াড় ৪৪ বলে ৭টি চার ও ১ ছক্কায় ৬৩ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন। রবীন্দ্র জাদেজা ২২ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন অপরাজিত ৩২ রান। এছাড়া রাহুল ত্রিপাঠি ২৩, শিভম দুবে ১৮ ও ধোনি করেন ১৬ রান।
তার আগে রাজস্থানের সংগ্রহ ১৮২ পর্যন্ত নিতে ব্যাট হাতে অবদান রাখেন নিতিশ রানা। ওয়ান ডাউনে নামা এই ব্যাটসম্যান মাত্র ৩৬ বলে ১০টি চার ও ৫ ছক্কায় ৮১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। ২৮ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন অধিনায়ক রিয়ান পরাগ। এছাড়া সঞ্জু স্যামসন ২০ ও শিমরন হেটমায়ার করেন ১৯ রান।
বল হাতে চেন্নাইর নূর আহমদ ও মাথিশা পাথিরানা ৪ ওভারে ২৮টি করে রান দিয়ে ২টি করে উইকেট নেন। খলিল আহমেদ ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে নেন আরও ২টি উইকেট।
অন্যদিকে রাজস্থানের ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৪ ওভারে ৩৫ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে চেন্নাইকে ছুড়ে দেওয়া রানের নাগাল পেতে দেননি। ১টি করে উইকেট নেন জোফরা আর্চার ও সন্দীপ শর্মা।
অনবদ্য ৮১ রানের ইনিংস খেলে হাসারাঙ্গাকে পেছনে ফেলে ম্যাচসেরা হন তিনিশ রানা।
এই জয়ে ৩ ম্যাচ থেকে ২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে পয়েন্ট টেবিলের নবম স্থানে অবস্থান নিয়েছে রাজস্থান। সমান ম্যাচ থেকে সমান পয়েন্ট নিয়ে চেন্নাই সুপার কিংস আছে সপ্তম স্থানে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী কৃষিশ্রমিক
‘১৫-২০ বছর ধইরা (ধরে), ই-খলায় (ধান মাড়াই ও শুকানোর স্থান) কাজ করি আমরা। আমরারে ৫০০ টেকা (টাকা) রোজ দেইন (দেন), আর বেটাইনতে (পুরুষরা) পাইন ৭০০ থেকে ৮০০ টেকা, দুপুরে আমরারে চিড়া-গুড় দেওয়া অয় (হয়) হেরার (পুরুষদের) লাগি ভাতের ব্যবস্থা করা অয়।’
কথাগুলো বলছিলেন তাহিরপুরের শনির হাওরপারের কালীবাড়ির সামনে একটি খলায় ধান শুকানো, ঝাড়াই ও বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকা দুই নারীশ্রমিক গীতা বর্মণ ও লক্ষ্মী রানী বর্মণ।
কেবল তাহিরপুরের ধানের খলায় নয়। হাওর এলাকাজুড়েই ধানের খলায় কাজ করা নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মজুরিতে বৈষম্য রয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরের নতুনপাড়ার বারীক মিয়ার খলায় কাজ করছিলেন, পাশের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মধ্যবয়সী নারীশ্রমিক প্রেমলতা বিশ্বাস। কখন কাজে এসেছেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন, সকাল ৮টায়। কয়টায় ছাড়বেন কাজ, বললেন বিকাল ৫টায়। মজুরি কত জানতে চাইলে বললেন, দিনে ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিকরা কত পায় প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ৭০০ টাকা। আপনাকে কম দেওয়া হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রেমলতা বলেন, ‘ই-দেশও নিয়মওই এইটা, বেটাইনতে (পুরুষরা) বেশি পায়।’
মধ্যনগরের বংশিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা হাসিনা বেগম জানান, ধান মাড়াই, শুকানো ও গোলায় তোলার কাজ করেন তিনি। প্রতিদিনই সকালে আগে কাজে লাগেন এবং কাজ শেষে সবার পরে ফেরেন তিনি। কিন্তু মজুরি দেবার সময় তাঁকে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিককে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকাও দেওয়া হয়।
দিরাই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বড় গৃহস্থ সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছত্তার মিয়ার ভাষ্য, রাজাপুরে নারী কৃষিশ্রমিক কমে গেছে। পাশের ইসলামপুরে এখনও বেশির ভাগ কাজ করেন নারীরা। ওখানে নারী ও পুরুষ শ্রমিক অর্ধেক-অর্ধেক। এবার পুরুষ ও মহিলা শ্রমিককে কত টাকা চুক্তিতে গ্রামের বড় কৃষকরা কাজে লাগিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, পুরুষ ২০ দিনে ১৬ মণ ধান এবং নারী শ্রমিকদের ৮ মণে করানো হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কথাও তুলেছি, কিন্তু অন্যরা তাতে বিরক্ত হন, তারা বলেন, চেয়ারম্যান সাবে রেইট বাড়িয়ে সবাইকে বেকায়দায় ফেলতে চান।’
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরের ফসল উৎপাদনে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় কৃষি শ্রমিকের চাইতে এক সময় বেশি ছিল নারী শ্রমিক। মজুরি বৈষম্যের কারণে এদের অনেকে এলাকার কাজ ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরে চলে গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য বললেন, কৃষিতে মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে গ্রামীণ এলাকা ছেড়ে উপজেলা, জেলা ও রাজধানীর গার্মেন্টসমুখী হয়েছে হাজার হাজার নারীশ্রমিক। কৃষি ছাড়াও অন্যান্য পেশায়ও মজুরি বৈষম্য থাকায় নারীর উপস্থিতির সংখ্যা কমছে।
গৌরী ভট্টাচার্য্য আরও বলেন, এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়ে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত পুরুষদের পেশা কৃষক লিখলেও নারীর ক্ষেত্রে হয় না। নারীর প্রতি এমন বৈষম্য বন্ধ করতে হবে।