জিআই স্বীকৃতি পেলেও রপ্তানি হচ্ছে না বগুড়ার দই
Published: 4th, April 2025 GMT
ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি পেলেও বগুড়ার দই রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এর কারণ রপ্তানি উপযোগী করে তৈরি করতে না পারা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ ও দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকা। ফলে পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার দইয়ের সুনাম সারাদেশে। অন্য জেলা থেকে যে কেউ এ জেলায় এলে দইয়ের স্বাদ নিতে ভোলে না। ঈদ, পূজা ও তিথি-পর্বে দই না হলে চলে না। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য জিআই স্বীকৃতি চাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করে জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। ২০২৩ সালের ২৬ জুন জিআই পণ্যের তালিকায় স্থান করে নেয়। প্রায় দুই বছর পার হলেও এটি বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে যায়নি এক পিসও। এর কারণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় দই ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত খাবার উপযোগী থাকে। এর পর গুণগতমান নষ্ট হয়ে ক্রমে পচে যায়। ফলে পণ্যটি বিদেশের মাটিতে পৌঁছার আগেই খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বেশি সময় ফ্রিজে রাখলে জমে গিয়ে প্রকৃত স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, দই তৈরি করার পর প্রথমে তা ঢাকা, পরে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ দিন। ক্রেতার কাছে পৌঁছতে সময় লাগে আরও এক দিন। ছয় দিনে পণ্যটি কখনও খোলা জায়গায়, কখনও ফ্রিজে রাখতে হয়। এ সময়ের মধ্যে দইয়ের গুণগতমান বজায় থাকে না। ক্রেতার কাছে দই পৌঁছার পর প্রকৃত স্বাদ না পেয়ে আর অর্ডার করতে চান না। পরীক্ষামূলক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দুবাই, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে এমন ফলাফল পাওয়া গেছে। এ কারণে অর্ডার পেলেও বাজারজাত করা যাচ্ছে না। তবে জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশে এই দইয়ের বাজার আগের চেয়ে বেড়েছে।
কারিগররা জানান, তারা সনাতন পদ্ধতিতে দই তৈরি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। প্রায় শত বছর আগে হাঁড়ি কিংবা সরায় জ্বাল দেওয়া দুধ ঢেলে সাঁচ ব্যবহার করা হচ্ছে। দই তৈরিতে কোনো পবির্তন হয়নি বা বিশেষ কোনো উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে না। যে পরিবর্তন হয়েছে তা হাঁড়ি বা সরার আকারে। এই দই আগে কেজিতে বিক্রি হতো, এখন হয় সরার ভিত্তিতে।
রফাত দইয়ের প্রধান কারিগর সুভাস চন্দ্র বলেন, তিনি প্রায় ৫০ বছর আগে ছোট একটি কারখানায় কাজ নেন বাবার মাধ্যমে। এর পর ৫টি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছেন। এখন নামি একটি প্রতিষ্ঠানে দই তৈরি করছেন। আগে যেভাবে দই তৈরি করেছি, এখনও একই পদ্ধতি আছে। কিন্তু গুণগতমান ঠিক রেখে বেশি দিন রাখার মতো করে দই তৈরি কখনও করিনি। এমনকি জেলার কোথাও সে রকমভাবে দই তৈরি করা হয় না।
তিনি আরও বলেন, কীভাবে দই তৈরি করলে বেশি দিন থাকবে বা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে, সে পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। কখনও কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।
খাদ্য ও পুষ্টিবিদদের মতে, দই ফ্রিজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এক মাস রাখলেও গুণগত মান ঠিক থাকবে। এ ছাড়া কাচ বা প্লাস্টিক পাত্রে রাখা যায়। তাতেও গুণাগুণ নষ্ট হবে না। আর উৎপাদনের সময় রপ্তানি উপযোগী করে তৈরি করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দই পরিবহনের জন্য বগুড়ায় বিমানবন্দর ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) হলে সুবিধা হবে। তখন প্রক্রিয়াকরণ করে দ্রুত দেশের বাইরে পাঠানো যাবে। এতে গুণাগুণ ঠিক থাকবে।
বগুড়ার অন্যতম দই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আকবরিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী আলাল বলেন, দই জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর কয়েকটি দেশ থেকে অর্ডার পেয়েছি। উপযুক্তভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা নেই। এ কারণে পাঠানো যাচ্ছে না। বিমানবন্দর ও ইপিজেড সুবিধা থাকলে বিশ্ববাজারে বগুড়ার দই একটা ভালো অবস্থান করে নিতে পারবে। তাতে করে অনেক কর্মসংস্থান হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সিরাজগঞ্জ হেনরি ইনস্টিটিউট অব বায়োসায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ আই স ব ক ত দই ত র ব যবস দইয় র
এছাড়াও পড়ুন:
গানের ভুবনে লিজার অন্তহীন পথচলা
শীর্ষ তারকা হওয়ার দৌড়ে কখনও অংশ নিতে দেখা যায়নি তাঁকে। যদিও ২০০৮ সালে ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় সেরা শিল্পীর মুকুট মাথায় উঠেছিল, তবু ধীরলয়ে পথ হেঁটে গেছেন। নিজের কাজে অতিমাত্রার উচ্ছ্বাসও দেখাননি কখনও। নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন সবসময়। গানে গানে কুড়িয়ে চলেছেন শ্রোতার ভালোবাসা। এ কারণে সমসাময়িকদের চেয়ে আলাদা করে তাঁকে চিনে নেওয়া যায়। বলছি, কণ্ঠশিল্পী সানিয়া সুলতানা লিজার কথা। গানের ভুবনে অন্তহীন পথচলায় যিনি এরই মধ্যে পেরিয়ে এসেছেন প্রায় দেড় যুগের পথ। সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার রহস্যটা কী? শুরুতে যখন এ প্রশ্ন লিজার সামনে তুলে আনা হলো, তখন দেখা গেল, লিজা নিজেই এর উত্তর খুঁজতে বসে গেছেন। এ পর্যায়ে হেসে বললেন, ‘না, এর উত্তর সত্যি জানা নেই। আসলে আমি তো গান গাই শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ আর ভালোবাসা কুড়ানোর জন্য। হ্যাঁ, শিল্পীসত্তাকে খুশি রাখতে গানের চর্চা ধরে রেখেছি বললে ভুল হবে না। তারপরও প্রতিটি আয়োজনে শ্রোতার ভালোলাগা, মন্দলাগাকে প্রাধান্য দিয়েছি। এতে করে কতটুকু জনপ্রিয়তা পেয়েছি। সেই জনপ্রিয়তা শুরু থেকে একই রকম আছে কিনা– সেটি তো শ্রোতারা ভালো বলতে পারবেন।’ লিজার এ কথা থেকে বোঝা যায়, যাদের কারণে শিল্পীজীবন বেছে নেওয়া, সেই শ্রোতা তাঁর দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেখানে তাঁর গানগুলো ছিল চালিকাশক্তি। তবে ১৭ বছরের সংগীতের এ পথচলায় লিজার কণ্ঠে মেলোডি গান বেশি শুনতে পাওয়া গেছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই দেড় যুগে নানা ধরনের গান গেয়েছি, তবু কেন জানি শ্রোতারা আমাকে মেলোডি গানের শিল্পীদের দলে রেখে দিয়েছেন। অস্বীকার করব না যে, আমার কণ্ঠে যে ধরনের গান ভক্তরা বেশি শুনতে চান, সে ধরনের গান বেশি গাই। এটিও ঠিক যে, মেলো কিংবা স্যাড-রোমান্টিক গানের প্রতি শ্রোতার ভালোলাগা সবসময় ছিল। এখনও অনেকে মেলোডি ছাড়া গানের কথা ভাবতে পারেন না। এজন্য নিরীক্ষাধর্মী কাজ করলেও আমি চাই না মেলোডি থেকে কখনও দূরে সরে থাকতে। তাই মেলোডি গান যেমন গাইছি, তেমনি গানের নিরীক্ষাও চালিয়ে যাচ্ছি।’ লিজার এ কথা যে মিথ্যা নয়, তা সর্বশেষ প্রকাশিত গানগুলোর শুনলে প্রমাণ মেলে। ক’দিন আগে বিটিভির ‘বৈঠকখানা’ অনুষ্ঠানে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মুহিনের সঙ্গে গাওয়া ‘তোমার নামে’ গানে যে লিজাকে শ্রোতা আবিষ্কার করবেন, তার সঙ্গে মেলানো কঠিন হবে সামজ ও রিজানের সঙ্গে ‘তিতা কথা’ গানের লিজাকে। আরেকটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ‘খুব প্রিয় আমার’, ‘তুমি এলে’, ‘পূর্ণিমা চাঁদ’ গানগুলোয় লিজা অতীতের গায়কীকে ছাপিয়ে কীভাবে আরও নতুন হয়ে নিজ কণ্ঠ তুলে এনেছেন।
মাঝে কিংবদন্তি শিল্পীদের বেশ কিছু কালজয়ী গানের রিমেকে কণ্ঠ দিয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছেন সংগীতবোদ্ধাদের। স্টেজ শো, রেডিও, টিভির আয়োজন থেমে শুরু করে সিনেমার প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন, তিনি অন্যদের চেয়ে কোনোভাবে পিছিয়ে নন। এককথায়, বহমান সময়টিকে সুরেলা করে রেখেছেন অনিন্দ্য কণ্ঠ জাদুতে।
আগামীতেও লিজার কণ্ঠ বাতাসে ভেসে বেড়াবে– এ অনুমান করা যায়।