জুলাই আন্দোলনে নিহত সাগরের পুরানো স্মৃতি মনে করে ঈদের দিন কবরের পাশে বিলাপ করছেন তার মা আম্বিয়া বেগম। সাগরের বাবা নুরুল হক হাওলাদার ছেলের শোকে সকাল থেকে ঘর থেকে বের হননি, কারো সঙ্গে কথাও বলেননি। সাগরের একমাত্র ছোট বোন মরিয়ম খানম ভাইয়ের কথা মনে করে বাড়ির কোণে একা চুপচাপ বসে আছে, কারোর সঙ্গে কথা বলছে না। 

সাগরের বৃদ্ধ দাদা আ.

মজিদ হাওলাদার (৭৫)ও দাদি রহিমা বেগম (৬৫) বাড়ির উঠানে বসে বাকরুদ্ধ হয়ে চোখের পানি ফেলছেন। কান্নার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন তারা।

সোমবার ঈদের দিন সকালে উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা গ্রামে সাগরের বাড়ি গিয়ে ওই পরিবারের কারোর পরনে নতুন জামা-কাপড় দেখা যায়নি। এমনকি ঈদ উপলক্ষ্যে সকাল থেকে ছিল না কোনও রান্নাবান্নার আয়োজন।

সেখানে কথা হয় সাগরের মা আম্বিয়া বেগমের সঙ্গে। ছেলের কবরের পাশে কান্নাজরিত কণ্ঠে বিলাপ করতে করতে বলেন, সংসারের খরচ ও বোনের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে দুই মাস আগে সাগর ঢাকায় গিয়েছিল। ওর স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে বেশি টাকা আয় করে বাড়িতে পাকা ভবন তৈরি করবে। ওই ভবনে সবার জন্য আলাদা কক্ষ থাকবে ও বোনের লেখাপড়াসহ মায়ের জন্য কাজের লোক রেখে দেবে। 

সাগরের বৃদ্ধ দাদা মজিদ হাওলাদার বলেন, আমাদের পরিবারে কোনও ঈদ নেই, সাগর চলে যাওয়ায় আমাদের জীবন থেকে ঈদ হরিয়ে গেছে। 
আজ সাগর বেঁচে থাকলে বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসে বলতো দাদা ঈদ সালামি দাও। সাগর ছিল আমার একমাত্র নাতি, আমার কলিজার টুকরা। 

সাগরের কাকা মাইনুল হাওলাদার জানান, ঈদকে সামনে রেখে তারা কোনও কেনাকাটা না করলেও তিনদিন আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে  সাগরের পরিবারকে ঈদসামগ্রী পৌঁছে দেন জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতারা। সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের নির্দেশে সাগরের কবরস্থান পাকাকরণের কাজ চলমান রয়েছে।

সাগরের বাবা নুরুল হক হাওলাদার বাগধা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী। তার এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সাগর ছিল বড়। 

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর দুই মাস আগে সাগর হাওলাদার (১৭) সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার ও বোনের লেখাপড়া খরচ জোগাতে ঢাকায় আসেন। তিনি ধানমন্ডি লেকপাড়ের একটি চায়ের দোকানে ৯ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। ১৯ জুলাই রাতে বাসায় ফেরার পথে আবাহনী মাঠের কর্নারে পুলিশ বক্সের কাছে দু-পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ২৪ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন সাগর হাওলাদার।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে সাহিত্য আড্ডার স্থানসহ নানা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যৌথ অভিযানে নেমেছে জেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। এ সময় সাহিত্য সংসদের ‘বীক্ষণ’ আসরের সাহিত্য আড্ডার স্থাপনাসহ পার্কের ভেতরে এবং বাইরে গড়ে উঠা ভ্রাম্যমাণ দোকান, বিজয়ী পিঠা বাড়িসহ সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আজ বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠ সংলগ্ন জয়নুল উদ্যান পার্কে এই অভিযান চালানো হয়। 

এ অভিযানের এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মুফিদুল আলম নিজে উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম তদারকি করেন। এ সময় পার্কের সৌন্দর্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান নগরবাসী। তবে এ উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষোভ ও অসেন্তাষ প্রকাশ করেছেন কবি সাহিত্যিকরা। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এই স্থানটিতে দেশের খ্যাতনামা এবং নবীণ কবি সাহিত্যকদের নিয়ে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বসে সাহিত্য সংসদের ‘বীক্ষণ’ আসর নামে সাহিত্য আড্ডা। এতে কবিতা পাঠের পাশাপাশি শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে চলে আলোচনা ও মতবিনিময়।

স্থানীয়রা জানান, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ফলে পার্কটি তার স্বরূপ ফিরে পাবে। এতে আমার মত অন্য দর্শনার্থীরা প্রকৃতির নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটাতে পারবে।  

নতুন বাজার এলাকার শাহজাহান কবির বলেন, একাধিকবার পার্কেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও প্রভাবশালী মহলের মদদে ফের তৈরি হয় অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু দর্শনার্থীরা চায় পার্কের নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশ। তবে এ উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষোভ ও অসেন্তাষ প্রকাশ করেছেন কবি সাহিত্যিকরা। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এই স্থানটিতে দেশের খ্যাতনামা এবং নবীণ কবি সাহিত্যকদের নিয়ে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বসে সাহিত্য সংসদের ‘বীক্ষণ’ আসর নামে সাহিত্য আড্ডা। এতে কবিতা পাঠের পাশাপাশি শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে চলে আলোচনা ও মতবিনিময়। 

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজীদ বলেন, মূলত জেলা প্রশাসনের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য জয়নুল উদ্যোনের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি এবং প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলা। তাছাড়া পার্কের বেশ কয়েকটি স্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরে অসামসাজিক কার্যকলাপ চলার অভিযোগে অভিযান চালানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ