গাজার পাশে বাংলাদেশ, জুলুমের প্রতিবাদ
Published: 8th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ এবং নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। গণহত্যা বন্ধ ও গাজাবাসীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে গতকাল সোমবার রাজধানীসহ সারাদেশে সংহতি সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি জানানোর পাশাপাশি দেশটির পণ্য বয়কটেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচি থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড.
এদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অব্যাহত গণহত্যা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সংহতি জানিয়ে গতকাল দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ বন্ধ রাখা হয়। সকাল থেকে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল চোখে পড়ার মতো।
ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেমন প্রতিবাদমুখর ছিল, তেমনই রাস্তায় সরব ছিলেন ব্র্যাক, ইস্ট ওয়েস্ট, কানাডিয়ান, নর্থ সাউথসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজপথে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন মেডিকেল, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজপড়ুয়ারাও।
এদিকে, গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাশে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের কারণে মার্কিন দূতাবাসসহ কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচি
গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ‘ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
‘ওয়ার্ল্ড স্টপ ফর গাজা’ কর্মসূচির প্রতি সমর্থনে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনের মুক্তি ও ইসরায়েলের ধ্বংস কামনা করা হয়। বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে থাকে। বিক্ষোভে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তারা ইসরায়েলি পণ্য বয়কট ও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সবাইকে লড়াইয়ের আহ্বান জানান। এ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাবির অফিস কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।
বেলা সাড়ে ১১টায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। এতে বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। অন্যদিকে, কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিসে কর্মবিরতি পালন করা হয়। এ ছাড়া আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে শিক্ষক সমিতি। এতে ইসরায়েলের সব পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। এদিকে, ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিকেলে রাজধানীর আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে রামপুরা ও বাড্ডা এলাকা প্রদক্ষিণ করেন তারা। কর্মসূচি থেকে ইসরায়েলের পতাকা পোড়ানো হয়। এতে মধ্য বাড্ডা, বনশ্রী, রামপুরা ও বাড্ডার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দেন। কর্মসূচি শেষে সড়কে আসরের নামাজ আদায় করে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়।
এ ছাড়া গাজার প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস, ইউনিভার্সিটির অব এশিয়া প্যাসিফিক, পিপলস ইউনিভার্সিটি, ঢাকা স্টেট কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিক্ষোভ করেন।
গাজায় গণহত্যার তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত গণহত্যা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলকে অবিলম্বে সব সামরিক অভিযান বন্ধ, সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার দাবি জানিয়েছে। নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান চালানোর জন্য গাজার ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বিমান থেকে নির্বিচারে বোমাবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের প্রতি বারবার আবেদন করা হলেও দেশটি এ আবেদনে গুরুত্ব দেয়নি। বরং তারা ক্রমবর্ধমান হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের কাছে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের জন্য তাৎক্ষণিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষা ও অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেখানে সব ধরনের যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
স্লোগানমুখর বায়তুল মোকাররম এলাকা
গতকাল দুপুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে জামায়াতে ইসলামী মহানগর দক্ষিণ, খেলাফত মজলিস ও জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে কয়েক হাজার মানুষ সমবেত হন। জোহরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে তারা একযোগে বলে ওঠেন ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’। পরে তারা মসজিদের উত্তর পাদদেশে সমবেত হন। সেখানে সবাই একসঙ্গে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াতে শুরু করেন, স্লোগানে আওয়াজ তোলেন। ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’সহ বিভিন্ন স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে বায়তুল মোকাররম এলাকা। এতে ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন তারা। অনেকে প্রতীকী লাশ বহন করেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, ইসরায়েলের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে। প্রয়োজনে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এ সময় তারা ইসরায়েলের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মুফতি রেজাউল করিম আবরার প্রমুখ। সমাবেশ শেষে শাহবাগ অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে থেকে শুরু করে জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
ওআইসিকে পদক্ষেপ নিতে জামায়াতের আহ্বান
যুদ্ধবিরতি চুক্তি না মেনে হামলা ও গণহত্যার দায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ওআইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর মহাখালীতে বিকেলে সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আয়োজিত পথসভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভা শেষে সেখান থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি মহাখালী থেকে নাবিস্কো হয়ে মগবাজারে এসে শেষ হয়। পথসভায় রেজাউল করিম গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘ, ওআইসি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শাহবাগে এনসিপির সমাবেশ
বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এতে পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ভারতের ওয়াক্ফ বিল সংশোধনী বাতিল করে আগের আইনে ফিরে যাওয়া এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। মিছিলটি জাতীয় জাদুঘর থেকে শুরু হয়ে বাংলামটর এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। কর্মসূচিতে আখতার হোসেন বলেন, ‘অবিলম্বে প্যালেস্টাইনে যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুসহ প্রত্যেককে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ
গাজায় বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন দূতাবাস এলাকায় মিছিল বের করেন এক দল তরুণ। মার্কিন দূতাবাসের সামনের সড়কে অবস্থান নেন তারা। এ সময় যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিছিলটির সামনে ছিল পুলিশ সদস্যরা।
বাসদের নিন্দা ও প্রতিবাদ
গাজায় ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গণহত্যার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে দলটি।
ইসরায়েল নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে: কর্নেল অলি
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, ইসরায়েলরা একটি অভিশপ্ত জাতি। যারা নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
গাজা মৃত্যু উপত্যকা: ইলিয়াস কাঞ্চন
দখলদার বাহিনীর নির্বিচার হামলায় গাজা মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘গণশক্তি সভা’ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
শিবিরের সপ্তাহজুড়ে কর্মসূচি, ছাত্রদলের বিক্ষোভ আজ
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। গতকাল যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ছাত্রদল বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।
পেছাল বিএনপির স্বাধীনতার কনসার্ট
গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ‘স্বাধীনতার কনসার্ট’ আগামী শুক্রবারের বদলে পরদিন শনিবার হবে বলে জানিয়েছে বিএনপির সমর্থনপুষ্ট সংগঠন ‘সবার আগে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’। গতকাল সংগঠনটির সভাপতি শহীদ উদ্দীন চৌধুরী স্বাধীনতা কনসার্টের নতুন সময়সূচি জানান।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বরখাস্ত
গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের ‘ডাবল অ্যাবসেন্ট’-এর হুমকি দেওয়ার অভিযোগে জার্নালিজম, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রভাষক শিক্ষক তাহমিনা রহমানকে বরখাস্ত করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র এবং এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ প্রত্যাখ্যান ইবি শিক্ষার্থীর
ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) জাকির হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের স্নাতক ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান জাকির।
বিশ্বজুড়ে ধর্মঘট, বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধের দাবি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘নির্লজ্জ’ নীরবতার প্রতিবাদে সারাবিশ্বে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে। মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ ফিলিস্তিনের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে গতকাল ব্যানার হাতে রাস্তায় নেমে আসেন।
হাজার হাজার মরক্কান দেশটির রাজধানী রাবাতের রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভকারীদের ইসরায়েলি পতাকা ছিঁড়ে ফেলতে দেখা যায়। মরক্কোর অর্থনৈতিক কেন্দ্র কাসাব্লাংকায়ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।
লেবাননে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল দেশটির কয়েকটি শহরের সব স্কুল বন্ধ ছিল। তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে বিশাল প্রতিবাদ সভা করেছেন শিক্ষার্থীরা। সভায় অনতিবিলম্বে গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করে মানবিক সহায়তার জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
পাকিস্তানের করাচিতে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মার্কাজি মুসলিম লীগের ব্যানারে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। লেবাননের বৈরুতেও হয়েছে প্রতিবাদ সমাবেশ। লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে আয়োজন করেন এ সিট-ইন প্রতিবাদ। সেখানে ইসরায়েলবিরোধী এবং গাজার সমর্থনে নানা স্লোগানের সঙ্গে প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে তাদের।
লন্ডনের কেন্দ্রস্থলেও দেখা গেছে বিক্ষোভ। গাজার সমর্থনে বেশ কিছু প্রতিবাদকারী ‘যুবকরা গণহত্যার সমাপ্তি চায়’ লেখা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদে নামেন। এক পর্যায়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। ইয়েমেনের রাজধানী সানায়ও গাজার সমর্থনে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ মানুষ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ জ য় ইসর য় ল গ জ য় গণহত য ইউন ভ র স ট সহ ব ভ ন ন ব ক ষ ভ কর পদক ষ প ন ম হ ম মদ স গঠন র র জন য কর ছ ন বন ধ র র স মন ইসল ম সদস য গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
ইসরায়েল আবারও ইরানে বড় রকমের হামলা করেছে। হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায়। একদিন পর পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এতে কয়েকজন ইসরায়েলি নিহত হয়। ধ্বংস হয় তেলআবিবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ইসরায়েল তার ইরানবিরোধী এ হামলার নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। এ নাম রাখা হয়েছে হিব্রু বাইবেলের একটি চরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যে নাম ইসরায়েলের একটি শক্তিশালী ও বিজয়দীপ্ত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র উপাসনাস্থল জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়ালের একটি ফাটলে হাতে লেখা একটি চিরকুট রেখে আসার সময় ছবি তোলেন। এটি ছিল মূলত ইরানে ইসরায়েলের হামলার ইঙ্গিত।
শুক্রবার তার অফিস থেকে সেই চিরকুটে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা ছিল: ‘জনগণ সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে।’
এই বাক্যাংশটি হিব্রু বাইবেলের গ্রন্থ বুক অব নাম্বারস (গণনা পুস্তক) ২৩:২৪ পদ থেকে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে: ‘দেখো, এই জাতি একটি মহান সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে এবং একটি তরুণ সিংহের মতো নিজেকে উদ্দীপ্ত করবে; সে শিকার না খাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না এবং নিহতদের রক্ত না পান করা পর্যন্ত থামবে না।’
এই চরণটি হিব্রু বাইবেলের অ-ইসরায়েলীয় একজন নবী ও ভবিষ্যদ্বক্তা বালামের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর অংশ। সেখানে তিনি ইসরায়েলের শক্তি ও ক্ষমতার কথা বলেন। তাদের এমন এক সিংহের সঙ্গে তুলনা করেন যে নিজের ক্ষুধা না মেটানো পর্যন্ত বিশ্রামে যায় না।
অনেকেই মনে করেন, এই অভিযানের নাম ইরানের শেষ শাহ-এর পুত্রের প্রতি ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ পারস্য রাজপরিবারের প্রতীক হিসেবেও সিংহ ব্যবহৃত হতো।
ইসরায়েলের ঐশ্বরিক অধিকারের দাবিইসরায়েল প্রায়শই তার সামরিক অভিযানের নাম হিব্রু বাইবেল বা ওল্ড টেস্টেমেন্ট থেকে নেয় বা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে গ্রহণ করে। ফিলিস্তিনি ভূমির উপর ইহুদিদের তথাকথিত ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিতে ইসরায়েল এসব ধর্মীয় বিষয় ব্যবহৃত করে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।
উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো এক অভিযানের নাম দিয়েছিল, ‘অ্যারো অব বাশান।’ ‘বাশান’ শব্দটি ইসরায়েলিদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি দিয়ে মূলত সিরিয়ার দক্ষিণ ও জর্ডান নদীর পূর্বে অবস্থিত একটি অঞ্চলকে নির্দেশ করা হয়। বাশানের রাজাকে পরাজিত করে ইসরায়েলিরা সেই অঞ্চলকে দখল করেছিল।
গাজা উপত্যকার ওপর হামলা চালাতেও অস্ত্র ও অভিযানের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় প্রতীক বা অনুষঙ্গ ব্যবহার করছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু অন্তত তিনবার গাজায় আক্রমণের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় আমালেক কাহিনি ব্যবহার করেছেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রন্থ ‘বুক অব ডিউটেরনমি’(২৫:১৭) এর থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:
‘আমালেক তোমার সঙ্গে যা করেছিল তা মনে রেখো, আমরা মনে রাখি এবং আমরা যুদ্ধ করি।’
এর মধ্য দিয়ে গাজাবাসীদের উপর পূর্ণাঙ্গ হামলা করা উচিত বলে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত করেন। কারণ ডিউটেরনমির এই উদ্ধৃতি বাইবেলের স্যামুয়েল গ্রন্থে বর্ণিত আমালেকীয়দের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ধ্বংসের আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাইবেলের এ কাহিনিতে ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণকারীদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজার গোটা জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে বাইবেলের এ কাহিনিকে হাজির করেছেন নেতানিয়াহু।
গণহত্যার মামলায় নেতানিয়াহুর বক্তব্যইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রথম শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষের আইনজীবী হিব্রু বাইবেলের উদ্ধৃতির মাধ্যমে নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে তুলে ধরেন।
আইনজীবী আরও জানান, নেতানিয়াহু ৩ নভেম্বর সেনাদের উদ্দেশ্যে লেখা আরেকটি চিঠিতে একই আমালেকীয় গল্প পুনরাবৃত্তি করেন।
ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে সামরিক প্রযুক্তিইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গাজায় বোমাবর্ষণে সহায়তা করছে, তাদের নাম ‘ল্যাভেন্ডার’ এবং ‘দ্য গসপেল’, যা উভয়ই হিব্রু বাইবেলীয় ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক রাভালে মহিদিনের মতে, প্রায়ই ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসরায়েলের অস্ত্রের নামকরণ করা হয়। যেমন, স্যামসন রিমোট কন্ট্রোলড ওয়েপন স্টেশন।
জেরিকো ব্যালিস্টিক মিসাইল-এর নাম রাখা হয়েছে জেরিকো শহরের নামে। হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব যশুয়া’ অনুসারে ইসরায়েলিরা এই শহর ফিলিস্তিনিদের কাছ দখল করেছিল।
ডেভিড’স স্লিং নামক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নাম রাখা হয়েছে বাইবেলের মেষপালক ডেভিড ও বিশাল যোদ্ধা গোলিয়াথের মধ্যকার বিখ্যাত সেই লড়াইয়ের স্মরণে, যেখানে ডেভিডের বিজয় হয়েছিল। এই কাহিনী আছে হিব্রু বাইবেল ও ওল্ট টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব স্যামুয়েল’-এ।
*দ্য নিউ আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক ও হার্ভার্ডের গবেষক রাভালে মহিদিনের একটি লেখার অবলম্বনে দ্য নিউ আরব এ বিশ্লেষণটি প্রকাশ করেছে। অনুবাদ করেছেন: রাফসান গালিব