দ্রব্যমূল্য আর বাড়িভাড়ার ঊর্ধ্বগতির কারণে, বিশেষ করে শহুরে জীবন যে কতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ চীনা তরুণী ইয়াং। ১৮ বছরের এই তরুণী দক্ষিণ চীনের হুবেই প্রদেশের একটি গ্রামাঞ্চলে বড় হয়েছেন। এই তরুণী চাকরিসূত্রে এখন হুনান প্রদেশের জুজোউ শহরে থাকেন। সেখানে একটি আসবাব বিক্রির দোকানে কাজ করেন তিনি, মাসে ২ হাজার ৭০০ ইউয়ান বেতন পান।

শহরটিতে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করতে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ ইউয়ান খরচ করতে হয়। ইয়াং যে বেতন পান, তা দিয়ে তাঁর পক্ষে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করা কঠিন। জীবনযাত্রার বাকি খরচও তো তাঁকে চালাতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য তিনি কিছু সঞ্চয়ও করতে চান।

এ জন্য অভিনব এক সিদ্ধান্ত নেন এই তরুণী। তিনি তাঁর বসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসেন, মাসে ৫০ ইউয়ানের বিনিময়ে তিনি তাঁর অফিসের একটি শৌচাগারে বসবাস করবেন। শৌচাগারের আয়তন ৬ বর্গমিটার।

সেখানে ইয়াং একটি ছোট বিছানা পাতেন, যেটি গুটিয়ে রাখা যায়। একটি ছোট্ট রান্নার পাত্র, একটি পর্দা আর জামাকাপড় ঝোলানোর একটি র‍্যাক। এক মাস ধরে তিনি ওই শৌচাগারে বসবাস করছেন। তিনি প্রতিদিন শৌচাগারটি পরিষ্কার করেন এবং মাঝেমধ্যে রাতে নুডলস রান্না করে খান।

দিনের বেলা ইয়াং তাঁর জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে রাখেন। যেন অন্য কর্মীরা স্বস্তির সঙ্গে শৌচাগারটি ব্যবহার করতে পারেন।

ইয়াং বলেন, তিনি শৌচাগারটি নিয়মিত পরিষ্কার করেন, এতে কোনো দুর্গন্ধ নেই। তা ছাড়া যেহেতু কোম্পানিটিতে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভির ব্যবস্থা আছে, তাই তিনি সেখানে থাকতে নিরাপদও বোধ করেন।

এই তরুণী কখনো শৌচাগারের দরজা বন্ধ করেন না বলেও জানান। বলেন, এখনো তাঁর কোনো কিছু খোয়া যায়নি।

ইয়াংয়ের বসও একজন নারী। তিনিও তরুণ বয়সে স্বাধীন জীবনযাপনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছিলেন।

ইয়াং কিন্তু শৌচাগারে বসবাস নিয়ে একেবারেই লজ্জিত নন। বরং তিনি চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত তাঁর শৌচাগারে বসবাসের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন। তাঁর অনুসারী সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।

ইয়াংয়ের বয়স যখন মাত্র এক বছর, তখন তাঁর বাবা-মা তাঁকে দাদা-দাদির কাছে রেখে কাজের জন্য অন্যত্র চলে যান। ১৬ বছর বয়সে ইয়াং বাড়ি ছাড়েন এবং নিজেই নিজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ভবিষ্যতে নিজের জন্য একটি বাড়ি বা গাড়ি কিনতে চান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বসব স

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ