ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি পেলেও বগুড়ার দই রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এর কারণ রপ্তানি উপযোগী করে তৈরি করতে না পারা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ ও দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকা। ফলে পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার দইয়ের সুনাম সারাদেশে। অন্য জেলা থেকে যে কেউ এ জেলায় এলে দইয়ের স্বাদ নিতে ভোলে না। ঈদ, পূজা ও তিথি-পর্বে দই না হলে চলে না। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য জিআই স্বীকৃতি চাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করে জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। ২০২৩ সালের ২৬ জুন জিআই পণ্যের তালিকায় স্থান করে নেয়। প্রায় দুই বছর পার হলেও এটি বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে যায়নি এক পিসও। এর কারণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় দই ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত খাবার উপযোগী থাকে। এর পর গুণগতমান নষ্ট হয়ে ক্রমে পচে যায়। ফলে পণ্যটি বিদেশের মাটিতে পৌঁছার আগেই খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বেশি সময় ফ্রিজে রাখলে জমে গিয়ে প্রকৃত স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, দই তৈরি করার পর প্রথমে তা ঢাকা, পরে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ দিন। ক্রেতার কাছে পৌঁছতে সময় লাগে আরও এক দিন। ছয় দিনে পণ্যটি কখনও খোলা জায়গায়, কখনও ফ্রিজে রাখতে হয়। এ সময়ের মধ্যে দইয়ের গুণগতমান বজায় থাকে না। ক্রেতার কাছে দই পৌঁছার পর প্রকৃত স্বাদ না পেয়ে আর অর্ডার করতে চান না। পরীক্ষামূলক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দুবাই, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে এমন ফলাফল পাওয়া গেছে। এ কারণে অর্ডার পেলেও বাজারজাত করা যাচ্ছে না। তবে জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশে এই দইয়ের বাজার আগের চেয়ে বেড়েছে।

কারিগররা জানান, তারা সনাতন পদ্ধতিতে দই তৈরি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। প্রায় শত বছর আগে হাঁড়ি কিংবা সরায় জ্বাল দেওয়া দুধ ঢেলে সাঁচ ব্যবহার করা হচ্ছে। দই তৈরিতে কোনো পবির্তন হয়নি বা বিশেষ কোনো উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে না। যে পরিবর্তন হয়েছে তা হাঁড়ি বা সরার আকারে। এই দই আগে কেজিতে বিক্রি হতো, এখন হয় সরার ভিত্তিতে।

রফাত দইয়ের প্রধান কারিগর সুভাস চন্দ্র বলেন, তিনি প্রায় ৫০ বছর আগে ছোট একটি কারখানায় কাজ নেন বাবার মাধ্যমে। এর পর ৫টি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছেন। এখন নামি একটি প্রতিষ্ঠানে দই তৈরি করছেন। আগে যেভাবে দই তৈরি করেছি, এখনও একই পদ্ধতি আছে। কিন্তু গুণগতমান ঠিক রেখে বেশি দিন রাখার মতো করে দই তৈরি কখনও করিনি। এমনকি জেলার কোথাও সে রকমভাবে দই তৈরি করা হয় না।

তিনি আরও বলেন, কীভাবে দই তৈরি করলে বেশি দিন থাকবে বা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে, সে পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। কখনও কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।

খাদ্য ও পুষ্টিবিদদের মতে, দই ফ্রিজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এক মাস রাখলেও গুণগত মান ঠিক থাকবে। এ ছাড়া কাচ বা প্লাস্টিক পাত্রে রাখা যায়। তাতেও গুণাগুণ নষ্ট হবে না। আর উৎপাদনের সময় রপ্তানি উপযোগী করে তৈরি করতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দই পরিবহনের জন্য বগুড়ায় বিমানবন্দর ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) হলে সুবিধা হবে। তখন প্রক্রিয়াকরণ করে দ্রুত দেশের বাইরে পাঠানো যাবে। এতে গুণাগুণ ঠিক থাকবে।

বগুড়ার অন্যতম দই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আকবরিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী আলাল বলেন, দই জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর কয়েকটি দেশ থেকে অর্ডার পেয়েছি। উপযুক্তভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা নেই। এ কারণে পাঠানো যাচ্ছে না। বিমানবন্দর ও ইপিজেড সুবিধা থাকলে বিশ্ববাজারে বগুড়ার দই একটা ভালো অবস্থান করে নিতে পারবে। তাতে করে অনেক কর্মসংস্থান হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সিরাজগঞ্জ হেনরি ইনস্টিটিউট অব বায়োসায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড.

আতিকুর রহমান বলেন, জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দইয়ের দরজা খুলে গেছে। কিন্তু বিদেশে পাঠাতে হলে উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় তৈরি করতে হবে। মাটির সরা কিংবা হাঁড়ির পরিবর্তে কাচ বা প্লাস্টিক পাত্রে ভরে ফ্রিজ-আপ করলে এক মাস পর্যন্ত রাখা যাবে। তাতে গুণাগুণ নষ্ট হবে না। এভাবে রপ্তানি করা যেতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ আই স ব ক ত দই ত র ব যবস দইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত