বাসায় মেহমান এসেছে, কিন্তু হাতে টাকা নেই। সে জন্য টাকা ধার করতে হয়েছে আয়েছ আলীকে। বাজারে গিয়ে দেখেন, গরুর মাংসের কেজি এখন ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। এর মাঝামাঝি দামেরটা, অর্থাৎ ৮০০ টাকা কেজিতে তিনি আধা কেজি গরুর মাংস কিনেছেন ৪০০ টাকায়। আয়েছ আলী বলেন, ‘টাকার অভাবে ঈদের দিনেও বাসায় গরুর মাংস রান্না হয়নি। কিন্তু মেহমান আসবে। তাই আজ আর না কিনে পারলাম না।’

আয়েছ আলী পেশায় বাসাবাড়ির নিরাপত্তারক্ষী। তবে অসুস্থতার কারণে তিন থেকে চার মাস ধরে তিনি বেকার। দেড় বছর ধরে তিনি সাত সদস্যের (পাঁচ মেয়ে ও স্বামী–স্ত্রী) পরিবার নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে ভাড়া থাকেন। এর আগে গ্রামে দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। এখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হচ্ছেন তাঁর স্ত্রী, যিনি মোহাম্মদপুরেই তিনটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। এ রকম নিম্নবিত্ত অনেক পরিবারের পক্ষেই ৭৫০ থেকে ৮৫০ কেজি দরে গরুর মাংস কিনে খাওয়া কঠিন। নেহাত মেহমানদারির মতো অতি প্রয়োজনীয় ও সামাজিকতা বা মুখরক্ষার বিষয় থাকলে ধারকর্জ করে হলেও কিছু করার চেষ্টা করতে হয়।

আজ মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে কথা হয় আয়েছ আলীর সঙ্গে। তখন তিনি একটি দোকান থেকে গরুর মাংস কিনছিলেন। কথায় কথায় আয়েছ আলী জানান, আর্থিকভাবে খুবই সংকটে আছেন তিনি। বাসার নিয়মিত বাজার করতেই হিমশিম খেত হয়। ফলে গরুর মাংস কিনে খাওয়া তাঁর জন্য অনেক বড় বিষয়।

এ বছর পবিত্র রমজানের ঈদ উপলক্ষে বিশেষভাবে কোনো বাজার হয়নি আয়েছ আলীর বাসায়। গরু, এমনকি মুরগির মাংসও কেনেননি তাঁরা। স্ত্রী যে তিনটি বাসায় কাজ করেন, এর মধ্যে একটি বাসা থেকে গতকাল ঈদের দিন রান্না করা কিছু গরুর মাংস দিয়েছিল। সেগুলোই সবাই মিলে ভাগ করে খেয়েছেন। তবে ঈদ উপলক্ষে আজ তাঁর বাসায় ছোট শ্যালক সপরিবার বেড়াতে আসার কথা। তাই সামাজিকতার কথা ভেবে তিনি মাংস কিনতে বাজারে আসেন।

আয়েছ আলী বলেন, ‘আমার তো কোনো আয় নেই। বউ এক বাসা থেকে আগামী মাসের অগ্রিম বেতন হিসেবে দুই হাজার টাকা ধার এনেছেন। সেটি নিয়েই বাজারে এসেছি। এ টাকা দিয়ে আধা কেজি গরুর মাংস, এক থেকে দেড় কেজি ব্রয়লার মুরগি, ডিম, নুডুলস ও কোক কিনব। গরুর মাংসের দাম অনেক বেশি; না হলে এক কেজি কিনতাম।’

ঈদের পরদিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এমন আরও কিছু নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষকে বাজার করতে দেখা গেছে। এমনই দুজন হলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শ্যামলী হাউজিং এলাকার বাসিন্দা শাফিয়া আক্তার ও মেহের খাতুন। তাঁরা দুজনেই গৃহকর্মীর কাজ করেন; থাকেন পাশাপাশি বাসায়। আজ বেলা তিনটার দিকে দুজনে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে এসেছেন গরুর মাংস কিনতে।

জানতে চাইলে মেহের খাতুন বলেন, ‘আমরা এক রান্নায় ছয়জন খাই। ঈদের দিন বাসায় ব্রয়লার মুরগি, ভাত, ডাল ও সেমাই রান্না করেছিলাম। আজকে বাসায় মেয়ে–জামাই বেড়াতে আসবে। এ জন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে গরুর মাংস কিনতে এসেছি। যেসব বাসায় কাজ করি, তারা ঈদ বোনাস হিসেবে কিছু টাকা দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে এসব কিনছি।’

শাফিয়া আক্তারের গল্পও অনেকটা একই রকম। তিনি বলেন, ‘মাংস নিলে তো শুধু মেহমানকে দেওয়া যায় না। পরিবারের অন্যদের পাতেও দিতে হয়। বাসায় লোকসংখ্যা সাতজন। এ জন্য দুই কেজির কম নিলে হবে না। এলাকায় সব দোকান বন্ধ। তাই ৪০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে কৃষি মার্কেটে এসেছি। এখানে দুই কেজি গরুর মাংস কিনতেই দেড় হাজার টাকা শেষ হয়ে গেল।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র পর ব র র ক জ কর স ক নত

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা মেডিকেল থেকে ভুয়া চিকিৎসক আটক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মহিলা ওয়ার্ড থেকে সজীব দাস পার্থ (২১) নামের এক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করেছে হাসপাতালের দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। 

বুধবার (৩০ জুলাই) রাত দেড়টার দিকে তাকে আটক করা হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, রাতে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি কুলসুম বেগম (৫৪) নামের এক নারী রোগীকে হুইলচেয়ার থেকে জোর করে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তি। এতে রোগী পড়ে যান। তা দেখে ওয়ার্ডের লোকজন ও আনসার সদস্যরা সন্দেহভাজন ব্যক্তিটিকে পালানোর চেষ্টাকালে ধরে ফেলেন। পরে তাকে ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, “রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ড থেকে রোগীর স্বজন ও আনসার সদস্যরা ভুয়া চিকিৎসক সজীব দাস পার্থ এবং তার এক সহযোগী মানিক মিয়াকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন।”

তিনি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সজীব দাস নিজেকে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার বিলবাড়ি পেড়কুড়ি গ্রামের বাসিন্দা এবং রানেশ চন্দ্র দাসের ছেলে বলে পরিচয় দেয়। দাবি করে, পাবনা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র সে।

পরিদর্শক ফারুক আরো বলেন, “তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, ছেলেটির মানসিক সমস্যা রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় আসছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/বুলবুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ