শুধু মেহমানদারির জন্যই ধার করে আধা কেজি গরুর মাংস কিনলেন আয়েছ আলী
Published: 1st, April 2025 GMT
বাসায় মেহমান এসেছে, কিন্তু হাতে টাকা নেই। সে জন্য টাকা ধার করতে হয়েছে আয়েছ আলীকে। বাজারে গিয়ে দেখেন, গরুর মাংসের কেজি এখন ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। এর মাঝামাঝি দামেরটা, অর্থাৎ ৮০০ টাকা কেজিতে তিনি আধা কেজি গরুর মাংস কিনেছেন ৪০০ টাকায়। আয়েছ আলী বলেন, ‘টাকার অভাবে ঈদের দিনেও বাসায় গরুর মাংস রান্না হয়নি। কিন্তু মেহমান আসবে। তাই আজ আর না কিনে পারলাম না।’
আয়েছ আলী পেশায় বাসাবাড়ির নিরাপত্তারক্ষী। তবে অসুস্থতার কারণে তিন থেকে চার মাস ধরে তিনি বেকার। দেড় বছর ধরে তিনি সাত সদস্যের (পাঁচ মেয়ে ও স্বামী–স্ত্রী) পরিবার নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে ভাড়া থাকেন। এর আগে গ্রামে দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। এখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হচ্ছেন তাঁর স্ত্রী, যিনি মোহাম্মদপুরেই তিনটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। এ রকম নিম্নবিত্ত অনেক পরিবারের পক্ষেই ৭৫০ থেকে ৮৫০ কেজি দরে গরুর মাংস কিনে খাওয়া কঠিন। নেহাত মেহমানদারির মতো অতি প্রয়োজনীয় ও সামাজিকতা বা মুখরক্ষার বিষয় থাকলে ধারকর্জ করে হলেও কিছু করার চেষ্টা করতে হয়।
আজ মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে কথা হয় আয়েছ আলীর সঙ্গে। তখন তিনি একটি দোকান থেকে গরুর মাংস কিনছিলেন। কথায় কথায় আয়েছ আলী জানান, আর্থিকভাবে খুবই সংকটে আছেন তিনি। বাসার নিয়মিত বাজার করতেই হিমশিম খেত হয়। ফলে গরুর মাংস কিনে খাওয়া তাঁর জন্য অনেক বড় বিষয়।
এ বছর পবিত্র রমজানের ঈদ উপলক্ষে বিশেষভাবে কোনো বাজার হয়নি আয়েছ আলীর বাসায়। গরু, এমনকি মুরগির মাংসও কেনেননি তাঁরা। স্ত্রী যে তিনটি বাসায় কাজ করেন, এর মধ্যে একটি বাসা থেকে গতকাল ঈদের দিন রান্না করা কিছু গরুর মাংস দিয়েছিল। সেগুলোই সবাই মিলে ভাগ করে খেয়েছেন। তবে ঈদ উপলক্ষে আজ তাঁর বাসায় ছোট শ্যালক সপরিবার বেড়াতে আসার কথা। তাই সামাজিকতার কথা ভেবে তিনি মাংস কিনতে বাজারে আসেন।
আয়েছ আলী বলেন, ‘আমার তো কোনো আয় নেই। বউ এক বাসা থেকে আগামী মাসের অগ্রিম বেতন হিসেবে দুই হাজার টাকা ধার এনেছেন। সেটি নিয়েই বাজারে এসেছি। এ টাকা দিয়ে আধা কেজি গরুর মাংস, এক থেকে দেড় কেজি ব্রয়লার মুরগি, ডিম, নুডুলস ও কোক কিনব। গরুর মাংসের দাম অনেক বেশি; না হলে এক কেজি কিনতাম।’
ঈদের পরদিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এমন আরও কিছু নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষকে বাজার করতে দেখা গেছে। এমনই দুজন হলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শ্যামলী হাউজিং এলাকার বাসিন্দা শাফিয়া আক্তার ও মেহের খাতুন। তাঁরা দুজনেই গৃহকর্মীর কাজ করেন; থাকেন পাশাপাশি বাসায়। আজ বেলা তিনটার দিকে দুজনে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে এসেছেন গরুর মাংস কিনতে।
জানতে চাইলে মেহের খাতুন বলেন, ‘আমরা এক রান্নায় ছয়জন খাই। ঈদের দিন বাসায় ব্রয়লার মুরগি, ভাত, ডাল ও সেমাই রান্না করেছিলাম। আজকে বাসায় মেয়ে–জামাই বেড়াতে আসবে। এ জন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে গরুর মাংস কিনতে এসেছি। যেসব বাসায় কাজ করি, তারা ঈদ বোনাস হিসেবে কিছু টাকা দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে এসব কিনছি।’
শাফিয়া আক্তারের গল্পও অনেকটা একই রকম। তিনি বলেন, ‘মাংস নিলে তো শুধু মেহমানকে দেওয়া যায় না। পরিবারের অন্যদের পাতেও দিতে হয়। বাসায় লোকসংখ্যা সাতজন। এ জন্য দুই কেজির কম নিলে হবে না। এলাকায় সব দোকান বন্ধ। তাই ৪০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে কৃষি মার্কেটে এসেছি। এখানে দুই কেজি গরুর মাংস কিনতেই দেড় হাজার টাকা শেষ হয়ে গেল।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র পর ব র র ক জ কর স ক নত
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরে আসছে ২৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ সুকুক
আগামী ডিসেম্বরে আসছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ‘বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ সুকুক’। এই সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আলোচ্য সুকুক সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিপরীতে ইস্যু করা হবে। এর মাধ্যমে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২০টি উপজেলার পল্লী এলাকায় সড়ক উন্নয়ন, প্রশস্তকরণ, পুনর্বাসন ও ঢাল রক্ষণাবেক্ষণ এবং হাট-বাজার ও পর্যটন এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রকল্প এলাকায় কৃষি-অকৃষি অর্থনীতির সঞ্চালন, গ্রামীণ এলাকার জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পরিবহন ব্যয় ও সময় হ্রাস করা সম্ভব হবে। তাই, সুকুকটির নামকরণ ‘আইআরআইডিপিএনএফএল সোসিও-ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট সুকুক’ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোকে ৭ দিনের সময় দিল সরকার
সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার: ইসি আনোয়ারুল
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে ৭ম 'বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ সুকুক' ইস্যুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সভা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের অধীনে গঠিত শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কমিটির সভাপতি ড. মো. কবির আহাম্মদ।
কমিটির সদস্যরা সুকুক ইস্যুর সম্মতি দিয়েছে। আলোচ্য প্রকল্পটির বিপরীতে ইজারা পদ্ধতিতে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ৭ বছর মেয়াদি সুকুক ইস্যুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৪ হাজার কোটি টাকার মোট ছয়টি সুকুক ইস্যু করেছে।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক