কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার শিকার হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর বাড়িতে এবার সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদীয়ারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আবদুল হাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লবের অভিযোগ, রাত আনুমানিক ১টার দিকে জামায়াত-শিবির সমর্থক সালাহ উদ্দিন আতিক ও আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের সশস্ত্র দল তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা রামদা, কিরিচ ও লাঠিসোটা দিয়ে তাদের ঘরের দরজা-জানালা ও ফটক ভাঙচুর করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বাড়িতেই ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে একই চক্র আমার বাবার গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার পর বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করে। আগের ঘটনায় করা মামলা প্রত্যাহার করতে আসামিরা তাদের লোকজন নিয়ে এবার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।’

আব্দুল হাই কানু বলেন, ‘জামায়াত-শিবির কর্মীরা আমাকে বাঁচতে দেবে না। বৃহস্পতিবার রাতে দরজা ভেঙে ওরা ভেতরে ঢুকতে পারলে আমাকে হয়তো মেরে ফেলত। রমজান মাস শেষে প্রশাসনের আশ্বাসে ঈদ করতে বাড়িতে আসার পর থেকেই হুমকি আসছিল। আগের মামলাটি প্রত্যাহার না করলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে গেছে।’

শুক্রবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ বেলাল হোসাইন সমকালকে বলেন, ‘হামলার ঘটনায় কারা জড়িত, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জামায়াতের কারও সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুর বাড়িতে যায়। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা হয়নি। ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের নিরাপত্তায় বাড়িতে পাহারায় রয়েছে পুলিশ।

এর আগে ২২ ডিসেম্বর আব্দুল হাই কানুকে স্থানীয় জামায়াত সমর্থক আবুল হাসেম ও অহিদুর রহমানের নেতৃত্বে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়। ঘটনার শুরুতে জামায়াত কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দল থেকে দাবি করলেও, পরদিন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া জামায়াত কর্মী আবুল হাশেম ও অহিদুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনায় বহিষ্কার হওয়া দুই জামায়াত কর্মীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আবদুল হাই। বর্তমানে সব আসামি জামিনে মুক্ত। এদিকে আবদুল হাই কানুর বিরুদ্ধে এলাকায় অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার সুবাদে তিনি ও তাঁর ছেলে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন। বিভিন্ন সময়ে তাদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মী।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ই ত কর ম উপজ ল ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র

গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।

গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।

ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।

ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ